ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতকে মোকাবেলায় প্রস্তুত মুমিনুলরা

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

 ভারতকে মোকাবেলায় প্রস্তুত মুমিনুলরা

মিথুন আশরাফ ॥ টি২০ সিরিজ শেষ। সিরিজ জয়ের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সিরিজে হেরেছে। এবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার পালা। আজ ইন্দোরের হোলকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু হচ্ছে। সকাল ১০টায় শুরু হবে এই টেস্টটি। আর এই টেস্ট খেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন খেলাও শুরু হয়ে যাবে। যে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে ‘টেস্ট বিশ্বকাপ’ ধরা হচ্ছে। নিজ মাটিতে ভারত যে টেস্টে কতটা শক্তিশালী দল তা তো সবদলই এর আগে বুঝেছে। দুই বছর আটমাস ধরে কোন দল ভারতের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট জিততে পারেনি। প্রায় সাত বছর ধরে শুধু একটি টেস্ট হেরেছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, কত শক্তিশালী ভারত। নিজ মাটিতে অপ্রতিরোধ্য দলও। এমন এক দলের বিরুদ্ধে আবার দেশের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়া খেলতে হবে। সাকিব ছাড়া টেস্ট খেলা এবং সেই টেস্টে ভাল করা খুবই কঠিন। কারণ সীমিত ওভারের ম্যাচে সাকিব যতটা ব্যাটিং-বোলিংয়ে কার্যকর, টেস্টে তারচেয়ে বেশি কার্যকর। আবার খেলা উপমহাদেশের উইকেটে। দুইদিন ব্যাটিং পিচ থাকার পর স্পিনারদের দখলেই চলে যায় খেলা। সেখানে অভিজ্ঞ স্পিনার সাকিবকে ছাড়া কী ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে দেয়া যাবে? আবার ব্যাটিংয়ে সাকিব নেই, থাকছেন না তামিমও। শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো শক্তিশালী পেস ও স্পিন আক্রমণের সামনে তামিমের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান না থাকা দলের পিছিয়ে পড়ার মতোই। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ দলে যারা আছেন তাদেরই হাল ধরতে হবে। সাকিব না থাকায় টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন মুমিনুল হক। দেশের ১১তম টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল। তিনি টেস্টে অনেক বড় ভরসা। নিয়মিত টেস্ট ব্যাটসম্যানও। টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানও বলা হয় মুমিনুলকে। তিনি এখন আশা করছেন, ‘নেতৃত্ব দেয়া বাড়তি চাপ নয়। এটার অনুভূতি দারুণ এটা একটা সুযোগ। এটা নিয়ে বাড়তি কিছু ভাবতে চাই না। আমি আশাবাদী। আমি শুধু দেশের প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি দলের জন্য ভাল কিছু করতে চাই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি আক্রমণাত্মকভাবে খেলতে পছন্দ করি। আক্রমণাত্মক অধিনায়ক হতে চাই। যেটা বেশি সাফল্য এনে দেয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমি আমার আক্রমণাত্মক মানসিকার মাঝেই রক্ষণাত্মক হব।’ মুমিনুলের নেতৃত্বেই ‘টেস্ট বিশ্বকাপ’ খেলা শুরু করছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলে ফেলেছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া এ টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে ১০ থেকে ১৪ জুন। লন্ডনের লর্ডসে হবে ফাইনাল। ৯টি দল খেলছে এ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। যে দুটি দল পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে থাকবে তারাই টেস্ট বিশ্বকাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলবে। পাকিস্তান এখনও এ টেস্ট বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলা শুরু করেনি। ভারত আগস্ট থেকে এ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলছে। ৫টি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে সবকটিতে জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি ও নিজ মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিনটি ম্যাচ জিতেছে ভারত। পয়েন্ট তালিকায় এখন ভারত সবার শীর্ষে আছে। ভারত এখন পর্যন্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কোন ম্যাচ হারেনি। আর