ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার প্রত্নস্থানে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১১ জানুয়ারি ২০২০

চার প্রত্নস্থানে গড়ে তোলা হয়েছে  পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র

সমুদ্র হক ॥ দেশে এই প্রথম চারটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো হলো বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ। মুজিববর্ষে এই কেন্দ্রগুলো পর্যটকবান্ধব হয়ে থাকবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সুন্দরবন, পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। এদিকে দেশের আরও কয়েকটি স্থানকে বিশ্ব সম্পদের অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহযোগিতায় দেশের প্রাচীন ইতিহাসখ্যাত স্থানগুলোকে পর্যটকবান্ধব কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। প্রথম পর্যায়ে বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ এলাকায় পর্যটকদের জন্য অবকাশ কেন্দ্র হোটেল বাংলো কটেজ রেস্তরাঁ রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়। যেখানে প্রত্নসম্পদ প্রদর্শনের নানা ব্যবস্থা আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানিয়েছেন, মহাস্থানগড়সহ দেশের সাতটি স্থানকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হয় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের একটি বৈঠকে। সেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ ও নেপালের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্য শিল্প, প্রত্নতাত্ত্বিকস্থানগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প বিকাশে হেরিটেজ হাইওয়ে গড়ে তোলার প্রস্তাব করার পর সিদ্ধান্তে রূপান্তর হয়। সেই আলোকে কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে সার্কভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে যায়। পরে আরও সম্প্রসারিত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিস্তার লাভ করে। মানুষে মানুষে মেলবন্ধনে পর্যটন শিল্পের অগ্রযাত্রায় শরিক হয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। ১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। বাকি ৩ মিলিয়ন ডলার দেয় সরকার। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়ে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন হয়ে নবযুগের সূচনা করেছে। বগুড়ার মহাস্থানগড়কে ঘিরে আরও নতুন ইতিহাস উদঘাটিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো খনন কাজে প্রায় হাজার বছর ধরে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পরশুরাম প্যালেসের অস্তিত্ব মিলেছে। এই প্যালেসটি কোথায় ছিল এতকাল তা খোঁজা হয়েছে। জায়গাটি ঝোপ জঙ্গলে ভরা ছিল। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রের মতে ইতিহাসখ্যাত স্থানগুলো ভ্রমণে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। প্রাচীন পু-্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী পু-্রনগরখ্যাত মহাস্থানগড়ে এর আগে ব্রাহ্মি হরফ ও এ্যাঙ্কর মিলেছে। মৌর্য সুঙ্গ গুপ্ত পাল সেন শশাঙ্ক মুসলিম মুঘল ব্রিটিশ সভ্যতার বহু চিহ্ন উঁকি দিয়ে আছে মহাস্থানগড়ে। মহাস্থানগড় ও কাছের ভাসুবিহারের প্রতœ খননে প্রাপ্ত সকল নিদর্শন প্রমাণ দেয় একদা এই অঞ্চল শিক্ষাদীক্ষা সংস্কৃতি সভ্যতায় কতটা সমৃদ্ধ ছিল। খননে তিনটি বৌদ্ধ মন্দির, একটি উচ্চ শিক্ষায়তন, নগরীর প্রবেশ ফটক, উপ-সামুদ্রিক নৌ-বন্দরের নিদর্শন, বানারসি বিলের সংযোগের এ্যাঙ্করসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি মিলেছে। পাহাড়পুর প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। ১৮৭৯ সালে স্যার ক্যানিংহাম এই বিহার আবিষ্কার করেন। অষ্টম অথবা নবম শতকে পাল বংশের রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব এই বিহার তৈরি করেন। ১০ হেক্টর ভূমির ওপর এই পুরাকীর্তি চতুর্ভুজ আকৃতির। পাহাড়পুর বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পেয়েছে। দিনাজপুরের কান্তজীউ বা কান্তনগর মন্দির নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। তিনতলা এই মন্দিরে ছিল নয়টি চূড়া। মহারাজা প্রাণনাথ রায় শেষ বয়সে মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তার মৃত্যুর পর মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। ৫০ ফুট উচ্চতার বর্গাকার দৃষ্টিনন্দন এই মন্দিরে টেরাকোটা আছে প্রায় ১৫ হাজার। বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদের স্থাপত্যশৈলী দেখে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ মনে করেন এটি খান-ই-জাহান আলী নির্মাণ করেন ১৫ শতকে। ষাটগম্বুজ মসজিদকে ঘিরে ইউনেস্কো পুরো শহরকেই বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে। পর্যটক ও অবকাশ কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় পর্যটনে মানুষে মানুষে মেলবন্ধনে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। বিভিন্ন জেলার বেসরকারী ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে কমপ্যান্ট ট্যুরিজম চলছে বিচ্ছিন্নভাবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন এ্যান্ড ট্যুরিজম নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতের রাজ্যগুলোতে যত পর্যটন ও প্রত্ন সম্ভার রয়েছে তা পর্যটক আকর্ষণ করেছে।
×