ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষি

প্রকাশিত: ০৯:১০, ৪ জানুয়ারি ২০২০

উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষি

(গতকালের পর) সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গমের ১টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। গম ও ভুট্টার ৪৫০০টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও মাঠ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়া রোগবালাই ব্যবস্থাপনার ওপর ১টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর ফলে গম ও ভুট্টার গবেষণা আরও সম্প্রসারিত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় মানসম্মত বীজের ঘাটতি মোকাবেলায় পটুয়াখালীর দশমিনায় বীজবর্ধন খামার ও নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ডাল ও তেল বীজবর্ধন খামার এবং বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশের কাক্সিক্ষত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ডাল, তেল ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন সম্প্রসারণে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ডাল, তেলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টাসহ ২৪টি ফসলের চাষ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষক ভাইদের ৪% হারে ঋণ প্রদান করছে। সারাদেশে নারিকেল, তাল, খেজুর ও সুপারি চাষ বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান। এরই মধ্যে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮০২ নারিকেল, তাল, খেজুর ও সুপারি চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত ও বিদেশী ফল চাষে উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার কৃষিবান্ধব সরকার সারের মূল্য ৪ দফা কমিয়ে বর্তমানে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে কমিয়ে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ২৫ টাকায় নির্ধারণ করেছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিএপি সারের দাম কমিয়ে বর্তমান সরকার আরেকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজির দাম ২৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি বিপণন অধিদফতর কৃষিপণ্যের বিভিন্ন বাজার তথ্যসংশ্লিষ্ট ৩০২৩টি বুলেটিন, ১৬১৪০টি বাজার মূল্য, ২৪১টি প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করেছে। এছাড়াও শস্যগুদাম ঋণ কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ৪২৮৪০ কুইন্টাল শস্য জমার বিপরীতে ৪.৩৪ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান ও ২১১৯ কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কৃষকের মৃত্তিকা নমুনা সরেজমিন পরীক্ষা করে ফলাফলের ভিত্তিতে সুষম মাত্রার সার সুপারিশ করার লক্ষ্যে ১০টি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগার চালু করা হয়েছে। এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিক ফলাফলের ভিত্তিতে সুষম সার ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করছে। সঠিক শস্যবিন্যাস অনুসরণের লক্ষ্যে জলবায়ু ও মৃত্তিকা উপযোগিতা অনুযায়ী ১৭টি ক্রপ জোনিং ম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেচের পানির উৎস বৃদ্ধিকল্পে ভূ-উপরিস্থ পানি (বৃষ্টি ও বন্যার পানি) সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য খাল-নালা, পাহাড়ী ছড়া ইত্যাদি পুনঃখনন/সংস্কার করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর রাবার ড্যাম চালুর ফলে অতিরিক্ত প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ৯ হাজার ৩১০ কিলোমিটার খাল-নালা পুনঃখননের মাধ্যমে অতিরিক্ত ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। ২ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার ভূ-উপরিস্থ পাকা সেচনালা এবং ১৭ হাজার ৭৩৩ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ (বারিড পাইপ) সেচনালা নির্মাণ করা হয়েছে। সেচ কাজে ২ হাজার ৪৫৮টি স্মার্টকার্ড/২০২টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। ১৩২টি সৌরবিদ্যুত চালিত সেচপাম্প এবং ৪৫০টি আর্টিজান নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ভূনি¤œস্থ পানির ওপর চাপ কমানো, পুনর্ভরণ এবং ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র্র সেচ পরিচালনায় নব উদ্ভাবিত সৌরবিদ্যুত চালিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণ ও সেচ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৩৪৪টি পাতকুয়া স্থাপন করা হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীরণের ক্ষেত্রে দেশের হাওড় ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কৃষকের জন্য ৭০% এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০% হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সরকারী আর্থিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩২২ কোটি ৮০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আমদানিকৃত বীজের রোগবালাই পরীক্ষার জন্য চড়ংঃ ঊহঃৎু ছঁধৎধহঃরহব ঈবহঃৎব স্থাপন করা হয়েছে। উন্নত জাতের চারা কলম তৈরির জন্য টিস্যু কালচার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল কৃষি তথা ‘ই-কৃষি’র প্রবর্তন করা হয়েছে। দেশে মোট ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি), কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩, এআইএস টিউব, কৃষি তথ্য বাতায়ন, কৃষক বন্ধু ফোন-৩৩৩১, ই-বুক, অনলাইন সার সুপারিশ, ই-সেচ সেবা, রাইস নলেজ ব্যাংক, কৃষি প্রযুক্তি ভা-ার, বারি আম এ্যাপস, ই-বালাইনাশক প্রেসক্রিপশন, কৃষকের জানালা, কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা, আমার পুষ্টি, কমিউনিটি রুরাল রেডিওসহ বিভিন্ন মোবাইল এবং ওয়েব এ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আরও ৪টি উদ্যোগ বীজতুলা বিক্রয়ে ই-সেবা, পোকা দমনে পরিবেশবান্ধব ইয়েলো স্টিকি কার্ডের ব্যবহার, নগর কৃষি, ডিজিটাল কৃষি ক্যালেন্ডার বাছাই করে দেশব্যাপী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে সরকার ১৯৯৯ সালে কৃষিনীতি প্রণয়ন করেছিল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সময়োপযোগী কৃষিনীতি প্রণয়ন করে। ২০১৮ সালে পুনরায় সময়োপযোগী করে কৃষিনীতি ২০১৮ প্রণয়ন করে। বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন-২০১৮, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮, সার (ব্যবস্থাপনা) (সংশোধন) আইন-২০১৮, উদ্ভিদের জাত সংরক্ষণ আইন-২০১৯, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন আইন-২০১৮, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮, কৃষি কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১৯, কৃষি বিপণন অধিদফতর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০১৮, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা-২০১৮ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা-২০১৯ প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট বিধিমালা-২০১৯, বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) বিধিমালা- ২০১৯, সার (ব্যবস্থাপনা) (সংশোধন) বিধিমালা-২০১৯, বীজ বিধিমালা-২০১৯, জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি-২০১৯, জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা-২০১৯ চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র্রসেচ নীতিমালা, জৈব কৃষিনীতি, কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যকরী ও সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে। স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ফল ও সবজির উৎপাদনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কৃষি খাতে বায়োটেকনোলজি, পার্চিং, ফেরোমন ফাঁদ, আইপিএম, আইসিএম, উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ব্যবহার করে যথাসম্ভব বালাইনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে চাষের উপযোগী জাত উদ্ভাবন, বায়োফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমৃদ্ধ শস্য উৎপাদন এবং উদ্ভিদ রোগ প্রতিরোধ ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ পাটের জিনোম সিকোয়েন্স করতে এরই মধ্যে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন টেকসই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা-২০১৮ তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৫০টি জেলায় পুরস্কার অর্জন। সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৪-৬ অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ সরকারের একটি মহৎ পরিকল্পনাই নয়, এটি অর্থনৈতিক মুক্তির চ্যালেঞ্জের ভিশন। ভিশন ২০২১, এসডিজি ২০৩০, ভিশন ২০৪১ ও ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০২১, ২০৪১ ও ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন হলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তব রূপ ধারণ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে যেভাবে সকল সেক্টরে অগ্রগতি হচ্ছে সেখানে কৃষির উন্নয়ন আরও হবে। এটি জনগণের সরকার, কৃষিবান্ধব-কৃষকবান্ধব সরকার। এগিয়ে যাওয়া কৃষি আরও সমৃদ্ধ হবে সে প্রত্যাশা সবার। (সমাপ্ত) লেখক : সাংবাদিক
×