ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপের পর এবার লিভারপুলের বিশ্বজয়

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ইউরোপের পর এবার লিভারপুলের বিশ্বজয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শোকেসে সব ট্রফিই জমা ছিল। শুধু বাকি ছিল ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এর আগে ফাইনালে খেললেও স্বপ্নপূরণ হয়নি। অবশেষে আক্ষেপ ঘুচেছে। বাকি থাকা ট্রফিটি শোকেসে জমা করতে পারছে বর্তমান সময়ে বিশ্বের সেরা ক্লাবটি। বলা হচ্ছে লিভারপুলের কথা। ইংলিশ জায়ান্টররা নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শনিবার রাতে কাতারের দোহার খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ফাইনালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লামেঙ্গোকে ১-০ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য থাকার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানে নবম মিনিটে (৯৯ মিনিট) ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবার্টো ফিরমিনো গোল করে উচ্ছ্বাসে ভাসান দ্য রেডসদের। এর ফলে ইউরোপ জয়ের পর বিশ্বজয়ও করল জার্গেন ক্লপের দল। চলতি বছরেই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয় করেন সালাহ-মানেরা। মূলত স্বদেশী ফুটবলারের কাছে হেরে ব্যথায় কুকড়াতে হয়েছে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লামেঙ্গোকে। ম্যাচে জয়সূচক গোলদাতা ফিরমিনো ব্রাজিল জাতীয় দলের অপরিহার্য ফুটবলার। তেমনি ক্লাব দল লিভারপুলেরও তিনি অন্যতম প্রধান ভরসা। কিন্তু নিয়তির লিখন, ফাইনাল ম্যাচে ফিরমিনোকে খেলতে হয়েছে নিজ দেশের ক্লাবের বিরুদ্ধে। শুধু খেলেননি, শিরোপা নির্ধারণী গোলও করেছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতির শিকার কেউ হতে চান না, চাননি ফিরমিনোও, ‘আসলে এ নিয়ে কিছু করার নেই। আমি পেশাদার ফ্টুবলার। যেখানেই থাকি দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভাল লাগছে, তবে ওদের জন্যও খারাপ লাগছে’। ক্লাব বিশ্বকাপে সরাসরি সেমিফাইনালে খেলেছে লিভারপুল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও মন্টেরির বিরুদ্ধে ইনজুরি সময়ে গোল করে দলকে রক্ষা করেছিলেন ফিরমিনো। পুরো আসরে চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ। ২০০৫ সালের আসরেও ফাইনালে খেলেছিল লিভারপুল। কিন্তু সেবার আরেক ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সাওপাওলোর কাছে হারতে হয়েছিল। এবার সাওপাওলো না হলেও ব্রাজিলেরই আরেক ক্লাবকে হারিয়ে চক্রপূরণ করেছে ইংলিশ জায়ান্টরা। এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দল হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে লিভারপুল। এর আগে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছে আরেক পরাশক্তি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ৪৫ হাজারেরও বেশি দর্শকের সামনে ম্যাচের শুরু থেকে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে লিভারপুল। আর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচে ফিরে আসে সেলেসাওদের প্রতিনিধি ফ্লামেঙ্গো। তবে প্রথম ৪৫ মিনিটে কোন দলই তেমন ভাল আক্রমণ শানাতে পারেনি। বিরতির পর শুরুতেই ফিরমিনোর শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হলে হতাশ হতে হয় লিভারপুলকে। ৫৪ মিনিটে গোলরক্ষক এ্যালিসনের নৈপুণ্যে বেঁচে যায় লিভারপুল। অসামান্য দক্ষতায় তিনি ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষের আক্রমণ। ফিরমিনোর মতো এ্যালিসনও ব্রাজিলের। মূলত এ দু’জনই স্বদেশী ক্লাবের পরাজয়কে তরান্বিত করেছেন। গোল পেতে মরিয়া লিভারপুল ৭৭ মিনিটে সফলও হয়। কিন্তু টুর্নামেন্ট সেরা সালাহর গোলটি বাতিল করা হয় অফসাইডের কারণে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের যোগ করা সময়ে ম্যাচে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় সেনেগালের ফরোয়ার্ড সাদিও মানে ফাউলের শিকার হন। ফলে পেনাল্টি দেয়া হয় লিভারপুলকে। কিন্তু সিদ্ধান্তটি চলে যায় ভিএআরে। ফাউল ডি বক্সের ভেতরে নাকি বাইরে তা নিয়েই চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তিন মিনিট ভিএআর-এর সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন রেফারি। পেনাল্টি বঞ্চিত লিভারপুল ফ্রিকিকও পায়নি। কারণ ট্যাকলেও কোন সমস্যা দেখেননি রেফারি। এরপর নির্ধারিত সময় শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এখানে শুরু থেকেই গোল পেতে মরিয়া থাকে চ্যাম্পিয়নরা। ফলও এসে যায় দ্রুত। ৯৯ মিনিটে সাদিও মানের কাছ থেকে বল পেয়ে ঠা-া মাথায় জালে পাঠান ফিরমিনো (১-০)। দুই মিনিট পর সালাহর শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন ফ্লামেঙ্গো গোলরক্ষক দিয়াগো আলভেস। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন ফ্লামেঙ্গোর গ্যাব্রিয়েল বারবোসা। এ্যালিসনকে একা পেয়েও বাইরে শট মেরে সুযোগ নষ্ট করেন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান থেকে ধারে খেলতে আসা এই ফরোয়ার্ড। শেষ পর্যন্ত গোলটি ধরে রেখে ট্রফি নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসেন সালাহ, ফিরমিনো, মানেরা।
×