ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তামিম-মেহেদির ব্যাটিংয়ে ঢাকার সহজ জয়

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

তামিম-মেহেদির ব্যাটিংয়ে ঢাকার সহজ জয়

মিথুন আশরাফ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিবিপিএল টি২০) সিলেট থান্ডারকে সহজেই হারিয়ে ঢাকা প্লাটুন টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিল। তামিম ইকবাল ও মেহেদি হাসানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সিলেট থান্ডারকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা প্লাটুন। সিলেট থান্ডার আবারও হারের মধ্যে পড়ে গেছে। ঢাকা প্লাটুন যেখানে ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট পেয়েছে। সেখানে সিলেট থান্ডার ৬ ম্যাচের ৫টিতেই হেরেছে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় সিলেট থান্ডার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারমুখী ব্যাটসম্যান জনসন চার্লসের ৭৩ রানের সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুনের অপরাজিত ৪৯ ও শেরফানে রাদারফোর্ডের অপরাজিত ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৭৪ রান করে সিলেট। বড় স্কোর গড়ে। যদিও চট্টগ্রামে এমন স্কোর প্রায় প্রতি ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে। এই রান খুব বড়ও মনে হচ্ছে না। তাই হয়েছে। তামিম ইকবাল (৪৯ বলে অপরাজিত ৬০ রান) ও মেহেদি হাসানের (২৮ বলে ৫৬ রান) ঝড়ো ইনিংসে সহজেই জিতে যায় ঢাকা প্লাটুন। ২ উইকেট হারিয়ে ১৮.৩ ওভারে ১৭৫ রান করে জিতে যায়। ৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে। তাতে করে পয়েন্ট তালিকার সেরা তিনেও স্থান করে নেয় ঢাকা প্লাটুন। ঢাকায় যেমন, চট্টগ্রামেও সমান তালে পারফর্ম করে চলেছে ঢাকা প্লাটুন। ঢাকায় তিন ম্যাচে ২ জয় পাওয়ার পর চট্টগ্রামেও ৩ ম্যাচে ২ জয় তুলে নেয় ঢাকা প্লাটুন। ঢাকায় লীগের প্রথম পর্বে শেষ দুই ম্যাচে টানা জয় পায়। চট্টগ্রামে মঙ্গলবার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হয়। দিনের প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়ায় শেষ দুই ম্যাচে টানা দুই জয় মিলে ঢাকা প্লাটুনের। সিলেট ১৭৫ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয়। সেই টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে শুরুতেই তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয় মিলে ৫৮ রানের জুটি গড়েই বুঝিয়ে দেন, ম্যাচটিতে তাদেরই আধিপত্য থাকছে। ২৩ বলে ৩২ রান করার পর বিজয় থামলেও তামিম থামেননি। ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। একটু নিজেকে সামলে নেন। আবার ছক্কা-চার হাঁকানও। শেষপর্যন্ত টিকে থাকেন। ৩৯ বলে ৫০ রান করার পর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে ৪৯ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৬০ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। তবে মেহেদি ব্যাট হাতে নেমে যে সাহসিক ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখান, তা প্রশংসা কুড়ায়। দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়াই শুধু নয়, সিলেটের কোন বোলারকেই পাত্তা দেননি মেহেদি। ২৩ বলেই হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন এ ব্যাটসম্যান। যখন ২৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৬ রান করেন, তখন এবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে যান মেহেদি। তবে আউট হওয়ার আগেই দলকে ১৪৫ রানে রেখে যান। মেহেদি যেভাবে ব্যাটিং করেন, তাতেই আসলে সিলেট বোলারদের মানসিক ধাক্কা লাগে। মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে। বল হাতে শুরুতেই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ফ্লেচারকে আউট করার পর এমন ঝড়ো ব্যাটিং করাতে ম্যাচ সেরাও হন মেহেদি। এরপর আর কোন উইকেটই হারায়নি ঢাকা প্লাটুন। তামিম ও জাকের আলী (১১ বলে অপরাজিত ২২ রান মিলেই ৩০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ম্যাচ জেতান। টার্গেট যা ছিল, তা করেই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। শেষ ১২ বলে ৮ রানের দরকার থাকে। জাকের টানা দুই চার হাঁকিয়ে ৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতিয়ে দেন। চট্টগ্রামে রানের বন্যা বইছে। ২০০ রানের কাছাকাছি কিংবা বেশি রান না করলে জয় পাওয়া কঠিনই হচ্ছে। টানা চার ম্যাচ হারের পর যখন খুলনা টাইগার্সের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ২০০ রানের উপরে করল সিলেট থান্ডার, প্রথম জয় মিলল। পরের ম্যাচেই আবার ঝিমিয়ে পড়ল। শুরুতেই আন্দ্রে ফ্লেচারকে রানের খাতা খোলার আগেই যখন হারিয়ে ফেলল সিলেট, তখনই বিপদে পড়ল। গত ম্যাচে অপরাজিত ১০৩ রান করে এবার বিবিপিএলের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। এবার রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে গেলেন। মেহেদি হাসান যখন ঘূর্ণী জালে ফেললেন ফ্লেচারকে, তখনই আসলে সিলেটের হাত থেকে ম্যাচ ছিটকে যায়। এরপর চার্লস এসে ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে আব্দুল মজিদের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়ার পর তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গেও ৪২ রানের জুটি গড়ে ৪৫ বলে ৩ চার ও ৮ ছক্কায় ৭৩ রান করে আউট হন। চার্লসের মারমুখী ব্যাটিং রুখে দেন শাদাব খান। তবে প্রথম ওভারেই ৪ রানে থাকা চার্লসের ক্যাচটি যদি হাতছাড়া না হতো, তাহলে এত রান হয়তো হতো না। সিলেটের যখন ৬০ রান, তখন চার্লসেরই ৫০ রান হয়ে যায়। ১০ ওভারেই ১০০ রানের কাছে চলে যায় সিলেট। তখন মনে হয় ২০০ রান অনায়াসেই করবে। মোসাদ্দেক হোসেন নেমেই আউট হওয়ার পর মিঠুন ও রাদারফোর্ড দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেও আসলে দলকে ১৭৪ রানের বেশি নিয়ে যেতে পারেননি। দুইজন মিলে পঞ্চম উইকেটে ৪৫ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন। আরও বেশি ধুন্ধুমার ব্যাটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা প্লাটুনের বোলারদের লাইন লেন্থ বজায় রাখা বোলিংয়ে পারেননি মিঠুন ও রাদারফোর্ড। মিঠুন শেষপর্যন্ত ৩১ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৪৯ রান করেন। রাদারফোর্ডের ব্যাট থেকে ২৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৮ রান আসে। কিন্তু যে রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়, তা তামিম ও মেহেদির ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে সামান্যই মনে হয়। ঢাকা সহজে জয়ও তুলে নেয়। টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নেয়। স্কোর ॥ ঢাকা প্লাটুন-সিলেট থান্ডার ম্যাচ-চট্টগ্রাম সিলেট থান্ডার ইনিংস ১৭৪/৪; ২০ ওভার; ফ্লেচার ০, মজিদ ৮, চার্লস ৭৩, মিঠুন ৪৯*, মোসাদ্দেক ২, রাদারফোর্ড ৩৮*; আফ্রিদি ২/২৬। ঢাকা প্লাটুন ইনিংস ১৭৫/২; ১৮.৩ ওভার; বিজয় ৩২, তামিম ৬০*, মেহেদি ৫৬, জাকের ২২*; এবাদত ১/২৪। ফল ॥ ঢাকা প্লাটুন ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ মেহেদি হাসান (ঢাকা প্লাটুন)।
×