ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

এরা জন্মশত্রু, তরুণরা এদের রুখে দাও

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

 এরা জন্মশত্রু, তরুণরা এদের রুখে দাও

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে এবার ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের জন্মের মূল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে ৩ ও ৭ নবেম্বর যে শকুনের দল কামড়ে ধরেছিল সেই শকুনদের নেতাদের ক’জনকে আমরা দীর্ঘ ৩৮ বছর পর দ-িত করতে সক্ষম হয়েছি, শুধু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলের ঐক্যজোট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিপুলভাবে ২০০৮-এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল বলে। এরা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট, ৩ ও ৭ নবেম্বর কিন্তু জাতিকে শুধু যে প্রাণঘাতী আঘাতে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছিল তা নয়; এই তিনটি তারিখ আমাদের দেশের জন্মশত্রুকে চিনিয়ে দিয়েছিল। তরুণ প্রজন্ম নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছে ঐ তিন হত্যাকা-ে কারা নিহত হয়েছিল এবং কারা ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছিল। নিহতরা বলাবাহুল্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের রচয়িতা, সে স্বপ্নের বাস্তবায়নকারী রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা! এরপর ক্ষমতাসীন জিয়া উনিশটি ক্যুর নাম করে কমপক্ষে চার হাজার মুক্তিযুদ্ধের সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি দিয়েছিল। পরে এরশাদ জে. মঞ্জুরকে হত্যার পর যে তেরোজন সেনা কর্মকর্তাকে প্রহসনের বিচার করে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েছিল তারাও সবাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা! আশ্চর্য, তাদের মধ্যে একজনও যুদ্ধাপরাধী দালাল ছিল না। জিয়া ক্ষমতা দখল করেই একাত্তরের দালালদের মুক্তি দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের ধারাটি সংবিধান থেকে তুলে দিয়ে তাদের সেই আলবদরীয় রাজাকারের গুম, হত্যা, ধর্ষণের রাজনীতি চর্চার অবারিত সুযোগ করে দিয়েছিল! এ ইতিহাস নানা কারণে বহুবার লিখেছি। কিন্তু আজ তথ্য প্রযুক্তিতে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে কিছু কথা বলতে চাই। প্রথমত, কোটাবিরোধী বা সড়ক দুর্ঘটনাবিরোধী আন্দোলনে জনগণ যাদের বারবার টিভি ক্যামেরায় মিছিলে দেখেছে, যারা নানা মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দিয়ে এসব আন্দোলনকে সহিংস করে তুলেছিল, তারা ছিল জামায়াত-শিবির-বিএনপির ক্যাডারগোষ্ঠী। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের জন্মশত্রুরা যখনই সুযোগ পেয়েছে সেটাকে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে জনমানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে সরকারের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চেয়েছে! দ্বিতীয়ত, তরুণ প্রজন্ম দেখেছে ট্রেন দুর্ঘটনা পরপর সংঘটিত হয়েছে, যা বিগত ত্রিশ-চল্লিশ বছরে হয়নি! এগুলোর তদন্তে নাশকতা হিসেবে কিছু প্রমাণ মিলেছে। এর পরপর আরও বগি লাইনচ্যুত হয়েছে, পরপর অনেক স্থানে, মার্কেটে, বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লেগেছে, বিহারীদের ক্যাম্পে হত্যা, আগুন দেয়া হয়েছে! এখন দেখা গেল পেঁয়াজকে কেন্দ্র করে বাজার অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকরা না বুঝেই অঘোষিত ধর্মঘট করছে, যাতে সারাদেশে পচনশীল