সবদলই হেরেছে। ২৪০ পয়েন্ট নিয়ে সবার শীর্ষেও আছে ভারত। ভারতের পরেই আছে নিউজিল্যান্ড (৬০ পয়েন্ট) ও শ্রীলঙ্কা (৬০ পয়েন্ট)। এক সিরিজে ১২০ পয়েন্ট করে থাকে। সিরিজে যতগুলো ম্যাচ থাকে ততগুলো ম্যাচে জয়ের ক্ষেত্রে ১২০ পয়েন্ট ভাগ হয়। যেমন দুই ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে জয়ের জন্য ৬০ পয়েন্ট, তিন ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে জয়ের জন্য ৪০ পয়েন্ট, চার ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে জয়ের জন্য ৩০ পয়েন্ট ও পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে জয়ের জন্য ২৪ পয়েন্ট মিলে। আর সিরিজে ড্র’র জন্য নির্ধারিত থাকে ৪০ পয়েন্ট। সিরিজে যতগুলো ম্যাচ থাকে তত ম্যাচে ড্র’র জন্য ভাগ হয়। যেমন দুই ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে ড্র’র জন্য দুই দলই ২০ পয়েন্ট, তিন ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে ড্র’র জন্য ১৩ পয়েন্ট, চার ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে ড্র’র জন্য ১০ পয়েন্ট ও পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হলে এক ম্যাচে ড্র’র জন্য ৮ পয়েন্ট মিলে। হারে কোন পয়েন্ট নেই। ভারত সব ম্যাচই এখন পর্যন্ত জিতেছে। এই শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়েই আজ ‘টেস্ট বিশ্বকাপ’ খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হলেও খেলা টেস্টই। বাংলাদেশ দল কী তারপরও স্বাভাবিকভাবে খেলতে পারবে? বাড়তি কোন চাপ থাকবে না? থাকারই কথা। খেলা ভারতের বিরুদ্ধে হবে। যে দলটির বিরুদ্ধে এরই মধ্যে টি২০ সিরিজ হেরেছে। প্রথম টি২০তে ৭ উইকেটে জেতার পর সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েও দ্বিতীয় টি২০তে ৮ উইকেটে হেরে ১-১ সমতায় আসে। এরপর তৃতীয় ও শেষ টি২০তে আশা জাগিয়েও ৩০ রানে হেরে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছে। টি২০ সিরিজ হারে দলের ক্রিকেটারদের ওপর প্রভাব পড়বে না? আত্মবিশ্বাসে ঘাটতিও তো দেখা দিতে পারে। যদিও টি২০ আর টেস্টের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। টি২০ খেলা দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪০ ওভারের। আর টেস্ট পাঁচদিনের খেলা। প্রতিদিন ৯০ ওভার করে খেলা হয়। টি২০তে ধৈর্য ধরে খেলার চেয়ে মারমুখী হয়ে খেলাই বেশি দেখা যায়। আর টেস্টে মহাধৈর্যের প্রয়োজন পড়ে। উইকেট আঁকড়ে থাকতে হয়। বোলিংয়ে ক্যারিশমা দেখাতে হয়। জিততে হলে প্রতিটি সেশনই জিততে হয়। যা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কী ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে তা করতে পারবে? টি২০তে বিরাট কোহলি ছিলেন না। যিনি একাই যে কোন দলকে হারাতে সক্ষম। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানও। টেস্টে বিরাট তো আরও ভয়ঙ্কর। বিরাটের সঙ্গে এবার রোহিত শর্মা, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, শুভমন গিল, চেতশ্বর পুজারা, অজিঙ্কা রাহানে, ঋদ্ধিমান সাহা, রিশব পন্থ, রবীন্দ্র জাদেজারা আছেন। সবাই টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। আর বল হাতে মোহাম্মদ শামি, উমেষ যাদব, ইশান্ত শর্মার গতিময় বোলিংয়ের সঙ্গে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজার স্পিন ঘূর্ণিতে বাংলাদেশ কাঁপতে পারে। যেমনটি অক্টোবরেই কেঁপেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টানা তিন টেস্টেই নাজেহাল হয়েছে। তবে ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, সাদমান ইসলাম, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাসও কিন্তু কম নন। বল হাতে মুস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ রাহী, আল-আমিন হোসেনের গতির সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানের স্পিন দ্যুতিও আছে। এখন টেস্ট বিশ্বকাপের শুরুটা ভাল হলেই হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৪টি টেস্ট বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলবে। যার শুরু হচ্ছে আজ। শুরুটা দুর্দান্ত হোক, সেই প্রত্যাশাই ক্রিকেটপ্রেমীরা করছেন।
×