ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরেও পুরনো লাবুশেন

প্রকাশিত: ১২:১১, ৪ জানুয়ারি ২০২০

নতুন বছরেও পুরনো লাবুশেন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের ঘটনা। লর্ডসে এ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাথায় আঘাত পান স্টিভেন স্মিথ। দ্বিতীয় ইনিংসে তার পরিবর্তে মাঠে নামেন মার্নাস লাবুশেন। ইতিহাসের প্রথম কনকাশন (বদলি) ব্যাটসম্যান যে নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছেন তখনও হয়তো কেউ ভাবতে পারেননি। ২০১৯, পরের পাঁচ মাসে ২৫ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ানের অবিশ্বাস্য পুরুত্থান দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। ১৩ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি ৬টি; জানুয়ারিতে যার র‌্যাঙ্কিং ছিল ১১০, ডিসেম্বরে সেই তিনি বছর শেষে করেছেন চতুর্থস্থানে থেকে। অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হবে। ২০২০ নতুন বছরেও শুরুটা করলেন ঠিক সেখান থেকে। সিডনিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টের প্রথমদিনেই তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। শেষ ৭ ইনিংসে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। স্মিথের ৬৩ আর লাবুশেনের অপরাজিত ১৩০ রানের সৌজন্যে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রথমদিন শেষে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২৮৩ রান। বড় সংগ্রহের পথে স্বাগতিকরা। উল্লেখ্য, টানা দুই জয়ে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে টিম পেইনের দল। অসুস্থতার জন্য নিউজিল্যান্ড পায়নি নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলস ও স্পিনিং অলরাউন্ডার মিচেল স্যান্টনারকে। হাত ভেঙ্গে আগেই দেশে ফিরে গেছেন পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। ‘ক্লান্ত’ টিম সাউদির জায়গায় এই ম্যাচে ম্যাট হেনরিকে একাদশে ফেরায় সফরকারীরা। টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা কিউইদের হয়ে তার সঙ্গে নতুন বল ভাগ করে নেন ডি গ্র্যান্ডহোম। এই অলরাউন্ডারের হাত ধরেই আসে প্রথম সাফল্য। সাবধানী শুরু করা অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গে প্রথম স্লিপে জো বার্নস (১৮) ধরা পড়লে। আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ছিলেন হাফ সেঞ্চুরির পথে। সিরিজে তাকে চতুর্থবারের মতো ফেরান নেইল ওয়েগনার। গতিময় এই পেসারের লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে লেগ গালিতে ধরা পড়েন ওয়ার্নার (৪৫)। একপ্রান্তে সাবলীল ব্যাট করেন লাবুশেন, আরেক প্রান্তে সাবধানী স্মিথ। প্রথম ঘণ্টায় কেবল ঠেকিয়েই গেছেন। রানের খাতা খোলেন ৩৯তম বলে। সেটিও সহজে হয়নি। রান পূর্ণ করতে ডাইভ দিতে হয় সঙ্গী লাবুশেনকে। ধীরে ধীরে জমে ওঠে জুটি। পঞ্চাশ-এক শ’ ছাড়িয়ে যায় দেড় শ’তে। ১৪৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন স্মিথ। দলের রান ছাড়ায় আড়াই শ’। দ্বিতীয় নতুন বল নেয়ার পর ১৫৬ রানের জুটি ভাঙ্গেন ডি গ্র্যান্ডহোম। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে স্লিপে রস টেইলরকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন স্মিথ। ১৮২ বলে খেলা ৬৩ রানের ইনিংস গড়া চারটি চারে। দিনের বাকি সময় নিরাপদে কাটিয়ে দেন লাবুশেন ও ওয়েড। পুরোটা সময় আস্থার সঙ্গে খেলে গেছেন লাবুশেন। তার ২১০ বলে অপরাজিত ১৩০ রানের ইনিংসটি সাজানো ১২ চার ও এক ছক্কায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান ৯৭ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। তিন অঙ্কে যান ১৬৩ বলে। সর্বশেষ ৭ ইনিংসে লাবুশেনের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি, সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরি দুটি। গত বছরের শুরুতে ছিলেন র‌্যাঙ্কিংয়ের ১১০তম স্থানে। এ্যাশেজে স্মিথের বদলি হিসেবে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই লাবুশেন আছেন অতিমানবীয় ফর্মে। প্রথমবারের মতো সেরা দশে ঢুকেছিলেন ডিসেম্বরের শুরুতে। সেরা দশে জায়গা করে নিতে কেবল ১১ টেস্ট লেগেছিল লাবুশেনের। পরের টেস্ট খেলেই উঠে যান শীর্ষ চারে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সিরিজেই পার্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে লাবুশেন করেছিলেন ৫০। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৫ ইনিংসে লাবুশেনের ছিল না কোন সেঞ্চুরি। পরের তিন ইনিংসে তিন অঙ্কের স্বাদ পেয়েছেন তিনবার। ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি রানের মালিকও ছিলেন তিনি। ১০ টেস্টের ১৫ ইনিংসে করেন ১০২২ রান। ৩ সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি ৬টি। তালিকার দুইয়ে থাকা স্মিথের রান ছিল ৮৭৩। স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস- ২৮৩/৩ (৯০ ওভার; ওয়ার্নার ৪৫, বার্নস ১৮, লাবুশেন ১৩০*, স্মিথ ৬৩, ওয়েড ২২*; ডি গ্র্যান্ডহোম ২/৬৩, ওয়েগনার ১/৪৮)। ** প্রথমদিন শেষে
×