ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাঙ্গালুরুর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই দিল্লী জয় মুশফিকের

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৫ নভেম্বর ২০১৯

ব্যাঙ্গালুরুর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই দিল্লী জয় মুশফিকের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাড়ে ৩ বছর আগে ভারতের বিপক্ষে জয়টা প্রাপ্যই ছিল বাংলাদেশ দলের। ব্যাঙ্গালুরুতে ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপের ম্যাচে ৩ বলে ২ রানের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দু’জনই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় ছিনিয়ে আনার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন ক্যাচ আউট হয়ে। পরে ১ রানে হারের আক্ষেপ সঙ্গী হয়েছে। সেই কষ্টটা সাড়ে ৩ বছরের বেশি সময় পর দিল্লীতে এসে ভুলেছেন মুশফিক। এবার ঠিকই ছক্কা হাঁকিয়েছেন এবং দলকে ৭ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন। ম্যাচশেষে মুশফিক নিজেই দাবি করেছেন ব্যাঙ্গালুরুর সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা নিতে পেরেছেন বলে দলকে জয় এনে দিতে পেরেছেন এবার। সেবার জয় পাওয়ার আগেই আগাম উদযাপন করেছিলেন, এবার জিতেও উল্লেখ করার মতো আনন্দ করতে দেখা যায়নি তাকে। মুশফিক দাবি করেন, ভারতের বিপক্ষে একাধিক জয়ই পারে সবার মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতে। ২০১৬ সালের মার্চে টি২০ বিশ্বকাপ, বাংলাদেশ-ভারত মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ব্যাঙ্গালুরুতে। ভারতের করা ৭ উইকেটে ১৪৬ রানের জবাবে বাংলাদেশের শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রানের। তখনও হাতে উইকেট ৪টি, ক্রিজে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বরাবরই এ দু’জন দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত। ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে হার্দিক পান্ডিয়াকে টানা দুই চার হাঁকিয়ে সমীকরণটাকে সহজ করে ফেলেন মুশফিক, ৩ বলে প্রয়োজন ২ রানের। তাই উল্লাসে ফেটে পড়েন মুশফিক, উদযাপনও করেন। কিন্তু পরের বলেই তুলে মারতে গিয়ে তিনি এবং পঞ্চম বলে একভাবে রিয়াদ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। শেষ বলে জয়ের জন্য ২ রান দূরের কথা কোন রানই আসেনি, রানআউট হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। নাটকীয়ভাবে ১ রানে হেরে বাংলাদেশীদের হৃদয় ভেঙ্গে যায়। সেই একই পরিস্থিতি যেন দিল্লীতে সাড়ে ৩ বছর পর মঞ্চায়িত হচ্ছিল। শেষ ওভারে ৪ রান প্রয়োজন, ক্রিজে সেই মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। এবার তারা ভুল করেননি, দু’দলের রানে সমতা আসার পর শিভম দুবেকে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন মুশফিক। মুশফিক বলেন, ‘বড় ব্যাপার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই এমন পরিস্থিতি থেকে আমাদের জিতে আসাটা মানুষ মনে রাখেনি। এই ম্যাচও যদি আমরা হেরে যেতাম, দীর্ঘদিন তারা মনে রাখত। ব্যাঙ্গালুরুতে আমরা শেষ দুই ওভারে অনেক ভাল অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু এমন উইকেটে যেখানে রান করাটা খুবই কঠিন, সেখানে আমরা অবশ্যই কঠিন পরিস্থিতিতে ছিলাম। শেষ দুই ওভার নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছিল। বাউন্ডারি হাঁকানোর মতো সহজ রাস্তাই পাচ্ছিলাম না।’ মারাত্মক বায়ু দূষণে দিল্লীর বৈরী পরিবেশে, কঠিন অবস্থানে থেকেও এবার জিতে আসার পেছনে ব্যাঙ্গালুরুর তিক্ত অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমরা ভারতের বিপক্ষে অনেকগুলো ম্যাচে কাছাকাছি গিয়েও জিততে পারিনি। এ কারণে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম পরবর্তী সময়ে এমন অবস্থান থেকে আর হারতে চাই না। ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ দুই ম্যাচে (ব্যাঙ্গালুরু ও নিদাহাস ট্রফি ফাইনাল) আমরা শেষ ওভারে গিয়ে যেভাবে হেরেছি সেখান থেকে আমরা প্রচুর শিক্ষা গ্রহণ করেছি। তাই আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে এমন মুহূর্তগুলো উতরে যাওয়া যায় তা নিয়ে। আমি রিয়াদ ভাইকে বলেছি, চলেন বড় শট না খেলে সিঙ্গেলস নিয়েই আমরা জিততে পারব।’ অভিজ্ঞতা যে অনেক বড় বিষয় তা মুশফিক-রিয়াদ এই ম্যাচটি জেতার পর অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করে গেলেন। তবে মুশফিক চান দেশের ক্রিকেটে পরবর্তী প্রজন্ম যেন দ্রুতই শিক্ষা নেয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে আন্ডারডগ হিসেবে এসেছি। গত তিনটা সপ্তাহ আমরা যে পরিস্থিতিতে ছিলাম সে অবস্থায় দারুণ ভূমিকা রাখায় প্রধান কোচকে ধন্যবাদ জানাই। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তরুণদের স্বাধীনতা দিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা দারুণ ব্যাপার। যদি প্রথম ওভারেই ২০ রান দিয়ে শুরু কর, তুমি দলের সঙ্গেই আছো এমন একটি বার্তা আমরা সবাইকে দিয়েছি। আমি চাই তারা ৮-১০ বছরেই এমন অবস্থানে পৌঁছাক যেখানে পৌঁছতে আমার ১৫ বছর লেগে গেছে।’ এবার জিতেও তেমন কোন উদযাপন করেননি মুশফিক। এমনকি অনেক টানাপোড়েন থেকে নানা পরাজয়ের তিক্ততা থেকে পোড় খাওয়া বাংলাদেশ দলের সবাই সেভাবে উল্লাসও প্রকাশ করেনি। কারণ সবাই চান আরও জয়। মুশফিক জানিয়েছেন ক্রিকেটারদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে ভারতের মাটিতে এ সিরিজে একাধিক জয়। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষের বিশাল দর্শক উপস্থিতির সামনে খেলতে গিয়ে যখন দলের জন্য অতীব প্রয়োজন একটি জয়, তখন এটা পেয়ে যাওয়া বিশেষ এক অনুভূতি। খুবই ভাল বোধ করছি। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা অনেক মর্যাদার। আমি দেশ ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের বলেছি যে, দেশের ক্রিকেট সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য একমাত্র উপায় ভারতে গিয়ে একাধিক জয়। সেটাই শুধু দলের সবাইকে এবং জাতিকে শান্ত-সুস্থির করে হাসি ফিরিয়ে আনতে পারবে।’
×