ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রফিকুল ইসলাম

রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের হাওড়

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের হাওড়

বিএনপির ‘হাওয়াযুগ’ পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ প্রবেশ করেছে ‘স্বর্ণযুগে’। দৃশ্যমান উন্নয়নের ঢেউ, দেশের মোট ভূ-খ-ের এক-পঞ্চমাংশ দ্বীপসদৃশ দুর্গমগিরি জনবিচ্ছিন্ন সঙ্গীন বিশাল হাওড়াঞ্চলে লাগতে শুরু করলেও, মোট জনসংখ্যার এক-দশমাংশ জনগোষ্ঠী হাওড়বাসীদের ক্ষেত্রে সর্বাংশে এ পরিসংখ্যান ও উন্নয়নসূচক খাটে না। হাওড় ॥ সম্ভাবনাময় অঞ্চল ব্লু-ইকোনমিক অর্থাৎ সুনীল অর্থনীতির উর্বরক্ষেত্র ও মিঠাপানির আঁধার বিস্তীর্ণ হাওড় অঞ্চল। কৃষিজ ও প্রাণিজ সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল এটি। প্রায় ১২ হাজার বর্গমাইল ভূ-খ-ের প্রায় ৩০ লাখ একর আবাদযোগ্য জমি, নদী, জলমহাল ও হাওরের বিশাল জলরাশি এবং দু’কোটি মানুষ এখানকার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। হাওড়ের মাটি, পানি এবং মানব সম্পদÑ এই তিন সম্পদের সমন্বিত ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ, আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি। কৃষিজ উৎপাদনে ও কৃষিজ দ্রব্যাদির শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাসহ অতিরিক্ত মৎস্য ও মৎস্যজাত সামগ্রী রফতানি এবং বিভিন্ন খামার, উপযোগী শিল্প-প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে এক উজ্জ¦ল সম্ভাবনাময় এলাকা। সরকারের দক্ষ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সঙ্গে লাগসই প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি ও মৎস্য বিষয়ক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো গেলে শুধু ধান ও মৎস্য সেক্টর থেকেই দেশের মোট খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ মেটানো সম্ভব হতে পারে। গবাদি পশুর উন্নয়নসহ কৃষিজ ও প্রাণিজ সম্পদের ব্যাপক পরিধির দৃশ্য ও অদৃশ্যমান সমস্ত খাত থেকেই জাতীয় সার্বিক উন্নয়নে সরকারী যে কোন ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে ব্যয়ের তুলনায় আয়ের বিস্তর সুযোগ রয়েছে এখানে। কিন্তু এ জনপদটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ন্যায় এখনও পশ্চাৎপদ ও সুবিধা বঞ্চিত। অধিকন্তু তিরস্কার করা হয়, ‘ভাইট্টা গাবর উত্তইর‌্যা ভূত’ বলে। হাওড় অঞ্চলের বিস্তৃতি ইতিহাস ঐতিহ্যম-িত দেশের উত্তর-পূর্বাংশের এক-পঞ্চমাংশ ভূ-খ- কিশোরগঞ্জ জেলাসহ সিলেট, সুনামাগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় ৩২টি উপজেলা হাওড় বা ভাটি অঞ্চল নামে খ্যাত। বর্তমানে হাওড় অঞ্চলে প্রায় দু’কোটি লোকের বসবাসÑ যা মোট জনসংখ্যার এক- দশমাংশ। হাওড়ের ঋতুচক্র, পরিবেশ ও বেকারত্ব ঋতু বৈচিত্র্যময় হাওড়াঞ্চল। দেশে বারো মাসে ছয় ঋতু হলেও এখানে দুই মৌসুম-১. শুষ্ক মৌসুম এবং ২. বর্ষা মৌসুম (বাইর‌্যামাস)। আর কৃষি ঋতু দুটি- রবি ও বোরো। তবে বোরোই প্রধান। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ‘অদিন-সুদিন’ বারো মাসই হাওড়বাসীর কাটে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে। এলাকাটি বছরের অর্ধেক সময়ই পানিতে ডুবে থাকে। এ সময় মৎস্য আহরণ ছাড়া কোন কাজ থাকে না। গড়ে উঠেনি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও। হাওড়ে একেক মৌসুমে একেক রকম কাজের বা লোকের চাহিদা থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিশেষ ধরনের কাজের কোন সুযোগ থাকে না। এছাড়া, কৃষিক্ষেত্রে বেকারত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যাও। হাওড় অঞ্চলের সমস্যাবলী হাওড় বাংলাদেশের একটি অনন্য ভূ-প্রাকৃতিক জলাভূমি। ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হাওড়াঞ্চল একটি অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এখানকার ভিন্নধর্মী সমস্যার মধ্যে রয়েছে বর্ষাকালে ভাঙনযজ্ঞে গ্রাম ও জনবসতি উচ্ছেদ। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে ভরাটজনিত কারণে অকাল বা আগাম বন্যায় ফসলহানি প্রধান সমস্যা। হালে মরুকরণের ফলে মৎস্য উৎপাদন ও আহরণ, পরিবহন, ব্যবস্যা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে নৌ-যোগাযোগ এবং কৃষিতে সেচ সঙ্কট নতুন মাত্রা পেয়েছে। এছাড়া শীতকালে অতি শৈত্য বা কম শৈত্য পড়া, গ্রীষ্মকালে অতি উচ্চ তাপমাত্রা, অতি বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, খরা তো রয়েছেই। ১। শুষ্ক মৌসুম : এক সময় উদার প্রকৃতির জন্য ফসল ফলানোর শুষ্ক মৌসুমের এই ছয় মাসকে ‘সুদিন’ বলা হলেও কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দরুন হাওড়বাসীর সেই ‘সুদিন’ আর নেই। মরুকরণের ফলে নদীবেষ্টিত হাওড়াঞ্চলের নদীগুলো মৃত ও মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভূমিধস, বর্ষায় হাওড়ের বাড়ি ভাঙন, পাহাড়ি পলিযুক্ত ঘোলা পানি নদীর তলদেশে জমা হয় কিউমুলেটিভ বা ক্রমবর্ধিষ্ণু হারে। এতে ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে একদিকে প্রাকবর্ষা মৌসুুমে অল্প বৃষ্টিতেই নদীর পাড় উপচিয়ে বোরো ধান বিনষ্ট করে। অন্যদিকে বর্ষার পর হাওড় থেকে পানি বের হতে বেশি সময় লাগে এবং সময় মতো ধান রোপণ সম্ভব হয় না। ফলে ধান কাটার সময় পিছিয়ে যায়- যা মাঠের ধানকে আগাম বন্যার হুমকির সম্মুখীন করে। এছাড়া নদীর পাড় উপচানোর সময় নদীর পাড় ভেঙে নতুন ঢালার (খাল) সৃষ্টি হয় প্রতিবছর। এতে ধানি জমিতে বালি পড়ে চাষের অযোগ্য করে তোলে। অত্যন্ত উর্বর একফসলি এই হাওড়াঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ একর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে বলে জানা যায়। উৎপাদিত ধান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ ধান দেশের অন্যত্র চালান হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সেচ কাজে ব্যবহৃত এসব পানি প্রাপ্তির একমাত্র উৎস নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা-নালা, পুকুর, হাওড়, জলাশয় প্রভৃতি খনন বা সংস্কারের অভাবে এবং নদীতে ¯্রােত না থাকায় পলি পড়ে নাব্য হ্রাস পেয়েছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে সেচের অভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার একর জমি পতিত থেকে লাখ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হারাচ্ছে। অথচ এক সময় এসব খর¯্রােতা নদীতে দিনরাত চলাচল করত পালতোলা অসংখ্য সওদাগরির নৌকা, স্টিমার, কার্গো ও লঞ্চ। কলকাতার সঙ্গেও ছিল এখানকার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য। অন্যদিকে মরুকরণ বা ভরাটজনিত কারণে হাওড়ের অপর সম্পদ মাছ চাষ ও উৎপাদন আগের মতো নেই। অর্থাৎ, মাছের দেশে মাছ নেই। নদ-নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও অবাধ বিচরণের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে মাছের জীববৈচিত্র্য ও স্থায়ী উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সে সঙ্গে ইজারা প্রথার মাধ্যমে রাজস্বভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় মাছের বংশও বিনাশ হচ্ছে। অথচ মাছ আমাদের রুপালি সম্পদ এবং প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস। অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। আর মাছ চাষের ক্ষেত্রে এদেশের অবস্থান পঞ্চম। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামীতে প্রথম স্থান লাভ করার। এ ক্ষেত্রে, হাওড়ের মাটি ও পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী। এখানে রয়েছে নদী-নালা, খাল-বিল-ঝিল, ডোবা, হাওড়, পুকুর, দীঘি, প্লাবনভূমি, মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়-জলমহাল। উপরন্তু বর্ষায় বিস্তীর্ণ হাওড়ের বিশাল জলরাশি। তা সুষ্ঠু মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুতের ভিত্তিতে সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে এবং সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের আর্থিক ও কারিগরি সাহায্যে যদি প্রাপ্তজলাশয়গুলো মৎস্য-সম্পদ উৎপাদনে ও উন্নয়নের কাজে লাগানো যায়, তবে উৎপাদিত মৎস্য বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা, সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রভূত ভূমিকা রাখবে এবং তা রফতানিতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। সৃষ্টি হবে হাওড়ের লাখ লাখ বেকার জনগোষ্ঠীর আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ। ২। বর্ষা মৌসুম/বাইর‌্যামাস : পানি ও ভাঙনের দেশ হাওড়াঞ্চল। হাওড়ের মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে। নদী প্রবাহের অস্বাভাবিকতার কারণে ফসল নষ্ট হবার পাশাপাশি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় বিস্তৃত জনপদ। হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে ভয়াবহ ভাঙন অধিবাসীদের আতঙ্কিত অবস্থায় রাখে। বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন ছাড়াও গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। বাস্তু”্যুত হয়, হাজার হাজার মানুষ। ভারতের মেঘালয় পাহাড়পুঞ্জসহ পাহাড়ি অঞ্চলের সমস্ত পানি হাওরের ভূমিতে নেমে আসে। এ পানি ৬ মাস স্থায়িত্ব লাভ করে। পরে বিভিন্ন নদী বিশেষ করে মেঘনা নদী দিয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। চিহ্ন রেখে যায় ধংসস্তূপের। এই সময়কালকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয়, ‘বাইর‌্যামাস বা অদিন’। বর্ষাকালে এলাকাটি ১০ থেকে ২০ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে, পুরো আশ্বিন মাস পর্যন্ত সমস্ত হাওড়াঞ্চলে চলে সীমাহীন পানির রাজত্ব। মাটি ফেলে সমতল ভূমি থেকে ১০-১২ ফুট উঁচু পর্বতের ন্যায় নির্মিত, বর্ষায় জনবিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে মনে হয় দ্বীপের সমষ্টি। পরিণত হয় ভাসমান জনপদে। হাওড়ের অধিবাসীর ভাঙা-গড়ার খেলায় আয়ের সিংহভাগ অর্থই বাসস্থানের পেছনে ব্যয় করে দিনদিন নিঃস্ব হতে হতে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পরিবার উজানে চলে যাচ্ছে কিংবা স্বদেশীয় উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হাওড়ের ক্রমবর্ধমান ভাঙনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের বিস্তীর্ণ হাওড়াঞ্চল জনমানবশূন্য জলাভূমিতে পরিণত হবার আশঙ্কা রয়েছে বলে এ্যাসেসমেন্ট অফ সি লেভেল অন বাংলাদেশ কোস্ট থ্রু ট্রেন্ড এ্যানালাইসিস অনুযায়ী জানা যায়। ৩। হাওড়ের শিক্ষা, যোগাযোগ ও অর্থনীতি : হাওড়াঞ্চলের শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্ষাকালে অনেক শিক্ষার্থী ঢেউ-বাণ বা আফালের কারণে আবার