ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী

সরকারের পদক্ষেপের কারণে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

সরকারের পদক্ষেপের কারণে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার অনেক কমে এসেছে। হতদরিদ্রতা বলতে এখন আর কিছুই নেই। উপোস শব্দ এখন ব্যবহার হয় না বললেই চলে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণে সবচেয়ে বড় প্রকল্প নিয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে সচেষ্ট বলে মন্তব্য করেছে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বলেন, সরকার চায় জনগণের সার্বিক উন্নয়ন। সেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। এক সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন। বুধবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর ভূমিকা নিয়ে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ল্ড ভিশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো বিদ্যুত খাতে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ আজ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। এটা দারিদ্র্য দূরীকরণে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। গ্রামে দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিদ্যুত পৌঁছানোর কারণে অন্ধকার যেমন দূর হয়েছে তেমন তাদের কাজের পরিধি অনেক বাড়ছে। এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকার নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। গ্রামীণ জনগণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে শিশুদের যেমন বিনামূলে বই দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিনামূল্যে টিকা দেয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকারের এসব কর্মকবা-ের ফলে যেমন শিশুমৃত্যুর হার কমেছে তেমনি মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, সকলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের আরও কাজ করতে হবে। কারণ, দারিদ্র্য কমছে কিন্তু বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। এক্ষেত্রে চরম দারিদ্র্য নির্মূলে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের পাশাপাশি প্রয়োজন সামগ্রিকতার আলোকে কাজ করা। কাজের বিকল্প কিছু নেই উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত প্রকৃত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হতে হলে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। স্থানীয় দরিদ্র মানুষকেই তাদের উপকারভোগী নির্বাচনের দায়িত্ব দিতে হবে, তাহলেই প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে কর্মসূচীর সুফল পৌঁছাবে। সমাজ সেবা অধিদফতরের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী পরিচালক সাব্বির ইমাম বলেন, সরকার সব সময়ই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর পরিধি বৃদ্ধিতে তৎপর রয়েছে। এজন্য দরকার বাস্তবায়নকারীদের সততা ও আন্তরিকতা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ মোহাম্মাদ খালেদ হাসান বলেন, সরকারের এনএসএসএসের কার্যক্রমের সার্বিক সাফল্য দেখতে হলে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে এজন্য সরকার ও এনজিওদের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরী। সেমিনারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৩টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ও সমতলের নৃগোষ্ঠীর জন্য করণীয় বিষয় উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ শাহান, খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর ভূমিকা শীর্ষক উপস্থাপন করেন মহসিন আলী, প্রকল্পের বিষয় উপস্থাপনা করেন মোঃ ইউসুফ আলী। ড. আসিফ শাহান গবেষণাপত্র উপস্থাপনায় বলেন, দারিদ্র্য কমলেও অসমতার পাশাপাশি আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর পৃথক নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করার বিষয়ে তিনি সুপারিশ তুলে ধরেন। চন্দন জেড গোমেজ বলেন, জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মচারী ও এনজিওÑ এ তিন পক্ষের সমন্বয় ঘটলে সকল কর্মসূচীই সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
×