ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোনাল্ডোর মসনদে বেঞ্জামা

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

রোনাল্ডোর মসনদে বেঞ্জামা

এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন যারা নিরবে দেশ কিংবা ক্লাবকে সেবা দিয়ে যান। তারকাদের আড়ালে তাদের নিয়ে আলোচনা হয় কম। বর্তমান ফুটবল বিশ্বে এমনই একজন ফুটবলারের নাম করিম বেঞ্জামা। ফরাসী এই ফরোয়ার্ড রিয়াল মাদ্রিদে ধারাবাহিকভাবে দ্যুতি ছড়ালেও তাকে নিয়ে হৈহুল্লুড় খুব একটা হয় না। তবে গত মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো দল ছুট হওয়ার পর কিছুটা হলেও লাইলাইটে আছেন বেঞ্জামা। ফরাসী এই ফরোয়ার্ড ধারাবাহিকভাবে দ্যুতি ছড়িয়ে চলেছেন। রবিবার রাতেও স্প্যানিশ লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদকে হার থেকে বাঁচিয়েছেন। শেষ সেকেন্ডে গোল করে ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে দলকে ড্র করিয়েছেন। এর ফলে চলমান লীগের গোলদাতার তালিকায় আবারও শীর্ষে ফিরেছেন তিনি। বর্তমানে বেঞ্জামাও মেসির গোল সমান ১২টি করে। গত এপ্রিলে লা লিগায় সব প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গোল করার দারুণ এক কীর্তি গড়েন বেঞ্জামা। ফ্রান্সের ক্লাব লিওঁ থেকে ২০০৯ সালে রিয়ালে যোগ দেয়ার পর স্পেনের শীর্ষ লীগে এ পর্যন্ত ৩৪ দলের বিপক্ষে খেলেছেন বেঞ্জামা। সব দলের বিপক্ষেই গোল করার অনন্য রেকর্ড এখন তার। এমন রেকর্ড নেই লা লিগার সর্বকালের সেরা গোলদাতা বার্সিলোনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি বা সব প্রতিযোগিতা মিলে রিয়ালের সর্বকালের সেরা গোলদাতা রোনাল্ডোরও। ২০০৪ সালের অক্টোবরে এস্পানিওলের বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত লা লিগায় ৪০টি দলের মুখোমুখি হয়েছেন ৩১ বছর বয়সী মেসি। এর মধ্যে কাডিস, মুরসিয়া ও হুয়েস্কার বিপক্ষে গোল করতে পারেননি পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। অন্যদিকে গত বছর রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমানো রোনাল্ডো ৩৩টি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলে ৩২ দলের বিরুদ্ধে গোল করেছেন। গোল করতে পারেননি একমাত্র লেগানেসের জালে। লা লিগায় মুখোমুখি হওয়া সব দলের বিপক্ষে গোলের কীর্তি আছে মেক্সিকোর সাবেক ফরোয়ার্ড হুগো সানচেজেরও। তবে মাদ্রিদের দুই ক্লাব রিয়াল ও এ্যাটলেটিকোতে দীর্ঘদিন খেলা এই ফুটবলার প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন ৩৩ দলকে। মোট প্রতিপক্ষের সংখ্যা বিবেচনায় তাই হুগোকেও ছাড়িয়ে গেছেন বেঞ্জামা। ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে বড় মঞ্চে বলার মতো সাফল্য ছিল না ফ্রান্সের। ২০০৩ সালে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ জয়ের পর বড় আসরে আর সাফল্য পায়নি দেশটি। এবার ব্রাজিল বিশ্বকাপেও তেমন বড় লক্ষ্য ছিল না ফরাসীদের! তবে প্রথম পর্ব ও শেষ ষোলোর পারফর্মেন্স দেশটির স্বপ্নের পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ কারণেই কোয়ার্টর ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখেছিল ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে যায়। এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ দলের সেরা ফুটবলাররা নিজেদের মেলে ধরতে না পারা। বিশেষ করে সেরা তারকা করিম বেঞ্জামা নেকগুলো সহজ সুযোগ নষ্ট করে দলকে ডুবিয়েছেন। মিডফিল্ডার পল গোপবাও খেলতে পারেননি