ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক মোশারফের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ১১:১২, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক মোশারফের মৃত্যুদণ্ড

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সে দেশের বিশেষ আদালত। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ এই সাজা ঘোষণা করা হয়। ২০০৭ সালের ৩ নবেম্বর অবৈধভাবে সংবিধান স্থগিত করে জরুরী অবস্থা জারি করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এই সাজা দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম বেসামরিক আদালতে দেশদ্রোহের অভিযোগে কোন সাবেক সেনাপ্রধানের বিচারের রায় এল। শুনানি শেষে বিশেষ আদালতে এই মামলার রায় দেয় তিন সদস্যের বিচারকের একটি প্যানেল। বিচারকদের এই প্যানেলে ছিলেন পেশোয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার শেঠ, সিন্ধু হাইকোর্টের বিচারপতি নজর আকবর এবং লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শহীদ করিম। খবর ডন ও দ্য নিউজের। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের পক্ষে আইনজীবী আলী জিয়া বাজওয়া সাবেক এই সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। বাজওয়া বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, আবদুল হামিদ ডোগার ও জাহিদ হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে চায় সরকার। এক সঙ্গে সব অভিযুক্তের বিচার করা উচিত। সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশারফের এই সহযোগীদেরও বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পারভেজ মোশারফ। রাষ্ট্রদ্রোহ, জরুরী অবস্থা জারি, বেআইনী উপায়ে বিচারপতি বরখাস্ত, বেনজির ভুট্টো হত্যা এবং লাল মসজিদ তল্লাশি অভিযান সংক্রান্ত কয়েকটি মামলায় বর্তমানে পলাতক রয়েছেন সাবেক এই পাক সেনাপ্রধান। ২০০৭ সালের ৩ নবেম্বর জরুরী অবস্থা জারির অভিযোগে দেশটির আদালতে মোশারফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এই মামলার রায় আদালতে ঝুলে ছিল। সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশারফ এখন আছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখান থেকে পাঠানো এক ভিডিওবার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগকে তিনি ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দশ বছর দেশের ( প্রেসিডেন্টের) দায়িত্ব পালন করেছি। দেশের জন্য লড়াই করেছি। এই মামলায় আমার বক্তব্যও শোনা হয়নি, অথচ আমাকে দোষী বানানো হয়েছে।’ ডন জানায়, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ পাবেন পারভেজ মোশারফ। সুপ্রীম কোর্ট এই রায় বহাল রাখলে তখন তার সামনে কেবল প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকবে। ১৯৯৯ সালে যাকে উৎখাত করে মোশাররফ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন, সেই মুসলিম লীগ নেতা নওয়াজ শরিফ ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে ২০১৩ সালে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। বিশেষ আদালত ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় মোশারফকে অভিযুক্ত করে বিচার শুরু করে। কিন্তু পরে বিচারের কাজ ঝুলে যায়। ওই অবস্থায় ২০১৬ সালের মার্চে চিকিৎসার কথা বলে দেশ ছাড়েন পাকিস্তানের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। ওই বছর ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে সাবেক এই জেনারেল দাবি করেন, পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশটির পরিবেশের উপযোগী করে গড়ে ওঠেনি বলেই প্রায় সময় সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্র পরিচালনার সামনের সারিতে এসে ভূমিকা রাখতে হয়। এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যায়িত করে মোশারফ বলে আসছিলেন, ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত ও জরুরী অবস্থা জারির যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন, তাতে সরকার ও মন্ত্রিসভার সায় ছিল। তবে ওই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে আদালত রায়ে বলেছে, সংবিধান স্থগিতের সেই পদক্ষেপ ছিল অবৈধ ও রাষ্ট্রবিরোধী।
×