ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৩২, ৮ নভেম্বর ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

ভাষার জন্য দুর্বার সংগ্রাম করা একটি জাতি। প্রাণ দিয়ে মায়ের ভাষার মান রক্ষা করেছে। সেই বায়ান্ন সাল, সেই ২১ ফেব্রুয়ারি আজ ইতিহাস। কিন্তু যে ভাষার জন্য এত ত্যাগ সে ভাষা সাহিত্যের চর্চা কতটা হচ্ছে আজ? হচ্ছে না। আশানুরূপ পর্যায়ে নেই। বাংলা সাহিত্যের চর্চা দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। কিছুকাল আগেও শিল্প সাহিত্য সব কিছুতে লিড দিত। এখন ওসবের কেউ তেমন ধার ধারেন না। নেই বললেও চলে। তবে একই সময়ে আরেক বাস্তবতা সামনে এসেছে। আমাদের ছেলে মেয়েরা এখন ইংরেজী মাধ্যমে লেখাপড়া করে। বেশ বড় একটি অংশ এ ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ইংরেজীর সূত্রে বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে তারা। যুক্ত হচ্ছে। ইন্টারনেটের যুগে বিশ্ব নাগরিকতার বোধ নিয়ে বড় হচ্ছে তারা। আর এসব কারণেই হয়ত লিট ফেস্টের মতো নতুন একটি আয়োজনকে চটজলদি আপন করে নিয়েছে তারা। বরাবরের মতোই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের বড় সমাবেশ ঘটছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বিশ্বসাহিত্য নিয়ে তিন দিনের আয়োজন বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই বেশ জমজমাট। আগেই বলেছি, উৎসবটি ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যকেই রিপ্রেজেন্ট করে। মূল অংশগ্রহণ তাই ইংরেজী মাধ্যম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের। অংশগ্রহণ পাশাপাশি সব বয়সীরা কম বেশি আসছেন। অন্তত প্রথম দিনে তেমনটি দেখা গেছে। একাডেমি প্রাঙ্গণটিকে আয়োজকরা বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছেন। সাধারণত যে ধরনের স্টল আমরা মেলায় দেখি, তার থেকে আলাদা কাঠামো। বিন্যাস আলাদা। স্টলগুলোতে ইংরেজী ভাষায় লেখা বইয়ের বড় সংগ্রহ। বেস্ট সেলার বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে। পেপার বুক হাতে নিয়ে মুহূর্তেই পড়ে ফেলা যাচ্ছে কয়েক পাতা। দেশীয় বইয়ের প্রকাশকরাও ফেস্টে অংশ নিয়েছেন। তাদের সংগ্রহে থাকা ইংরেজী বই প্রাধান্য পাচ্ছে ফেস্টে। পাশাপাশি বাংলায় লেখা বই নতুন প্রজন্মের পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা। এভাবে ইংরেজী পড়তে পড়তে বাংলায় লেখা কোন দারুণ বই হাতে উঠে পড়ছে। আবার বাংলা পড়তে পড়তে হাতে উঠে যাচ্ছে চমৎকার কোন ইংরেজী সাহিত্য। চা কফি পান করতে করতে বই পড়া যাচ্ছে। চলছে গল্প আড্ডা। আনুষ্ঠানিক সেশন চলছে। একটার পর একটা। কোথাও কবিতা বিষয় হচ্ছে। কোথাও গল্প উপন্যাস। বর্তমান বাস্তবতার আলোকে বিষয় নির্ধারণ করে পক্ষে-বিপক্ষে বিশ্লেষণ চলছে। প্যানেল আলোচনা। প্রশ্ন উত্তর। সিনেমা। হঠাৎ বন্ধুর সঙ্গে দেখা। কি খবর বল...। চলছে। তিন দিনের আয়োজনে দেশী-বিদেশী অনেক অতিথি এসেছেন। তাদের ঘিরেও কৌতূহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভাললাগার মতো একটি আয়োজন। কিছু সময় কাটানোর মতো উৎসব। আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে চাইলেই একবার ঢুঁ মারতে পারেন। অন্য প্রসঙ্গ। নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে কথা এখনও। পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে আইনের ধারা-উপধারা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে বাসচালকরা তো বেজায় নাখোশ। যেভাবে খুশি তারা চালাবেন। হাসতে হাসতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বাস ফেলে রেখে পালাবেন। স্কুলের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে রাস্তায় নামবে। কিন্তু বেপরোয়া বাস ও তার চালকদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া যাবে না। মালিক পক্ষ ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে এমন মামাবাড়ির আবদার করেছেন। আইনে তাদের কত ক্ষতি হয়ে যাবে তা বলার চেষ্টা করেছেন। তবে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ঢাকাবাসী বাস চালকদের আর ছাড় দিতে নয় বলেই মনে হয়েছে। তারা নানা মাধ্যমে আইন কার্যকর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চলেছেন। এদিকে, মোটরসাইকেলের চালকরাও নাখোশ। তারা আইন ভঙ্গ না করার দিকে অত মনোযোগ দিচ্ছেন না। আইন ভাঙলে প্রচুর টাকা জরিমানা গুনতে হবে। সেটি নিয়ে বেশি চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীরা অত সমস্যায় পড়বেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ ঢাকার অর্ধেক অবৈধ পার্কিংয়ে চলে গেলেও, এ নিয়ে আইনে তেমন কড়াকড়ি দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন আইন সম্পর্কে নাগরিকদের অবহিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন আইন কার্যকর করা হবে। হবে তো?
×