ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১২ ধরনের বিপজ্জনক যান সড়কে;###; বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন না দিলেও স্থানীয় অনুমোদন পাচ্ছে;###; তিন সিটের গাড়ি কেটে ১০ যাত্রী পরিবহন;###; নিষিদ্ধ যান তৈরি নিয়ে প্রশ্ন;###;রাতারাতি বদলে যাচ্ছে গাড়ির নক্সা

ভয়ঙ্কর তিন চাকার সব যান ॥ দাবড়ে বেড়াচ্ছে সড়ক মহাসড়ক অলিগলি

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

 ভয়ঙ্কর তিন চাকার  সব যান ॥ দাবড়ে বেড়াচ্ছে সড়ক মহাসড়ক অলিগলি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ তিন চাকার যান। সামনের অংশে চালক। তার দু’পাশে দুই যাত্রী। পেছনে আরও তিনজন। সব মিলিয়ে ছয় জনের ব্যাটারিচালিত নতুন রিক্সা এখন ঢাকার অলিগলিসহ দেশের প্রায় সবখানেই দেখা যাচ্ছে। দাম প্রায় দুই লাখ টাকা। ঢাকা-গাজীপুর-ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা-নরসিংদী, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের আনাচে-কানাচে এখন এই যানের প্রাধান্য। অথচ সরকারী অনুমোদন নেই। পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএ থেকে অযান্ত্রিক যানের বৈধতা দেয়া হয় না। তবুও চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ১২ ধরনের বিপজ্জনক এমন যানবাহন চলছে সারাদেশে। দাবড়ে বেড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক-আঞ্চলিক সড়কসহ অলিগলি। এসব পরিবহন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। মৃত্যুদূত হিসেবে পরিচিত পরিবহনগুলো বিআরটিএ বৈধতা না দিলেও দিচ্ছে স্থানীয় পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ। স্থানীয় পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দিব্যি চলছে। তবে এমন পরিবহনের প্রকৃত সংখ্যা কত? সঠিক তথ্য নেই বিআরটিএ’র কাছে। বেসরকারী হিসাব বলছে ২০ লাখের বেশি। এসব পরিবহনের বেশিরভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। সাধারণ রিক্সা চালকরাই চালাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, সরকারীভাবে ইজিবাইক আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ নেই। সূত্রে জানা গেছে, খুচরা পার্টস চীন থেকে আমদানি করে বিভিন্ন কারখানায় ইজিবাইক তৈরি হচ্ছে। রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে দেশের বেশিরভাগ জেলা-উপজেলায় ইজিবাইক সরবরাহ করা হয়। তেমনি সাধারণ রিক্সায় যোগ করা হচ্ছে মোটর। লাগানো হচ্ছে বিশেষ টায়ার। কোন কোন ক্ষেত্রে রিক্সায় যুক্ত করা হচ্ছে মিশুকের টায়ারও। সাধারণ ব্রেক দিয়ে এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। তাই অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি ভয়ঙ্কর এসব পরিবহন উৎপাদন থেকে বাজারজাতসহ রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। এ নিয়ে আছে বিস্তর প্রশ্ন। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি নেই। আবার আমদানিতেও বাধা নেই। যা নিষিদ্ধ, তা আমদানি করতে দেয়া উচিত নয়। নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির মহাসচিব আশীষ কুমার দে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারীভাবে নিষিদ্ধ হলেও সারাদেশে ইজিবাইক চলছে। বলতে গেলে গোটা দেশ ছেয়ে গেছে এই পরিবহনে। তাই এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। যদি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় তবে সব বন্ধ করে দেয়া উচিত। নইলে গাড়িগুলো চলাচলের জন্য আইনী বৈধতা জরুরী বলেও মনে করেন তিনি। বিপজ্জনক পরিবহনের মধ্যে আছে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, মহেন্দ্রা, ভটভটি, ইলেকট্রিক ভ্যান ও অন্তত ছয় ধরনের রিক্সা। আবার ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় অটোরিক্সা কেটে পেছনে দু’পাশে চারটি আসন। এর পর আরও চারটি। চালকের দু’পাশে আরও দু’জন বসিয়ে বিপজ্জনকভাবে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। পুলিশের নাকের ডগায় গাড়ির নক্সা পরিবর্তন করে যাত্রী পরিবহন করা হলেও কারো যেন কিছু বলার নেই। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, নিবন্ধন অথরিটি না হলেও তিন চাকার মোটরচালিত যানবাহন স্বল্প পরিসরে স্থানীয় পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে। ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানে মোটর লাগানো। এই সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি এসব পরিবহনের স্থানীয় চাহিদা আছে। গলি-সড়কে এসব পরিবহন পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে যে কোন মূল্যে সড়ক-মহাসড়ক থেকে এসব যানবাহন উচ্ছেদ করতে হবে। মহাসড়কে উঠতে দেয়া যাবে না। ঢাকার গুলশান-বনানী-বারিধারায় পরিকল্পিতভাবে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সেভাবে দেশজুড়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তা নিশ্চিত হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন তিনি। অনুমোদনহীন যানবাহন উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে জানিয়ে বিআরটিএ পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মোহাম্মদ মাহাবুব ই রব্বানী বলেন, মহাসড়কে যেন কোনভাবেই নিষিদ্ধ যানবাহন চলতে না পারে এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক। এসব যান বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়ে বলছে, ৪২ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে গাড়ি চাপায়। বিদায়ী বছরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের এলাকায়। হাইওয়েতে ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত বাস্তবায়ন করলে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ২০১১ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। গত সপ্তাহের শেষে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল। দুর্ঘটনায় ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি চাপায়, ২৪ শতাংশ দুই বাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে, ৭ শতাংশ গাড়ি উল্টে, ৪ শতাংশ গাড়ি খাদে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বড় বড় শহর ও হাইওয়েতে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন ভ্যান, রিক্সা, নসিমন, অটোরিক্সা এর জন্য দায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন অমান্য করে ধীরগতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে। ২০১৫ সালের এক আগস্ট থেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু এসবই কাগজেকলমে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। তারপরও কোন মহাসড়ক নিষিদ্ধ যানবাহন মুক্ত নয়। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো মহাসড়কে অবাধে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল। পরিসংখ্যানও বলছে, মহাসড়কে যেসব গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই নিষিদ্ধ ঘোষিত ও স্বল্পগতির যান। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞসহ সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এর বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। তাই সবকিছুর উর্ধে ওঠে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নির্দেশ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন তারা। এতে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে। তেমনি জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মিলিয়ে মোট সড়কের পরিমাণ ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৯৬টি জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৮১২ কিলোমিটার। ১২৬টি আঞ্চলিক সড়কের দৈর্ঘ্য চার হাজার ২৪৬ কিলোমিটার। ৬৫৪টি জেলা সড়কের দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতীয় মহাসড়ক। সবখানেই রয়েছে এসব অনুমোদনহীন যানবাহনের আধিক্য। বলা হয়, বর্তমানে মফস্বল শহরগুলোতে একচেটিয়া নিষিদ্ধ যান চলছে। এরকম পরিবহনের কারণে শহরে যানজট নিয়মিত বিষয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেন, আমরা ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল অনেক আগেই নিষিদ্ধ করেছি। বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব দিয়ে এসব পরিবহন নিয়ন্ত্রণে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারাই মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি যাতে চলাচল না করে সে বিষয়টি দেখভাল করবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলতে দেয়া উচিত নয়। এসব