ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

‘লাল তীরে’ ধূসর পানবরজ ॥ কৃষক দিশাহারা

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ৭ জানুয়ারি ২০২০

‘লাল তীরে’ ধূসর পানবরজ ॥ কৃষক দিশাহারা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পানচাষ অধ্যুষিত পবা উপজেলার বড়গাছী কালুপাড়া ও মোহনপুর উপজেলার কৃষ্ণপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা এবার পানের বরজ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বরজে ‘লাল তীর’ কোম্পানির পাউডার সালফেট প্রয়োগ করে কয়েক শ’ চাষীর গাছসহ বিনষ্ট হয়েছে পানপাতা। সবুজ পাতা ক্রমেই ধুসর রং ধারণ করছে। এতে প্রায় কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা। গাছে পচন ও পানপাতা ঝরে যাওয়ায় চাষীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে বরজে সুরমা ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘লাল তীর’ ও ‘থ্রি-জি’ গ্রোজিংক সালফেট (মনোহাইড্রেট) প্রয়োগ করে পথে বসেছে প্রায় অর্ধশত চাষী। এ অবস্থায় স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও কোন প্রতিকার মিলছে না। তারা পান চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। কৃষকরা জানান, ‘লাল তীর’ ও ‘থ্রি-জি’ গ্রোজিংক সালফেট প্রয়োগের পর পান বরজ মরে গেছে। বরজের প্রায় পানই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আগে সবুজ পাতা ধূসর হয়ে খুলে পড়ছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় ছয়টি উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮শ’ ২১ হেক্টর ( ১৩ হাজার ৬শ’ ৬০ বিঘা) জমিতে পানের বরজ রয়েছে। দাম ভাল থাকায় পান বরজের পরিধি প্রতিবছরই বাড়ছে। এ বছর পান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৯শ’ ৫৪ মে.টন। বর্তমান বাজার মূল্যে যার গড় দাম ১১০ কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ২৫ হাজার ৫শ’ পানের বরজ আছে। পান চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছে প্রায় এক লাখ চাষী। জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া এবং চারঘাটে পান চাষ হয়ে থাকে। অন্যান্য কৃষি আবাদের তুলনায় পান চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। কম জমিতে বেশি লাভের আশায় অনেক জমি লিজ নিয়ে পানের বরজ করেছেন। পবা উপজেলার বড়গাছী কালুপাড়া গ্রামের প্রায় কৃষকই লিজ চাষী। তারা জমি লিজ নিয়ে পান চাষ করে থাকেন। আবাদ ভালই ছিল। কিন্তু জমিতে সুরমা ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘লাল তীর’ ও ‘থ্রি-জি’ গ্রোজিংক সালফেট (মনোহাইড্রেট) প্রয়োগ করে পথে বসেছেন তারা। ভুক্তভোগী কৃষক শিপলুর রহমান, সোহাগ আলী, শফিকুল ইসলাম, সামশুল হক, আরবুল ইসলাম, মনসুর রহমান, ইস্রাফিল হোসেন, মামুন, পিন্টু, কাচু ম-ল, বাক্কার সরদার, আনার হোসেন, মোস্তাকিন ও মোজাম্মেল হক বলেন, মোহনপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামসহ পবা উপজেলার প্রায় ৭৫ জন চাষী ‘লাল তীর’ ও ‘থ্রি-জি’ গ্রোজিংক সালফেট প্রয়োগে পান বরজ মরে গেছে। তারা অভিযোগ করেন, মোহনপুর উপজেলার ধোপাঘাটা বাজারের ডিলার মশিউর রহমানের দোকান থেকে সুরমা ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘লাল তীর’ ও ‘থ্রি-জি’ গ্রোজিংক সালফেট (মনোহাইড্রেট) কিনে পান বরজে ব্যবহার করেছিলেন। মশিউর রহমানের কথামত ওই সালফেট গাছের গোড়া মাটিতে দেয়া হয়। এরপর থেকেই গাছের আগা মরতে শুরু করে। এরপর পাতা, তারপর পুরো পানই মরে গেছে। সামশুল হক বলেন, বরজ মরে যাওয়ায় তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এ লোকসান কাটিয়ে ওঠা দুঃসাধ্য হবে তাদের। সাধারণত বছরের এই মৌসুমে লাভের আশায় থাকি কিন্তু এই সালফেট দেয়ায় পান ও পানের লতাও ঝরে গেছে। চাষীরা জানান, ক্ষেতের বেশিরভাগ পান গাছের শিকড় পচে গাছ শুকিয়ে মরে গেছে। কোটি টাকার ক্ষতির মুখে দিশাহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা। এ ঘটনার জন্য তারা অভিযুক্ত কোম্পানি, কীটনাশক ডিলার ও কৃষি বিভাগকে দায়ী করেছেন। সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের গাফিলতির অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী বলেছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কৃষি বিভাগ কীটনাশক ও কৃষি উপকরণ (বহুজাতিক কোম্পানির সার, জৈবসার, সালফেট ইত্যাদি) ম্যানেজের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়ায় কৃষকদের খেসারত দিতে হচ্ছে। অভিযুক্ত মশিউর রহমান বলেন, বুঝে ওঠার আগেই সুরমা ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘লাল তীর’ ও ‘থ্রি-জি’ গ্রোজিংক সালফেট (মনোহাইড্রেট) চাষীদের সঙ্গে সঙ্গে তাকেও দেওলিয়া করেছে। কোম্পানির লোকজন সম্পর্ক রাখছে না। পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা ফোন রিসিভ না করলেও মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা বেগম বলেন, বরজ মরেছে সত্য তবে কোন কৃষক অভিযোগ করেননি। কৃষি বিভাগ নিজেদের উদ্যোগে ওই সুরমা ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রিজের ‘লাল তীর’ ও ‘থ্রি-জি’ গ্রোজিংক সালফেট (মনোহাইড্রেট) জব্দ করে ল্যাবে পাঠিয়েছে।
×