কেউ কেউ স্কুলে যেতে নৌকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে মাসে ১০০/১৫০ টাকা ভাড়া না দিতে পারার অক্ষমতায় এবং বর্ষাগমনে ও বর্ষাশেষে পানি আসা-নামার প্রাক্কালে নৌ ও হাঁটা কোন যোগাযোগই সম্ভব না হওয়ায় স্কুলে গড়হাজির থাকে। শুষ্ক মৌসুমে ধান রোপণ ও কাটার সময় খোরাকি জোগানোর জন্য বাবার সঙ্গে কাজের যোগালি দিতে গিয়েও স্কুল কামাই করে। স্কুলের ন্যূনতম সেশন বা ভর্তি ফি, বেতন, ও পরীক্ষার ফি পরিশোধে অপারগ কেউ কেউ অর্ধ-বার্ষিক/প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বার্ষিক পরীক্ষাও। যোগাযোগের অভাবে হাওড়াঞ্চল দেশের মূল ভূ-খ- থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দুর্গম জনপদের নাম। হাওড় জনপদের অধিবাসীদের বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আধুনিক নৌচলাচল ব্যবস্থা হতে পারে এখানকার প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু নদীর পানির ধারণ ক্ষমতা না থাকায়, অনেকাংশে মেরুকরণের ফলে নৌপথে, লঞ্চ, কার্গো, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, বাণিজ্যজাহাজ পণ্যসামগ্রী বহন ও যাত্রী আনা-নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে যোগাযোগ সংযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না এক জনপদ থেকে আরেক জনপদে এবং বিভিন্ন হাট-বাজার ও নৌ-বন্দরের সঙ্গে। অন্যদিকে শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রসারণ, বিশ্বায়নের প্রয়োজনে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে; এছাড়া শুষ্ক এবং বর্ষা মৌসুমের জন্য সড়ক যোগাযোগ স্থাপনও অতীব জরুরী। এক্ষেত্রে সমতলের মতো মাটির তৈরি সড়কবাঁধ বা রাস্তা নয়, তৈরি করতে হবে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে হাওরের কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং আধুনিক তথা ভবিষ্যত প্রজন্মোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যাতে বর্ষাকালে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত না হয়। পাশাপাশি হাওড়ের ইকোলজি বা বাস্তুসংস্থান ঠিক থাকে, স্বাস্থ্যকর বায়োডাইভারসিটি বা জীববৈচিত্র্য বজায় থাকে, জলজ প্রাণি ও মাছের প্রজনন এলাকা এবং প্রাকৃতিক ধান ও মৎস্য সম্পদের বৃহত্তর উৎস হাওড় টিকে থাকে। এতে ফ্লাইওভার বা উড়ালসেতুর কথা আস্থায় আনা যেতে পারে। কেননা অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ ও বাঁধ নদী, হাওড় ও বিলকে মেরে ফেলে। এ কথারই আভাস মিলেছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের মুখে সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ সফরের সময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফসলের জমি যেন নষ্ট না হয়, সেভাবেই গ্রহণ করা হবে কর্মসূচী। এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের পানি গাড়ো, খাসিয়া ও জৈয়ান্তিয়া পাহাড় এলাকার ছোটবড় নদীসমূহের প্রবাহ এবং হাওড়াঞ্চলের অভ্যন্তরীণ মৌসুমী বৃষ্টিপাতের পানি হাওড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা, সুরমা, বৌলাই, ধনু, কালনি, ঘোড়াউত্রার সম্মিলিত পানি প্রবাহ মেঘনা নামে ভৈরব দিয়ে এবং ত্রিপুরার পাহাড় এলাকায় সৃষ্ট কতিপয় নদীর পানি মনু, খোয়াই ও তিতাস হয়ে মেঘানায় পতিত হয়। এই দু’টি ধারার সম্মিলিত পানি চাঁদপুরের সন্নিকটে পদ্মার সম্মিলিত পানি প্রবাহের সঙ্গে মিশে মেঘনা নামে পতিত হয় বঙ্গোপসাগরে। এছাড়া, ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ভাটিবাংলায় তথা সমগ্র হাওড়াঞ্চলে। অন্যদিকে