ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম-সিলেট ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু বঙ্গবন্ধু বিপিএল

প্রকাশিত: ১২:২০, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

চট্টগ্রাম-সিলেট ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু বঙ্গবন্ধু বিপিএল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শেষ হচ্ছে অপেক্ষা। আজই শুরু হয়ে যাচ্ছে বিপিএল টি২০। যে বিপিএল এবার বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা হয়েছে। আর তাই নাম হয়েছে, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিবিপিএল)। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার বিপিএলের বিশেষ আসর আয়োজন হচ্ছে। আসরের উদ্বোধনও রবিবার হয়ে গেছে। এই আসরের খেলা আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও সিলেট থান্ডারের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে। দুপুর দেড়টায় ম্যাচটি শুরু হবে। আরেকটি ম্যাচ রয়েছে আজ। মিরপুর স্টেডিয়ামেই সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ও রংপুর রেঞ্জার্স মুখোমুখি হবে। এবার এ লীগের সপ্তম আসর হবে। সর্বশেষ ছয়টি আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকলেও এবার আসরে কোন দলেরই ফ্র্যাঞ্চাইজি নেই। স্পন্সর আছে। তবে সেটি দল চালানোর ক্ষেত্রে নয়। একেকটি দলের সঙ্গে শুধু যুক্ত থাকার জন্য। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই (বিসিবি) লীগের সব কিছুর তত্ত্বাবধানে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়া বিপিএলের তত্ত্বাবধানে বিসিবিই থাকছে। আর তাই তো প্রতিটি দলেই বোর্ড থেকে একজন করে পরিচালকও দেয়া হয়েছে। দল সঠিকভাবে পরিচালনার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েেেছ। লীগে এবারও সাতটি দল অংশ নিচ্ছে। ঢাকা প্লাটুন, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, রাজশাহী রয়্যালস, সিলেট থান্ডার, খুলনা টাইগার্স, রংপুর রেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স আছে। ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলাগুলো হবে। প্রতিদিন দুটি করে ম্যাচ হবে। দিনের প্রথম ম্যাচ দুপুর দেড়টায় ও দ্বিতীয় ম্যাচ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হবে। শুধু শুক্রবার প্রথম ম্যাচ দুপুর ২টায় ও দ্বিতীয় ম্যাচ রাত ৭টায় শুরু হবে। লীগ পর্বে ৪২টি ম্যাচ হবে। এরপর পয়েন্ট তালিকায় সেরা চারটি দল পরের রাউন্ডে উঠবে। এলিমিনেটর, দুই কোয়ালিফায়ার এবং এক ফাইনালসহ আরও চারটি ম্যাচ হবে। লীগে মোট ৪৬টি ম্যাচ হবে। আজ খেলা শুরু হয়ে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। লীগ পর্বের ২৪টি ম্যাচ হবে মিরপুরে, ১২টি হবে চট্টগ্রামে আর ৬টি ম্যাচ হবে সিলেটে। এলিমিনেটর, দুই কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল ম্যাচও মিরপুরে হবে। ২৪টি ম্যাচের সঙ্গে মিরপুরে আরও চারটি ম্যাচ যোগ হবে। আজ লীগ শুরু হয়ে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিরপুরে খেলা হবে। এরপর চট্টগ্রামে ১৭ থেকে ২৪ ডিসেম্বর খেলা হবে। আবার ২৭ ডিসেম্বর থেকে মিরপুরে খেলা হবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। ২ থেকে ৪ জানুয়ারি সিলেটে খেলা হবে। ৭ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আবার মিরপুরে খেলা হবে। ১৭ জানুয়ারি ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সপ্তম আসরের পর্দা নামবে। মিরপুরে মোট তিন পর্ব, চট্টগ্রাম ও সিলেটে একটি করে পর্ব চলবে। মোট পাঁচ পর্বে খেলা হবে। এবারও লীগে নতুনত্বের ছোঁয়া থাকছে। সর্বশেষ আসরের মতো ৭টি দল অংশ নিলেও নামে পরিবর্তন এসেছে। দলগুলোর মালিকানাও অন্যদের হাতে স্বতন্ত্র থাকছে না। ৭টি দলই বিসিবির সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। টেলিভিশন সম্প্রচারের মান বাড়াতে ব্যবহার করা হবে ৩৫টি ক্যামেরা। যেগুলো ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ দিতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া উন্নতমানের এলইডি স্টাম্প, জিং বেল, ড্রোন ও স্পাইডার ক্যামতো থাকবেই। গত বিপিএলে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। এবার দুটি করে আলট্রামোশন ক্যামেরা থাকবে। তাতে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় পড়তে হবে না। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের মতো বিদেশী তারকা ক্রিকেটার অবশ্য এবার থাকছেন না। ক্রিস গেইল খেলবেন। এর সঙ্গে শহীদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরা, আন্দ্রে রাসেল, মোহাম্মদ আমিররাও থাকছেন। কিন্তু বড় নাম বলতে আর কেউ নেই। গত আসরে যেমন এবি ডি ভিলিয়ার্স, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ খেলেছেন। এবার তারা নেই। আবার বাংলাদেশের সেরা টি২০ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও নেই। তিনি ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব গোপন রাখায় এক বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন। তাই খেলতে পারছেন না। বিপিএলে বরাবরই দেখা গেছে দুইজন দেশি কোচ থাকেন। যারা প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এবার এক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ছাড়া আর কোন দেশী প্রধান কোচ কোন দলের সঙ্গে নেই। তিনি ঢাকা প্লাটুনের কোচ। এ ছাড়া সব বিদেশী কোচদের দিয়েই কাজ চালাবে বাকি দল। বিপিএলে সবচেয়ে সফল কোচ সালাউদ্দিন। তিনি দুইবার দলকে চ্যাম্পিয়ন করান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে দুইবার শিরোপা এনে দেন। এর বাইরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ হচ্ছেন ইংলিশ কোচ পল নিক্সন, খুলনা টাইগার্সের ইংলিশ কোচ জেমস ফোস্টার, রাজশাহী রয়্যালসের ইংলিশ কোচ ওয়াইজ শাহ, সিলেট থান্ডারের দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস, রংপুর রেঞ্জার্সের নিউজিল্যান্ডের কোচ মার্ক ও ডনেল, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের কোচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওটিস গিবসন। বিপিএলে এর আগে ছয়টি আসর হয়েছে। ছয়টি আসরে ছয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রথম দুই আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, তৃতীয় আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, চতুর্থ আসরে ঢাকা ডায়নামাইটস, পঞ্চম আসরে রংপুর রাইডার্স ও ষষ্ঠ আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শিরোপা জিতে। দুইবার করে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চ্যাম্পিয়ন হয়। এর মধ্যে ম্যাচ পাতানোয় অভিযুক্ত দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স তৃতীয় আসর থেকেই বাদ হয়ে যায়। এবার নিশ্চিতভাবেই নতুন চ্যাম্পিয়ন দল মিলবে। বিপিএল যেহেতু বিসিবির অধীনে চলবে, তাই প্রতিটি দলেই বিসিবি পরিচালকদের দল চালানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকা প্লাটুন দলটির পরিচালক হিসেবে থাকছেন বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোর্তুজা। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে পরিচালক হিসেবে থাকছেন বিসিবির পরিচালক এবং মিডিয়া ও কমিউনিকেশন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জালাল ইউনুস। রাজশাহী রয়্যালসে দলটির পরিচালক হিসেবে আগে ছিলেন বিসিবির পরিচালক ও ওয়ার্কি কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজ। তিনি এখন রংপুর রেঞ্জার্সের পরিচালক হিসেবে থাকছেন। সিলেট থান্ডার দলে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিসিবির পরিচালক ও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী। খুলনা টাইগার্স দলটিতে বিসিবির পরিচালক ও গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। রংপুর রেঞ্জার্স দলটিতে বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান পরিচালক হিসেবে ছিলেন। কিন্তু ইনসেপটা রংপুরের স্পন্সর হওয়ায় এই কোম্পানির সঙ্গে এনায়েত হোসেন সিরাজের যোগসূত্র থাকায় সিরাজ এখন পরিচালক। রাজশাহীর পরিচালক পদটি যেহেতু খালি শেষপর্যন্ত আকরাম এই দলে যুক্ত হতে পারেন। আবার শুরু থেকেই যেহেতু রংপুরে আছেন, সিরাজের সঙ্গে এই দলেও থেকে যেতে পারেন। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স দলটিতে বিসিবির পরিচালক ও হাই পারফর্মেন্সের চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান দুর্জয় পরিচালক হিসেবে থাকছেন। যারা দলগুলোর পরিচালক হিসেবে থাকছেন, তারাই আসলে বিসিবির হয়ে দলগুলো পরিচালনা করার মূল দায়িত্বে থাকবেন। স্পন্সরের সঙ্গে সমন্বয় করে দল চালাবেন। কুমিল্লা দলটি ছাড়া মঙ্গলবার পর্যন্ত সব দলেরই স্পন্সর আছে। কুমিল্লা দল ক্ষোদ বিসিবিই চালাবে। এছাড়া সাত দলের মধ্যে ছয় দলের স্পন্সর থাকছে। ঢাকার যমুনা ব্যাংক, চট্টগ্রামের ডেলটা স্পোর্টস, খুলনার মাইন্ড ফ্রি, জিভিনি ফুডওয়্যার এন্ড ক্র্যাফট লিমিটেড এবং রাজশাহীর স্পন্সর হয়েছে আইসিপি লিমিটেড। শেষমুহূর্তে ইনসেপটা গ্রুপ রংপুরের স্পন্সর হয়েছে। প্রতিটি দলের সঙ্গে এবার এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের কর্মকর্তারাও থাকবেন। যেন কোন ধরনের ম্যাচ পাতানোর কোন সুযোগ না থাকে। প্রশ্ন এখন একটাই, বঙ্গবন্ধুর নামে বিপিএল হচ্ছে। মহা আয়োজনও করা হচ্ছে। রবিবার যে উদ্বোধন হল, সেই অনুষ্ঠানেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা আমেজ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আজ যে মাঠের লড়াই শুরু হচ্ছে, তা জমবে তো?
×