ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিক ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

মুশফিক ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানরা  ব্যর্থ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুর্বিষহ একটি টেস্ট সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ দল। সিরিজের শুরুটা ইন্দোর টেস্ট দিয়ে, তবে সেদিকে তেমন মনোযোগ ছিল না পুরো বিশ্বের। সবাই মোটামুটি আঁচ করেই ফেলেছিলেন যে দুর্বলতর বাংলাদেশ দল বিশ্বের সেরা টেস্ট দল ভারতের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে কেমন পারফর্মেন্স করবে। তাছাড়া আবার বাংলাদেশ দলে নেই বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও নির্ভরযোগ্য, অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। চিন্তার সঙ্গেই ফলাফল মিলে গেছে। তবে ইডেন টেস্টের দিকে সারাবিশ্বেরই ছিল মনোযোগ। প্রথমবার উপমহাদেশে দিবারাত্রির টেস্ট, গোলাপি বলে খেলা হবে- তাই কলকাতা সেজেছিল গোলাপি রংয়ের আধিক্যে বর্ণিল রংয়ে। ছিল নানাবিধ বিস্ময়কর আয়োজন, দর্শকরাও টেস্ট ক্রিকেট দেখার জন্য ইডেন গার্ডেন্সে স্রোতের মতো এসেছেন। কিন্তু সেখানে আরও অসহনীয় যন্ত্রণা সঙ্গী হয়েছে। বাংলাদেশ দলের জন্য কষ্টের রং হয়ে গেছে ‘গোলাপি’। কারণ দুই টেস্টে যা হয়েছে তা শুধু বিষাদে ভরা হাহাকার। দুই ম্যাচের সিরিজে শুধু মুশফিকুর রহিম ছিলেন উজ্জ¦ল। ২ হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি করেন ১৮১ রান। বাকি ব্যাটসম্যানদের পারফর্মেন্স বলার মতো নয়। তবে বাংলাদেশের পেসাররাও ভারতীয়দের সঙ্গে প্রায় সমানতালে পারফর্ম করে গেছেন। এরপরও দুই ম্যাচের সিরিজ শেষে ব্যাট-বলের নৈপুণ্যে সেরা ভারতীয়রা। প্রথম টেস্টে কোনকিছুই স্বস্তিদায়ক ছিল না। ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে একেবারেই বিবর্ণ, কোনঠাসা আর অসহায় ছিল পুরো বাংলাদেশ দল। শুধু মুশফিক প্রথম ইনিংসে ৪৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে ভারতের বিপক্ষে তার পূর্বের সেরা সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু এই দুটি ইনিংসেই তিনি একাধিকবার বেঁচে গেছেন আউট হওয়া থেকে। তাই তার ইনিংসগুলোও ছিল কাঁটাবিদ্ধ। আর আবু জায়েদ রাহী ভারত একমাত্র যে ইনিংসটি ব্যাট করেছিল তাতে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। বাকি বোলাররা একেবারেই নাজেহাল হয়েছেন। দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিক প্রথম ইনিংসে ০ রানেই সাজঘরে ফেরেন। অধিনায়ক মুমিনুল উভয় ইনিংসে ০ রানে সাজঘরে ফিরে বিরল এক লজ্জার রেকর্ড গড়ে বসেন। অধিনায়ক হিসেবে উভয় ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে শূন্য অর্থাৎ ‘পেয়ার’ পাওয়া একমাত্র ক্রিকেটার তিনি। দিবারাত্রির টেস্টে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে ‘পেয়ার’ পেয়েছেন মুমিনুল। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে এই লজ্জার শিকার হন তিনি। ইডেনে প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতায় দলই মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুটা হয়েছিল ধস দিয়ে। শেষ পর্যন্ত তা ঠেকিয়ে দেন মুশফিক। এবার দুর্বার ভারতীয় পেসারদের মুখে বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে ঝড় তোলেন তিনি, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামিকে। মাত্র ৫৪ বলে ফিফটির পর শেষ পর্যন্ত ৯৬ বলে ১৩ চারে ৭৪ রান করেন তিনি। দুই টেস্টে আর কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। আর ভারতীয় ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল সেখানে প্রথম টেস্টে ২৪৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। ইডেনে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। মুশফিকের এমন ব্যাটিং করার পরও তিনি কেন ৫ নম্বর পজিশনে নেমেছেন এটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই প্রশ্নটি নাড়া দিয়েছে জনপ্রিয় ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলেকে। তিনি বলেন, ‘মুশফিকুর রহিম হয়তো মিসবাহর মতো। সেও মনে করে ৫ নম্বরই তারজন্য সেরা। তবে দলের জন্য কি সেরা এটি?’ মুশফিক প্রায় নিয়মিতই টেস্ট ক্রিকেটে ৫/৬ নম্বরে ব্যাটিং করেন। তবে এবার সাকিব ও তামিম না থাকায় অভিজ্ঞতার বিচারে তাকে আরও আগেই নামানো উচিত ছিল বলে মনে করেন হার্শা। তাছাড়া এবার উইকেটরক্ষক হিসেবে বাড়তি দায়িত্বটা পালন করেননি মুশফিক, খেলেছেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাই অভিজ্ঞতার বিচারে সাকিবের অবর্তমানে তাকেই চার নম্বরে খেলাটাই যৌক্তিক ছিল বলে দাবি হার্শার। যদিও মুশফিক নিজেই অনেকবার বলেছেন যে তিনি ৫ নম্বরে ব্যাট করতে বেশি পছন্দ করেন। আর এভাবেই তিনি ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বাধিক ৫১৮ রান করেছেন। ৬ টেস্টের ১১ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে তিনি এ রান করেন ৫১.৮০ গড়ে। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সর্বাধিক ব্যাটিং গড় মুমিনুলের, তিনিই ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে ব্যর্থ। তিনি ভারতের বিপক্ষে ৪ টেস্টের ৭ ইনিংসে মাত্র ১৬.১৪ গড়ে ১১৩ রান করেছেন। দুর্দান্ত ফর্মে থেকে যখন টানা ১০ টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছিলেন, তখন একাদশ টেস্টে গিয়ে ভারতের বিপক্ষে কোন ফিফটি করতে পারেননি তিনি। ফলে বিশ্বরেকর্ড হয়নি তার। ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেও উভয় টেস্টে পেসাররাই দাপট দেখিয়েছেন। উভয় দলের স্পিনাররা তেমন সুবিধা আদায় করতে পারেননি। ১২ উইকেট নিয়ে ভারতের ইশান্ত শর্মা ও উমেশ যাদব সেরা। তারা অবশ্য ৪ ইনিংস বোলিং করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সেরা আবু জায়েদ রাহী মাত্র ২ ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে চার নম্বরে আছেন।
×