ভারতের মেঘালয় পাহাড়পুঞ্জের ওপর সংঘটিত প্রায় সকল বৃষ্টিপাতের ড্রেনেজ পথ হলো এই হাওড়, বিভিন্ন ছোট বড় ছড়া-নদী। এই সমস্ত পানি দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে নামার সময় নদীর পাড় উপচিয়ে হাওড়ের সমস্ত ফসল অকালেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কৃষকের স্বপ্ন ভেসে যায় হাওড়ের জলে। কৃষি ক্ষেত্রে এ ঝুঁকির প্রভাব যে শুধু কৃষক ও কৃষি খাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে তাই নয়, কৃষি উৎপাদনের শ্লথ গতি ও লোকসানের মাত্রা এবং দরপতন সমগ্র অর্থনীতিতেই এর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। হাওড় অঞ্চল রক্ষা ও উন্নয়নে প্রস্তাবনা সরকারপ্রধানের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণে কতিপয় প্রস্তাব নিচে তুলে ধরা হলো : ১. দুর্যোগ মোকাবেলা, হাওড় রক্ষা ও হাওড়ের মানুষের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতীয় পর্যায়ে ‘হাওড় উন্নয়য়ন বোর্ড’ পুনরুজ্জীবিত করে হাওড়বাসীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষ বিবেচনায় এনে বিশেষ কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করতে পৃথক ‘হাওড় মন্ত্রণালয়’ গঠন করা অতীব জরুরী। মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) জাতীয় সংসদের সাংসদ থাকাকালীন সর্বপ্রথম বিগত ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে সুচিন্তিত এ দাবি পেশ করেছিলেন- যা আজ সময়েরও দাবি। ২. হাওড় অধ্যুষিত ৩২টি উপজেলার সংসদীয় আসনের মাননীয় সাংসদগণ জাতীয় সংসদের বিশেষ কোন অধিবেশনে উল্লিখিত প্রস্তাবনার বিষয়ে জোরালো আলোকপাতের প্রয়াস নেয়া। এতে মহামান্যের জ্যেষ্ঠপুত্র কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) তিন বারের নির্বাচিত সাংসদ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং ডাক-টেলি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ কৃষক লীগের উপদেষ্টা প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নেতৃত্ব দিতে পারেন। ৩. একটা জাতীয় সুবিন্যস্ত হাওড় উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা। এর মাধ্যমে হাওড়ের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। স্বয়ংসম্পন্ন কৃষি ও মৎস্য ব্যবস্থাপনার ওপরই নির্ভর করছে হাওড়ের উন্নয়ন। ৪. নদীর নাব্যয় গতিশীলতা আনতে এবং অকাল বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিকল্পনা নিয়ে সরকারী শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনার আওতায় এনে মিঠা পানির উৎস ভরাট নদী-নালা, খাল-বিল-ঝিল, হাওড়, পুকুর, দীঘি, জলাশয় ও জলমহাল পুনঃখনন করা, বাঁধ/বেড়িবাঁধ, জলাধার, সøুইসগেট, রেগুলেটর ব্যারেজ ইত্যাদি নির্মাণ করা এবং নদী সোজাকরণ (লুপকাট) অপরিহার্য। এক্ষেত্রে ড্রেজিং এর মাটি দিয়ে ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া বা বিধ্বস্ত গ্রামগুলো ভরাট ও গৃহনির্মাণ করে পুনর্বাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। ৫. হাওড়াঞ্চলে আফালের ফলে সৃষ্ট ভূমিক্ষয়রোধ ও ভূমি পুনরুদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। ৬. বসরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে হাওড়ের ভূমিক্ষয় ও ভাঙনরোধে তথা নদীর তীরবর্তী গ্রাম, নদী ভাঙন ও বর্ষার উত্তাল ঢেউ-বাণ বা আফাল থেকে স্থায়ী সুরক্ষার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে রিটেইনিং ওয়াল ও পাইলিং রিটেইনিং ওয়াল দেয়া। ৭. হাওড়ের প্রতিটি গ্রাম ও