ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে পুশ ইন ঠেকাতে সতর্কাবস্থায় বিজিবি

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

সীমান্তে পুশ ইন ঠেকাতে সতর্কাবস্থায় বিজিবি

শংকর কুমার দে ॥ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় মানবপাচার, জাল নোট চক্রের তৎপরতা, মাদক পাচার, চোরাচালান, জঙ্গী তৎপরতাসহ নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা বাড়তে পারে। এ জন্য সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি ও সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে ভারতের এনআরসি ও নয়া নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে প্রচন্ড বিক্ষোভ ও উত্তেজনার মুখে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অশান্ত ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’ রাজ্যগুলো দিয়ে অনুপ্রবেশ ছাড়াও মানবপাচার, মাদকপাচার, চোরাচালানি, জঙ্গীদের যাতায়াত ও তৎপরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরাসহ সাত ‘সেভেন সিস্টার’ রাজ্যের সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারতের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতে যেভাবে লোকজন ফুঁসে উঠেছে তাতে ভারত ভূখন্ড পেরিয়ে সে ঢেউ বাংলাদেশের মাটিতে আচড়ে পড়তে পারে। এই আশঙ্কা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগাম সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে যাতে সীমান্ত গলিয়ে কোন অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে। গোয়েন্দা সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিক্ষোভে ক্রমেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসে। বৈঠকে সীমান্তরক্ষী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, সীমান্তবর্তী কোন দেশ অশান্ত হয়ে উঠলে প্রতিবেশী দেশ অশান্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। সেই আগুনের আঁচ ওই দেশে লাগার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অপরাধী সীমান্তে তৎপর হয়ে উঠতে পারে। এর মধ্যে মানবপাচার, চোরাচালান, মাদকপাচার, জঙ্গীদের অবাধ যাতায়াত ও তৎপরতা বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের জন্যই বিপদ ডেকে আনার আশঙ্কা থাকে। ভারতের নাগরিকপঞ্জি কেন্দ্র করে উদ্ভূত সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশ, যাতে এখানে কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এক বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায়ই দুই দেশের লোকজন বেআইনী সীমান্ত গলিয়ে যাতায়াত করে থাকে। গরু চোরাচালানতো নৈমিত্তিক ঘটনা। জালনোট চক্রও থাকে সক্রিয়। মাদক ও মানবপাচারের ঘটনা ঘটে। সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের জঙ্গীদের অবাধ যাতায়াত ও তৎপরতা রয়েছে যা দুই দেশের জন্যই বিপদজ্জনক। ভারতের ভূখন্ডে এনআরসি ও নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে চরম অস্থিরতার মধ্যে অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। ইতোমধ্যেই ভারত থেকে অনুপ্রবেশের বিচ্ছিন্ন ঘটনায় গত এক মাসে প্রায় ছয় শ’ নারী, পুরুষ ও শিশুকে আটক করে থানায় দেয়া হয়েছে। ভারত থেকে অনুপ্রবেশ বাড়ার আশঙ্কায় দেশের সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। বিজিবি সূত্র জানায়, সীমান্ত জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে এই অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। ইতোমধ্যেই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটনা ঘটছে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হয়েছে অনেকেই। বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মংলার বেশ কয়েক বাসিন্দাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা ভারতের কর্নাটকের ব্যাঙ্গালুরু ও কেরালায় বাসাবাড়িতে কাজের জন্য গিয়ে ফিরে এসেছে। তবে তারা বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট কোনটাই দেখাতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের নাগরিক কিনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়নি । পশ্চিমবঙ্গের মতো অসম থেকেও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। এতে বেড়ে যেতে পারে অপরাধ। প্রতিমাসে মহেশপুর সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশের সময় আমরা দুই-চার জনকে আটক করলেও বর্তমানে ওই সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু লোকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অসমের নাগরিকপঞ্জিতে বাংলাভাষী যেসব মুসলমানের জায়গা হয়নি, অবৈধ ঘোষণা করা হলে তারাও বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালাতে পারে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শুধু অসম সীমান্তেই নয়, অন্য রাজ্যগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্্র মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ভারত সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে যে ভারত থেকে কাউকে তারা বাংলাদেশে পুশ ইন করবে না। সরকারের কাছে ভারত থেকে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই। তবে একটা বিপদের দিক আছে, যদি ভারতে ফের যাচাই-বাছাই শুরু হয় তাহলে ওখান থেকে বাংলাভাষীদের ঢল নামতে পারে। এ জন্য প্রাথমিক কাজ হলো যাতে আর কেউ ঢুকতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা।
×