ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কসবায় আহতদের মধ্যে ১৮ জনের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

  কসবায় আহতদের মধ্যে ১৮ জনের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে শঙ্কা

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ১৮ জন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। এদের কারও দুই পা বিছিন্ন হয়ে গেছে, কারও হাত ভেঙ্গে গেছে, কারও চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে। এখনও এদের কেউ কেউ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, পঙ্গু হাসপাতালে, সিএমএইচ ও বারডেমে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের বেডে কষ্ট ও যন্ত্রণায় এখন ওরা ছটফট করছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মহিন মিয়া সোহেলকে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাত ৩টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে ট্রেন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে মহিন মিয়ার দুই বছর বয়সী মেয়ে সোহার মৃত্যু হয়। এতে তার স্ত্রী নাজমা বেগম, সাত বছরের ছেলে নাফিজ এবং শাশুড়ি আহত হন। অবুঝ শিশুর মৃত্যুর দাফন অনুষ্ঠানেও তারা থাকতে পারেনি। মেয়ে সোহার শোকে অসুস্থ মা নাজমা বেগম পাথর হয়ে গেছে। হাসপাতালের বেডে কষ্ট ও যন্ত্রণায় নাজমা মেয়ে সোহার কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। কেউ তাকে সান্ত¡না দিতে গেলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। আহতদের পরিবার জানান মহিন মিয়া, সোহেল, নাজমা ও ছেলে নাফিজ পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শাশুড়ি আছেন সিএমএইচে। পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোহেলের দুই পা ভেঙ্গে গেছে। পঙ্গু হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হলেও গত দু’দিন ধরে তার পেট ফুলে যাচ্ছে। হয়ত তার লিভারে আগে থেকেই সমস্যা ছিল অথবা দুর্ঘটনায় সে চাপা ব্যথা পেয়েছে। তিনি জানান, তাই শনিবার আমরা তাকে ঢামেকে পাঠিয়েছি তার প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল টেস্ট করার জন্য। আমরা নিজেরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। ওই দুর্ঘটনায় আহত মোট ১৩ জন এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ইমন (১৭) ও তার দাদি সুরাইয়া খাতুনের (৬৫) দুই পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইমনের বড় বোন সুমি (১৯) ও তার ছোট বোন মীমের (৮) পা ভেঙ্গে গেছে। ঘটনার পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি করা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় ইমনের মা জাহিদা খাতুন মারা গেছে। তাদের পরিবারের আরেক সদস্য সুমনকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ইমনের ফুফু হাসিনা খাতুন জানান, এই ঘটনার মাত্র পাঁচদিন আগে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন তার ভাই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মুসলিম মিয়া। গ্রামের বাড়িতে ছিল ভাই মুসলিম মিয়ার চেহলাম। তিনি জানান, শ্রীমঙ্গলের গাজীপুর গ্রামের বাড়িতে ভাই মুসলিম মিয়ার চেহলাম শেষে তার স্ত্রী জাহিদা খাতুন ও ছেলে ইমন, মেয়ে সুমি, মীম ও মা সুরাইয়া খাতুন সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন। হাসিনা খাতুন জানান, রাত পৌনে ৩টার দিকে কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ভাবি জাহেদার। আহত হন ভাবির বড় ছেলে ইমন ও তার দাদি সুরাইয়া খাতুনের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাদের মেয়ে কলেজছাত্রী সোমা আক্তার সুমি ও মীমের পা ভেঙ্গে গেছে। কথা হয়, তার কুয়েত প্রবাসী বাবা বিল্লাল হোসেন বেপারির সঙ্গেও। মঙ্গলবারের (১২ নবেম্বর) ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়েই তিনি বুধবার (১৩ নবেম্বর) ছুটে এসেছেন দেশে। কিন্তু যে মেয়েকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন বিল্লাল, তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরেও সেই মেয়েকে শেষবারের জন্য দেখতে পাননি তিনি। এর আগেই দাফন হয়ে গেছে ফারজানার। নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি ॥ কসবার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। তিন কার্যদিবস অনুযায়ী রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাকের হোসেন চৌধুরী ও তূর্ণা নিশীথার লোকো মাস্টার, সহকারী লোকো মাস্টারের সঙ্গে এখনও কথা বলতে না পারায় তদন্ত কাজে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মিতু মরিয়ম। উল্লেখ্য, ১২ নবেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত এবং শতাধিক যাত্রী আহত হয়।
×