পাড়ায় ড্রেজারের মাটি ফেলে প্রশস্ত করে পাকা প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরি করা। এতে বারো মাসই বাণিজ্যিক ও পারিবারিক উদ্যান ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ৮. অধিক ব্যয়বহুল হলেও পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে শহরের সঙ্গে হাওড়ের ‘অদিন-সুদিন’ বারো মাসই নৌ ও সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা। এতে বিভিন্ন খামার, কুটির শিল্প ও শিল্পকারখানা স্থাপন, কৃষি উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়ন, কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী বাজারজাতকরণ, যাতায়াত ও পরিবহন, বনজ সম্পদের সংগ্রহ ইত্যাদি ত্বরান্বিত হবে এবং নতুন নতুন ব্যবসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ ভারত ও ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু বেগবান হবে। ৯. হাওড়াঞ্চলে দুটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল নির্ধারণ করা এবং সমবায় আন্দোলন গড়ে তোলা। সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি-উন্নয়ন, কুটিরশিল্প স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা সুযোগ সৃষ্টি করা। ১০. কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রের আধুনিকায়নে হাওড়াঞ্চলের ভূমিব্যবস্থাপনা এবং কৃষি ও মৎস্যনীতি ঘোষণা করে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি-যন্ত্রপাতির ব্যবহার সুলভ ও সম্প্রসারিত করা। ১১. কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। ১২. ব্যাপক পরিমাণে হাওড়ে সরকারী খাদ্যগুদামে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে বোরো ধান সংগ্রহ করা। ১৩. ‘কৃষিবীমা’ চালু করা এবং বর্ষাশেষে কৃষকদের মাঝে বিনা/স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ ও পর্যাপ্ত কৃষিঋণের ব্যবস্থা করা। ১৪. মৎস্য উৎপাদন টেকসই করতে নতুন উদ্যোক্তাদের কমসুদে ঋণ দেয়া। ১৫. অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে হাওড়সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ ও শস্যের এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা। ১৬. প্রতিটি গ্রামে ও পাড়ায় এবং সেচ প্রকল্পে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা। এতে সেচ খরচ কমবে এবং হাওড়বাসী আধুনিক জীবন লাভ করবে। ১৭. হাওড় ও ফসলি মাঠ থেকে পানি নিষ্কাশন এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পর্যাপ্ত স্লুইসগেট ও কালভার্ট নির্মাণ করা। ১৮. কৃষকের কাটা ধান ও শস্য-পণ্যসামগ্রী পরিবহনকল্পে ফসলি মাঠাভ্যন্তর দিয়ে পাকা রাস্তা তৈরি করা। ১৯. বন্যা কবলিত ধানের পচনরোধে হাওড়ের বিভিন্ন উঁচু স্থানে পাকা মাড়াই কেন্দ্র তৈরি করা এবং ধান শুকানো ও উড়ানোর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা- যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুহূর্তে অনায়াসে ধান তোলা যায়। ২০. আবাদী জমির পাশাপাশি সমস্ত অনাবাদী জমিকে আবাদের আওতায় আনা এবং সবজি ফসলে গুরুত্ব দিয়ে এক ফসলি হাওড়াঞ্চলকে বহুমুখী উৎপাদনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। এতে দেশের মোট খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ মেটানো সম্ভব হবে। ২১. হাওড়াঞ্চলের ফিশারীগুলোর লীজব্যবস্থা বাতিলপূর্বক প্রভাবশালী ওয়াটার-লর্ডদের বা ইজারাদারদের কব্জামুক্ত করে প্রকৃত জেলে ও সাধারণদের মাঝে উম্মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে উপজেলাগুলোর মৎস্য