পণ্যের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে, কৃষক মার খায়, সর্বোপরি জনগণ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। এই লক্ষ্যে এসব অপকর্ম, রাষ্ট্রবিরোধী, জাতির স্বার্থবিরোধী দুষ্কর্ম করছে কারা, সেটি নিশ্চয়ই বুদ্ধিদীপ্ত তরুণ শ্রেণী বুঝতে পেরেছে! এর পরপর চাল এবং লবণ নিয়ে অহেতুক মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করেছে, সম্ভবত যাদের নাম দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংয়ের জন্য অপরাধীদের যে তালিকা তৈরি হয়েছে সে তালিকায় থাকা কালো টাকা বিদেশে পাচার করার অপরাধের অপরাধীরা। এমন গুজব যখন ফেসবুকে প্রচার করা হয় তখন তরুণ প্রজন্মের দেশপ্রেমিক গোষ্ঠীটি কি এসবের পাল্টা প্রচারণা সঙ্গে সঙ্গে ঐ মিথ্যাকে কাউন্টার করে করেছে? কেন করছে না তারা আমরা তা বুঝে উঠতে পারছি না। শুধু রাষ্ট্রবিরোধী, জাতি বিরোধীরাই মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাবে, আর দেশপ্রেমিক তরুণরা তার উত্তর দেবে না, তা হলে এ যুগের তরুণ প্রজন্মের রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলাই প্রমাণ হয় নাকি! আমরা যারা ’৭১-এর আগের প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছি, ফলে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে দেশকে বিজয় এনে দিয়েছিল, তারা প্রযুক্তি অনভিজ্ঞ। সুতরাং জাতির ক্রান্তিকালে বারবার চেয়েছি একটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী চৌকস তথ্য প্রযুক্তিবিদ তরুণ দল, কেন্দ্রে এবং প্রতি জেলায় এসব গুজব, মিথ্যা প্রচারণার যোগ্য যুক্তিপূর্ণ উত্তর সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করার জন্য তৈরি থাকবে। এদের অধীনে সব জেলায় জেলাভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তিবিদের দল তৈরি থাকবে, যারা এসব দেশ ও মুক্তিযুদ্ধপন্থী সরকারকে বিপদগ্রস্ত হবার আগেই ঐসব গুজবের পাল্টা উত্তর দিয়ে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজটি করবে। তাহলেই মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা পরপর প্রতিরোধহীনভাবে তাদের দেশবিরোধী কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করার এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ও কৃষকের ক্ষতি সংঘটন করে ফেলার সুযোগ পাবে না। এটি তো বারবার হতে দেয়া কোনক্রমেই যায় না। তাছাড়া, বিটিসিএল কি ঐ সময় প্রয়োজনে ‘ফেসবুক’ বন্ধ করে রাখতে পারে না? ‘ফেসবুক’ এখন তো রাষ্ট্রের শত্রুদের হাতে ‘ফেক বুক’ হয়ে উঠেছে! এটিতে যেসব মন্তব্য, ছবি থাকে শুনেছি তাতে কারও কোন লাভ হয় না। ঐ ঘরোয়া, ব্যক্তিগত মন্তব্যের জন্য কি এমন একটি সত্য-গ্রাসী মিডিয়া থাকার প্রয়োজন আছে কি? আমার তো মনে হয় মোবাইলের গেম ইত্যাদির ফলে বই পড়া, বাইরে খোলামাঠে খেলাধুলা করা, গান-বাজনা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে নতুন প্রজন্ম। এতে তো ছেলেমেয়েরা ব্যক্তিস্বার্থসর্বস্ব হয়ে উঠছে। অপরের স্বার্থ যারা বোঝে না তারা যাই হোক সরকার অথবা জাতির জন্য মঙ্গলজনক কিছু করে উঠতে পারে না। যাহোক, আমার কথা হলো ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ত্রিশ লাখেরও বেশি প্রাণের বিনিময়ে বিজয়ী হয়ে বাঙালীকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন- স্বাধীনতা উপহার দিতে পেরেছিল। অথচ ’৭৫-এ ঐ স্বাধীনতাবিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধকে পরাজিত করে আবার ক্ষমতায় বসেছিল! তরুণ প্রজন্মকে তাদের প্রাণবীজ- জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করে যেসব