ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত নিয়ে গণশুনানি

ভর্তুকি না দিলে এক টাকা থেকে ১.৬২ পয়সা বাড়তে পারে

প্রকাশিত: ১১:৩২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

ভর্তুকি না দিলে এক টাকা থেকে ১.৬২ পয়সা বাড়তে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার কোন ভর্তুকি না দিলে ইউনিট প্রতি এক টাকা থেকে এক টাকা ৬২ পয়সা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হতে পারে ভোক্তা পর্যায়ে। চার দিনের শুনানিতে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দর বৃদ্ধির এই হিসাব পাওয়া গেছে। তবে সব সময়ই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নির্ভর করে সরকারের ভর্তুকির ওপর। পিডিবি তাদের লোকসান সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে পেলে তাদের আর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে না। তবে সরকার ভর্তুকি না দিলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কোন বিকল্প থাকবে না। গত তিন দিনের শুনানিতে সব বিতরণ কোম্পানিই বলছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম না বাড়লে তাদের দাম বৃদ্ধির কোন প্রয়োজন নেই। বিগত ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সাত দফায়। সেই হিসাবে গত দুই বছর দেশে পাইকারি এবং খুচরা কোন ধরনের বিদ্যুতের দাম বাড়েনি। জানতে চাইলে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, পিডিবি তার মূল্যহার বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারেনি। সঙ্গত কারণে এই দাম বৃদ্ধি করা সমীচীন হবে না। সম্প্রতি বিদ্যুত, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পিডিবি তাদের ভর্তুকি কমানোর জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করবে। ২০১০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং শুনানিতে দেখা গেছে পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির পর খরচ বিবেচনা করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু এবার খুচরা এবং পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব একই সঙ্গে দেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধিতে কমিশনের কাছে প্রস্তাব করা হলেও বিতরণ কোম্পানি শুধু নিজেদের বিতরণ ব্যয় নির্ধারণের জন্য এবার কমিশনের কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসেছে। ফলে এবার ভোক্তা পর্যায়ে কমিশন কতটা ব্যয় ঠিক করবে তা বোঝা দুরূহ হয়ে উঠেছে। তবে গত চার দিনের শুনানি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং বিতরণ মার্জিনের সব প্রস্তাব মেনে নিলে এক টাকা থেকে এক টাকা ৬২ পয়সা দাম বৃদ্ধি করতে হবে। এতে পিডিবি এলাকায় গ্রাহক পর্যায় প্রতি ইউনিট বাড়তে পারে দাম ১ টাকা ৩১ পয়সা। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এলাকায় গ্রাহক পর্যায় বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১ টাকা বাড়তে পারে। একইভাবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এলাকায় ইউনিট ১ টাকা ৫২ পয়সা। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লিমিটেড এর বাড়তে পারে ১ টাকা ৬৫ পয়সা বাড়বে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) ১ টাকা ২৭ বাড়তে পারে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ১ টাকা ২৯ পয়সা বৃদ্ধি করতে হবে। তবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সরকারের ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল। কমিশন শুনানির পর সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে। সরকার বিদ্যুত উৎপাদনে কতটা ভর্তুকি দিতে সম্মত হবে তার হিসেবে দাম বাড়ানো হবে। উৎপাদন পর্যায়ের অর্ধেক ভর্তুকি দিলেও প্রস্তাবের অর্ধেক বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হবে। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে পিডিবি যে ঘাটতির কথা বলছে তা সমন্বয় করতে ইউনিট প্রতি ৯৩ পয়সা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিইআরসি সূত্র বলছে, ২০১০ সালের ১ মার্চ গ্রাহক পর্যায় ৬ দশমিক ৭ ভাগ দাম বেড়ছে। ওই সময় পাইকারিতে দাম বাড়েনি। একইভাবে ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায় ৫ ভাগ দাম বেড়েছে। তখন পাইকারিতে ১১ ভাগ দাম বেড়েছে। ২০১১ সালের ১ আগস্ট গ্রাহক পর্যায়ে দাম না বৃদ্ধি করা হলেও পাইকারিতে ৬ দশমিক ৬৬ ভাগ দাম বেড়েছে। ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ দশমিক ২৫ ভাগ দাম বেড়েছে। পাইকারিতে ওই সময় ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বরে গ্রাহক পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ১৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট গ্রাহক পর্যায়ে ২ দশমিক ৯৩ ভাগ দাম বাড়ানো হলেও পাইকারিতে দাম বাড়েনি। এরপর সব শেষ ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর গ্রাহক পর্যায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বাড়ানো হলেও পাইকারিতে বাড়েনি।
×