বিভাগ নদী, ফিশারী, জলাশয়গুলো এবং বর্ষাকালে হাওড়ের জলরাশিতে মাছের পোনা ছাড়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিলে মৎস্য মজুদ ও উৎপাদন বাড়াতে ফলদায়ক হবে। ২২. ব্যক্তি উদ্যোগে হাওড়, পুকুর, দীঘি, বিল-ঝিল ও জলাশয়ে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা গেলে দেশের আমিষ চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করার ব্যবস্থাদি গৃহীত হলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। ২৩. বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ঋণ সহায়তায় উপকূলীয় অঞ্চলে গৃহীত ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন ফিশারীজ প্রকল্প’- এর ন্যায় ব্লু ইকোনমির সুফল পেতে হাওড়াঞ্চলেও একটি পৃথক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা। ২৪. আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে কার্যকরী ব্যাপক ‘ওয়ার্কস্ প্রোগ্রাম’ চালু করা। ২৫.শক্তিশালী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হাওড়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয় আয় বণ্টনের ব্যবস্থা করা। ২৬. আন্তঃযোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে হাওড়বাসীদের অংশীদার করা। এছাড়া অধিক ফসল ফলনের লক্ষ্যে লাগসই প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি বিষয়ক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার কৌশলের সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করার প্রয়াস নেয়া। ২৭. বেসরকারী এবং চাষীদের মাধ্যমে সমন্বিত ধান ক্ষেতে মাছ চাষ প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নেয়া। ২৮. কৃষি বনায়ন ও সামাজিক বনায়নসহ হাওড়ে বনায়নের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে তা কার্যকর করা। ২৯. এরিয়াল সার্ভেভিত্তিক কৃষি ফসল উৎপাদনে শস্যক্রম ও শস্য আবর্তন এবং ফলদ বৃক্ষরোপণ এলাকা নির্ধারণপূর্বক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। ৩০. ওয়ার্ড/ গ্রাম পর্যায়ে বন্যাশ্রয় কেন্দ্র এবং আবোড়া (যা ডুবে না) কবরস্থান নির্মাণ করা। ৩১. হাওড়াঞ্চলে তেল, গ্যাস, কয়লা, পাথর, বালিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধানপূর্বক এর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা। ৩২. হাওড়ে পানি দূষণরোধে ও জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা। ৩৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ন্যায় হাওড়াঞ্চলের পরিবেশ ও জলবায়ু, শিক্ষা, কৃষি সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবন-জীবিকা, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদির বর্ণনা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা। ৩৪.কয়েক বছর মেয়াদি বিশেষ ‘কৃষি সারচার্য’ চালু করা। যা কৃষিতে বিভিন্ন স্থায়ী উন্নয়নমুখী কার্যক্রমে ব্যয় করতে হবে। ৩৫. কৃষি অফিস উপজেলা থেকে সম্প্রসারণপূর্বক প্রতি উপজেলাকে বেশ কয়েকটি অঞ্চল ও উপঅঞ্চলে বিভক্ত করা। দুর্বল উৎপাদনশীল এলাকাগুলো উপঅঞ্চল হবে। প্রতিটি অঞ্চলে গরু-ছাগল ও পোল্ট্রির সরকারী খামার গড়ে তোলা, যা খাদ্যের নিরাপত্তার অংশ বাড়াবে এবং জৈব কৃষিকে এগিয়ে নেবে। ৩৬. হাওড়াঞ্চলের সমাজ কাঠামোর সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় করে উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পথ উম্মুক্ত করে পর্যাপ্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। চলবে... লেখক : সাংবাদিক [email protected]
×