জঙ্গী সন্ত্রাসী, ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতিক, তাদের নীরবতার সুযোগে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে সর্বময় ক্ষমতায় আসীন হবে- এটি হতে দেয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কোনদিন পরাজিত হতে পারে না। এটা শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, সব প্রজন্মের মানুষই উন্নয়নের বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছার পর আর পেছনে ফিরে যেতে পারে না। এই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। ওরা যে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করছে, সেই অস্ত্র দিয়েই তাদের শত্রুদের পরাজিত করতে হবে। তাছাড়াও মিথ্যা প্রচারণাকে যেমন খন্ডন করতে হবে, তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের অস্থিতিশীলতা চলছে, বুয়েটে আবরার হত্যার সঙ্গে সঙ্গে যে দ্রুততার সঙ্গে হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছাত্রদের গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত দেয়া হলো, র‌্যাগিংয়ের কক্ষগুলো বন্ধ করে সিলগালা করে দেয়া হলো, এরপর বিচারাধীন আসামিদের বহিষ্কারও করা হলো, সাময়িক স্থায়ী এমন প্রেক্ষাপটে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফিরে যাওয়া উচিত ছিল বলে আমাদের মতো শিক্ষকরা মনে করে। কিন্তু বুয়েট শিক্ষার্থীরা পরিবহন খাতের অল্প বা অশিক্ষিত শ্রমিকদের মতো অযৌক্তিকভাবে নিজেদের পড়াশোনা নিজেরাই বন্ধ করে রাখল! আশ্চর্য, আমরা সত্তুরের দশকে পাকিস্তানী জান্তার বিরুদ্ধে কত মিছিল, আন্দোলন করেছি, কিন্তু নিয়মিত ক্লাসে গিয়েছি। তখন ছাত্রনেতা, ছাত্রীনেতারা ক্লাস বর্জন করতে কোনদিন নির্দেশ দেননি! বুয়েটে দীর্ঘকাল যাবত জামায়াত-বিএনপি, হিজবুত তাহরীরের একটি ঘাঁটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল এবং আছে বলে জানতে পারছি। সম্ভবত আবরার হত্যা ছাত্রলীগের বড় একটি দল গ্রেফতার হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐ ধর্মভিত্তিক দলগুলো প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীগুলোও রাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে চলেছে বলে জানতে পারছি। নতুবা ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ’- এক্ষেত্রে আমরা ক্লাস বর্জন করে দেশের একটি সুখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে রাখব, এতে আমাদের শিক্ষা-পরীক্ষা যতই ব্যাহত হলে হোক! এই যদি এদের চিন্তাধারার মান হয় তাহলে এরা বুদ্ধিদীপ্ত, মেধাবী, যুক্তিপূর্ণ চিন্তায় বিশ্বাসী নয় বলেই প্রমাণ হয়। একই কথা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। যে ভিসি ছাত্রলীগের দুই নেতা তাঁর কাছে কোটি টাকা চাঁদা দাবি করার তথ্যটি প্রধানমন্ত্রীকে নিজে টেলিফোনে অভিযোগ করেন, সেই ভিসি কেন এখন আন্দোলনের টার্গেট হন? উপরন্তু যে প্রজেক্টের অর্থ এখনও ছাড় হয়নি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে কিভাবে? এটা তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করছি। জানতে পারলাম, এই ভিসিই একমাত্র ভিসি যিনি ভোটে নির্বাচিত হয়ে পূর্ণ টার্ম শেষ করেছিলেন কোনরকম অভিযোগ ছাড়াই। সেবার দুর্নীতি না করে ভিসির দায়িত্ব পালন করতে পারলে এবার তিনি নিজে চাঁদা দাবির অভিযোগ করে এখন কি ঐ ছাত্রলীগ নামধারী আসলে তারেকের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারীদের এবং সম্মিলিত জামায়াত-বিএনপির খুন-পেট্রোল বোমা, সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগার নিধনের আদর্শে