গাড়ি মহাসড়কে উঠতে দেয়া যাবে না। উঠলেই দুর্ঘটনা ঘটবে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এসব গাড়ির বেশিরভাগের লাইসেন্স ও ফিটনেস নেই। চালকের নেই যোগ্যতা ও দক্ষতা। তিন চাকার গাড়ির গতি কম, চালকরা যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। এতেই দুর্ঘটনা ঘটে। মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলার নেপথ্যে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির ইন্ধন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। তিনি বলেন, আমরা বারবার দাবি জানানোর পর তিন চাকার গাড়ি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অনেক এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তা মানতে চান না। তাদের মতে, তিন চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ হলে স্থানীয়দের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। এই কারণ দেখিয়ে তারা এসব গাড়ি চলতে দিচ্ছেন। সোহাগ পরিবহনের মালিক ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধের পরপরই দুর্ঘটনা কমে এসেছিল। এখন অনেক মহাসড়কে আবার ওইসব গাড়ি ফিরে আসছে। এগুলো কম গতির গাড়ি, হঠাৎ করে গ্রামের রাস্তা থেকে মহাসড়কে উঠে আসছে, হঠাৎ করে ডানে বা বাঁয়ে টার্ন নিচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা হচ্ছে। প্রায় তিন লাখ বৈধ যান তিন চাকার যানবাহনের মধ্যে ফোর স্ট্রোক হিসেবে অটোরিক্সা নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে নিবন্ধিত অটোরিক্সার সংখ্যা দুই লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫। ২০ ধরনের যানবাহনের নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। অটোরিক্সার বাইরে তিন চাকার আর কোন বাহন নিবন্ধন পায় না। চলতি বছর চার নবেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত যানের সংখ্যা ৪২লাখ ১৭ হাজার ৫২৩টি। রাজধানীতে নিবন্ধিত ১৫ লাখ ছয় হাজারের বেশি যানবাহনের মধ্যে অটোরিক্সার সংখ্যা ২১ হাজার ৪৮১। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ১০ বছরে ব্যাটারি ও শ্যালো মেশিন চালিত ঝুঁকিপূর্ণ যানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। কমেছে প্যাডেল রিক্সার সংখ্যা। মফস্বল শহরে বাস যোগাযোগ বাড়লেও সংখ্যা একেবারেই কম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস যোগাযোগ না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাহনের কদর বেড়েছে। বেড়েছে এসব যানের অরাজকতা। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মহাসড়কে দ্রুত ও কম গতির যানবাহন একসঙ্গে চলছে, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। হাল্কা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন থাকবে। হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কে চলাচল উপযোগী গাড়ি মহাসড়কে চলছে না। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, মাহেন্দ্র টমটম (ইলেকট্রিক অটোরিক্সা), নছিমন এ রকম নানা ধরনের তিন চাকার বাহন চলছে। মহাসড়কে পূর্ণগতিতে চলমান একটি বড় বাস বা ট্রাকের সামান্য কোণাও যদি থ্রি-হুইলারের সঙ্গে কোনভাবে লেগে যায়, তাহলেই হাল্কা এই যানগুলো দুমড়েমুচড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এ ছাড়া মহাসড়কে চলা হিউম্যান হলার ‘মুভিং কফিন’ বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, দেশের সড়কগুলোতে লেন বাড়ানো হচ্ছে। চার লেন, আট লেন পর্যন্ত হচ্ছে। কিন্তু কোথাও স্থানীয় বা ধীরগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন হচ্ছে না। সার্ভিস লেন ও দ্রুতগতির লেন সুনির্দিষ্ট না থাকায় একই মহাসড়কে বিভিন্ন গতির যান চলছে। আজকালকার বাসগুলো অনেক উন্নত প্রযুক্তির ও গতিসম্পন্ন। সেই বাস আর নছিমনের মতো যান যদি একই মহাসড়কে চলে তাহলে সেখানে ওভারটেকিং অবধারিত। আর এ কারণে সংঘর্ষ, পেছন থেকে ছোট যানকে চাপা বা ধাক্কা দেয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে। অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা একটা বিজ্ঞান। শুধু সাধারণ কিছু ধারণা দিয়ে এটা করতে গেলে বলতে হবে দুর্ঘটনার উপকরণগুলো আপনি নিজেই তৈরি করছেন। বিজ্ঞান ছাড়া উন্নয়ন হলে রক্তক্ষরণের উন্নয়ন হবে। আপনি ঠেকাতে পারবেন না।
×