ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৪ জানুয়ারি ২০২০

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

২০২০ সালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার পর্দা উঠেছে ১ জানুয়ারি। প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার আগারগাঁও-এর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই বর্ণাঢ্য আয়োজন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে ২০২০ সালের প্রথম দিনেই এই আনন্দযজ্ঞের শুভবার্তায় মূলত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে অভিনন্দন জানানো হলো। অন্যবারের তুলনায় একটু ভিন্নমাত্রার সংযোজনে মূল ফটকে জাতীয় স্মৃতি সৌধের প্রতীকী নমুনা সংস্থাপন এবারের মেলার আকর্ষণীয় দর্শন। প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যমেলার মূল আবেদন রফতানি সম্প্রসারণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেশের বাইরে দেশে উৎপাদিত পণ্যের সম্ভাবনাময় জগতকে আলোকিত করার পরামর্শ দেন। তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রসারের বিশ্বে বর্ষপণ্য হিসেবে ‘হাল্কা প্রকৌশল পণ্য’কে অভিষিক্ত করলেন। মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সম্প্রসারিত বাণিজ্যমেলার এবার ২৫তম আয়োজন। রফতানি আয় বাড়াতে পণ্যসামগ্রীর বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের মানের উপরও বিশেষ জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। আধুনিক ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত তৈরিতে হরেক রকম সামগ্রীর আকর্ষণীয় উপস্থাপন দেশের বাণিজ্যিক পরিসরকে আন্তর্জাতিক সীমানায় নেয়া ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও অবিস্মরণীয় অবদান রাখবে। তেমন নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী পণ্যের গুণগতমানের উপরও গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেন। অন্য দেশের চাহিদা ও সরবরাহকেও প্রাধান্য দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখতে প্রবীণ, নবীন ও উদীয়মান উদ্যোক্তাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বিশ্ববাণিজ্যে বিশেষ জায়গা দখল করেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। সেটা আরও ব্যাপকভাবে বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সফলকাম হবে। অর্থাৎ বহুমুখী পণ্য উৎপাদন এবং রফতানিনির্ভর এই বাণিজ্যমেলা দেশ ও বহির্বিশ্বের বাজার সাধ্যমতো অংশগ্রহণে নিয়ামক শক্তির অবদান রাখবে। দেশী পণ্যের প্রচার ও ব্রান্ডিংয়ের লক্ষ্যমাত্রায় আয়োজিত এই মেলায় বিদেশী পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে। নিত্য-নতুন ক্রেতা তৈরিতে সম্প্রসারিত এই মেলাকে উল্লেখযোগ্য কর্মযোগ হিসেবে মনে করা হয়। ২৩ দেশের অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি তাদের আকর্ষণীয় পণ্য উপস্থাপনে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণে মনোরম স্টল ও প্যাভিলিয়ন মনোমুগ্ধকর আয়োজনে মেলার আনন্দ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে তৈরি নানামাত্রিক প্রচ্ছদ মেলার ভিন্ন মাত্রার আয়োজন। বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী কর্মদ্যোতনা আর সাফল্যকে তুলে ধরতে এই ধরনের আয়োজন জনগণের মাঝে সাড়া জাগাবে। দেশী বৃহৎ পণ্য প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি দ্বারা সজ্জিত হয়েছে নজরকাড়া প্যাভিলিয়নগুলো। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা এই মেলা দর্শনার্থী আর ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে যে অবর্ণনীয় দৃশ্যের অবতারণা করে তাও এই বাণিজ্য উৎসবের এক বৃহৎ সংযোজন। মূলত মেলার উদ্দেশ্য থাকে নিত্যব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীকে সর্ব সাধারণের সামনে নিয়ে আসা। এতে যেমন সারাবছর ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তা তৈরি হতে থাকে বাণিজ্যমেলার স্বপ্নে একইভাবে ক্রেতারাও অধীর অপেক্ষায় দিন গুণে তাদের চাহিদামাফিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার আকাক্সক্ষায়। এতে সরাসরি উৎপাদক শ্রেণীর নজরে থাকা অপেক্ষাকৃত ভাল পণ্য উপহার দেয়া। প্রতিযোগিতামূলক এতবড় আয়োজনে দক্ষতা ও নিপুণ কারুকার্য দেখাতে ব্যর্থ হলে ক্রেতাদের আকর্ষণও হারাতে হবে। সুতরাং পণ্য সামগ্রীর মান বৃদ্ধি করতে যে কর্মদক্ষতা দেখাতে হয় তাতে নৈমিত্তিক দ্রব্যের গুণগতমান বৃদ্ধি বাণিজ্যমেলার অনন্য উপহার। অন্য রকম চিত্রও বাণিজ্যমেলাকে উৎসবমুখর করে তোলে। তরুণ-তরুণীদের জন্য খ-কালীন পেশার সুযোগ করে দেয় এই আকর্ষণীয় মেলা। নতুন প্রজন্মের স্বল্পকালীন এই পেশাটি বাণিজ্যমেলায় আলাদা মাত্রা এনে দেয়। সব মিলিয়ে এই বিরাট আয়োজন সামগ্রিক অর্থনীতির এক সমৃদ্ধ উপস্থাপনা।
×