বিশ্বাসীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুক্তিপূর্ণ তথ্য ছাড়াই অহেতুক, অনাবশ্যক নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরে সরকারের যাত্রাভঙ্গ করার কাজ করছে? পরিবহনের শ্রমিকরা প্রায় নিরক্ষর। তারা ‘হত্যা’ করার মতো ঘটনা ঘটালে ফাঁসির দ-কে যে কোন দুর্ঘটনার দ- হিসেবে ধরে নিচ্ছে। সিগন্যাল অমান্য করলে কত হাজার টাকার ফাইনকে তারা ধরে নিচ্ছে এটা প্রতিদিন তাদের দিতে হবে। তাহলে তাদের মাসে কত টাকা দিতে হবে, এসব হিসাবও করছে! একেবারেই বোকার মতো কথা। প্রথমত বাস, ট্রাক যদি নির্ধারিত গতির চেয়ে অনেক বেশি গতিতে চলে তাহলেই কেবলমাত্র পথচারী মারা যায়! চালক নির্ধারিত গতিতে যেমন তারা ক্যান্টনমেন্টের ভিতর চালায় অথবা অন্য দেশের, এমনকি কলকাতায় চালকদের মতো চালালে তো মানুষ মারা যাবে না, গতি ঠিক থাকবে, সিগন্যালও মানা হবে। তখন একজন চালককেও অপরাধী গণ্য করা যাবে না। শাস্তি, ফাইন তো নিয়ম না মানলে হবে। আমরা কি চালকদের নিজেদের, যাত্রীদের এবং পথচারীদের প্রাণ বাঁচাবার জন্য গতির সীমা মানতে আগ্রহী দেখতে পারব না? এবার তরুণ প্রজন্মকে বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজকতার অবসানে বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান দিতে দেখতে চাই। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সরকার, ব্যক্তিদের যদি ওদের ভাল না লাগে তাহলে ওরা তো এদেশে বাস করার অধিকার রাখে না, এ কথা না বললেও চলে। রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী আন্দোলন করে তারা মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করছে, যা তাদের রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবেও চিহ্নিত করবে। আমরা সরকারকে ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার আইন’ প্রণয়ন করার জন্য এবং যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করবে তাদের এর আওতায় দ-িত করার বিধান প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করেছি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সুরক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে। স্মর্তব্য, ইউরোপে ‘হলোকাস্ট ডিনায়াল এ্যাক্ট’ হয়েছিল এবং আছে। সেটি ইউরোপে হিটলার পরবর্তী প্রজন্ম, যাতে হিটলার ও নাজি বাহিনী কর্তৃক জাতিগত নিধন যে হয়েছিল সেটি যেন কেউ অস্বীকার করতে না পারে সেজন্য প্রণীত হয়েছিল। ইতিহাসের স্মৃতিকে রক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে আবার হিটলার ও নাজি বাহিনীর সমর্থক বা এরকম দল তৈরি হতে না পারে। এই কথা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার আইন প্রণয়নের জন্য দাবি করতে হবে। আমার মনে হয় বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতির গৌরবজনক ইতিহাস এখনও জানে না। চেনে না এ জাতির চরম দুষ্কর্মকারী খলনায়ক ও নায়িকাকে। জানলে তাদের আচরণ এমন হতো না। এই অজ্ঞতা দূর করতে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রহরী হয়ে যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে পেঁয়াজের উচ্চমূল্যের সঙ্গে পরিবহন ধর্মঘটের একটি যোগসূত্র আছে। তাদের বুঝতে হবে জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দরে এসেছে, যা খালাস করে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে। এটাই ব্যবসায়ীরা চেয়েছিল এবং তাদের সাহায্য করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা। অথচ এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাও আছে। এ দুঃখ আমরা রাখব কোথায়? লেখক : শিক্ষাবিদ
×