প্রত্যাশা মতো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে তাই খালি হাতেই ফিরতে হয় বেঞ্জামা-পোগবাকে। অথচ এদের পায়ের জাদুতে ভর করেই বড় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল ফরীসরা। ব্যর্থ হলেও রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বেঞ্জামার চোখ ছিল ২০১৮ বিশ্বকাপে। কিন্তু তাকে দলেই নেননি ফরাসী কোচ দিদিয়ের দেশম। তবে ঠিকই দলে থেকে মাঠ মাতান পোগবা। শেষ পর্যন্ত গত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নও হয় ফ্রান্স। যৌন কেলেঙ্কারির কারণে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি বেঞ্জামা। ওই বিশ্বকাপের ৩০ সদস্যের ফরাসী দলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত দলে সুযোগ পাননি। যে কারণে চারটি বছর বেঞ্জামার গেছে অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে। রিয়াল মাদ্রিদে অসাধারণ মৌসুম কাটানোর পর আসেন পেলের দেশে। এখানেও গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে স্বপ্নের পরিধিটা আরও বাড়িয়ে নেন। কিন্তু চেনা প্রতিপক্ষ জার্মানদের কাছে হেরে পথচলা শেষ হয় বেঞ্জামাদের। চার বছর পর রাশিয়ায় ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হলেও সুযোগ হয়নি বেঞ্জামার। যে কারণে ক্যারিয়ারে বড় একটা অতৃপ্তি রয়ে গেছে তার। ২০১২ সালের ফ্রান্সের বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন বেঞ্জামা। রিয়াল মাদ্রিদ তারকার যা ছিল টানা দ্বিতীয়বার বর্ষসেরা হওয়ার গৌরব। সে সময় জার্মান ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখের উইঙ্গার ফ্রাঙ্ক রিবেরি ও ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারের গোলরক্ষক হুগো লরিসকে টপকে বর্ষসেরা হয়েছিলেন বেঞ্জামা। রিয়াল মাদ্রিদের বার্নাব্যু স্টেডিয়ামে বর্ষসেরার পুরস্কারের ট্রফি তুলে দেন ফ্রান্সের কিংবদন্তি ফুটবরার জিনেদিন জিদান। টানা দ্বিতীয়বার বর্ষসেরা ফরাসী ফুটবলারের পুরস্কার জেতার পর প্রতিক্রিয়ায় বেঞ্জামা লেছিলেন, জিদানের কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করতে পারাটা সত্যিই খুব সম্মানের। কারণ, আমার কাছে তিনিই ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। ওই বছর স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ধারাবাহিক নৈপুণ্যই বেঞ্জামাকে এ পুরস্কার পেতে সহায়তা করেছে। ওই মৌসুমে স্প্যানিশ লা লিগায় ২১ গোল করে রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপা পুনরুদ্ধারে অনবদ্য অবদান রেখেছিলেন সুঠামদেহী বেঞ্জামা। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগেও ফরাসী স্ট্রাইকার গোল করেছিলেন সাতটি। অবশ্য ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে বেয়ার্ন মিউনিখের কাছে সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল বেনজেমার রিয়াল মাদ্রিদকে। পরের মৌসুমে অবশ্য অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছিলেন বেঞ্জামা! রিয়াল মাদ্রিদের মূল স্ট্রাইকার হলেও গোল পেতে তাকে সংগ্রাম করতে হয়। এ কারণে ওই সময় বেঞ্জামার উপর নির্ভর করতে পারেননি রিয়ালের তৎকালীন কোচ কোচ জোশে মরিনহো। যে কারণে তখন রিয়ালের সেরা একাদশে দেখা যাচ্ছিল না ফরাসী তারকাকে। গুঞ্জন ছিল বেঞ্জামাকে রিয়াল বিক্রিও করে দিতে পারে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং রোনাল্ডো বার্নাব্যু ছাড়ার পর এখন বেঞ্জামাই মাদ্রিদের সেরা তারকা ও ভরসার নাম।
×