ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী শ্বশুরবাড়ির বদৌলতে সম্পদ গড়ার কথা বলছেন পুলিশ পরিদর্শক

দুদকের তদন্তে স্ত্রীসহ ফেঁসে যাচ্ছেন হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

দুদকের তদন্তে স্ত্রীসহ ফেঁসে যাচ্ছেন হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর তদন্তে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন এক সময়ের হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ ও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাকারী পুলিশ কর্মকর্তা (পরিদর্শক) ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী জাহানারা খানম। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে ও স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এসব সম্পদের উৎস জানতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। দুদকের অনুসন্ধান টের পেয়ে নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন না পুলিশের এই কর্মকর্তা। জানা গেছে, বর্তমানে নরসিংদী জেলায় পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মেয়াদে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন থানায় দাপটের সঙ্গে কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবনে ধরপাকড় বাণিজ্য চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ আয়ের অর্থ নিয়ে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনুসন্ধানে ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী জাহানারা খানমের নামে অবৈধভাবে অর্জন করা অগাধ সম্পদের তথ্য মিলেছে। জ্ঞাত আয় বহির্ভুত এসব সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সবের বাইরেও ফখর উদ্দিন ভূঁইয়ার নামে-বেনামে আরও অবৈধ সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুদক তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হক জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের অনেক কিছুর বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বিয়ের অনুষ্ঠানে। অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন কর্মকর্তা। আর অভিযুক্ত পুলিশ পরিদর্শক ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া নিজেকে নিরীহ দাবি করে বলেন, আমি সাত বছর ধরে ওসিগিরি করছি। আমার ৫০ লাখ টাকা লোন আছে আর স্ত্রীর নামে সৌহার্দ্য টাওয়ারে ১টি ফ্ল্যাট কিনেছি। আমার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় স্বজনরা সুইডেনে থাকে, তারা কিছু কিনেছে। তিনি বলেন, শ্বশুরবাড়ির ১৫০ জনের মতো সুইডেনে থাকেন! নগরীর কয়েক জায়গায় নির্মাণাধীন ভবনে শেয়ার থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার এক আতী¥য় ঠিক আত্মীয়ও বলা ঠিক হবে না তার নেয়া অংশগুলো আমাকে দেখভালের দয়িত্ব দিয়েছেন। নিজের অভিযোগ বিষয়ে বলেন, দুদক আমাকে ডেকেছিল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। অভিযুক্ত স্ত্রীর নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। দুদক সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত হচ্ছে তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ করেও কোন লাভ হবে না। দুদকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি মনিটরিংয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, পুলিশ পরিদর্শক ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া তথ্য গোপন করে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া আবাসিক এলাকার লাশ কাটা গেটের বিপরীতে সৌহার্দ্য টাওয়ারে নিজ নামে ১টি, তার স্ত্রী জাহানারা খানমের নামে ৪টি ও শ্যালকের নামে ১টিসহ মোট ছয়টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে তিন কোটি টাকা বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। সূত্র আরও জানায়, ময়মনসিংহ নগরীর বাণিজ্যিক ৮৮ নম্বর সেহরা ধোপাখলা মোড়ের ৩০ শতাংশ জমির ওপর সিটি কনস্ট্রাকশনের নির্মাণাধীন ১৭ তলা টাওয়ারের ৩টি শেয়ার কিনেছেন। যার র্ব্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। নগরীর আরেক ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা নতুন বাজার ট্রাফিক মোড় সংলগ্ন মিষ্টি কানন দোকানের পেছনে ২০ শতাংশ জমিতে নির্মাণাধীন ১৭তলা ভবনের ৪টি শেয়ার কিনেছেন। যার বতর্মান বাজার মূল্য ছয় কোটি টাকার ওপরে। এসবের বাইরে ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া নিজ নামে, স্ত্রী জানাহারা খানম ও মেয়েদের নামে রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় আরও অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরসহ হাতেও নগদ কোটি টাকা রয়েছে বলে ফখর উদ্দিন ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দাবি করেছে। সূত্র জানায়, পুলিশ আইনের ১১২ ধারায় নিজ জেলার বাইরে স্থাবর সম্পদ অর্জনে পুলিশ প্রধান-আইজিপির অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া তা নেননি বলে জানা গেছে। এভাবে তথ্য গোপন করে নামে-বেনামে, কৌশলে স্ত্রী সন্তানের নামে ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় অর্জন করেছেন। সম্পদ বিবরণীতে এসব অবৈধ সম্পদের কোন হিসাব নেই বলে জানা গেছে। নরসিংদীর মনোহরদি থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া কিশোরগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। ক্ষমতার অপব্যবহার করেই তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকে অভিযোগ রয়েছে।
×