নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১ নবেম্বর ॥ বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে পূর্বাণী পরিবহনের নিয়মিত বাস ড্রাইভার ছিলেন অমল দাশ ওরফে টায়ার অমল। কিন্তু গত ১০ বছরে রাজনৈতিক খোলস পাল্টিয়ে রাতারাতি শত কোটি অর্থের মালিক বনে যান। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি অজানা থাকলেও বান্দরবানের সরকারী পরিবহন বিআরটিসি বাস বন্ধে হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা টায়ার অমলের অজানা অধ্যায় উন্মেচিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে পূরবী-পূর্বাণী যাত্রীসেবা দিয়ে আসলেও বর্তমানে যাত্রীদের দাবির মুখে বিআরটিসি গত ২৮ অক্টোবর থেকে বান্দরবানে এসি বাস সার্ভিস চালু করলেও মঙ্গলবার দুপুরে চলাচলের সূচী নিয়মতান্ত্রিক হয়নি দাবি করে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস কর্মীদের ওপর হামলার নির্দেশ ও বাস বন্ধের হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন বর্তমান বিএনপির সভানেত্রী ম্যামাচিংয়ের একসময়ের অন্যতম সহযোগী টায়ার অমল।
আরও জানা গেছে, ১/১১ সরকারের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবের আশীর্বাদে তিনি রাতারাতি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ লাভ করেন। মূলত এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি বলে জানা যায় এক সময়ের এই ড্রাইভারের। আরও জানা গেছে, এরপর তিনি ড্রাইভারি পেশা ছেড়ে পরিবহন ব্যবসায়ী বনে যান। বান্দরবান চট্টগ্রাম সড়কে ১টি পূর্বাণী বাস দিয়ে পরিবহন স¤্রাজ্যে নিজের অবস্থান জানান দিলেও পরে বান্দরবান-থানচি-রুমা ও রোয়াংছড়ি সড়কে অনন্ত ৮টি গাড়ির মালিক বনে যান তিনি। এরপর বান্দরবান পৌর এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও গাড়ির টায়ার ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টায়ার অমলের এক ড্রাইভার জানান, গত ৬ মাসে তিনি জেলা শহরের হাফেজঘোনা বাস টার্মিনাল এর পাশে কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম শ্রেণীর ১০ শতাংশের একটা প্লট নিজের নামে ক্রয় করেন মোকসেদ কোম্পানির কাছ থেকে।
একই এলাকায় তিনি আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কাজল কান্তি দাশ থেকে তার শ্যালকের নামে ক্রয় করেন ৮ শতাংশ (বর্তমানে নিউ বান্দরবান মোটর নামে পরিচিত)। গত সপ্তাহে তার হাফেজ ঘোনার বাসার দক্ষিণ পাশে প্রায় ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে। শহরের অন্যতম ব্যস্ততম প্রাণকেন্দ্র বাসস্টেশন বান্দরবান মোটরসের দোকান ক্রয় করেন, যার বিপরীতে ৬০ লাখ টাকা প্রদান করেন। শহরের যৌথখামার এলাকায় পরিবহন মালিক সমিতি নিজস্ব তৈরি হতে যাওয়া বহুতল ভবনের অধিকাংশ শেয়ার এই টায়ার অমলের। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় তার অজানা সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।
বান্দরবান শহরের বাজার এলাকার বাসিন্দা মোঃ ইউনুস বলেন, টায়ার অমলের রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার ব্যাপারে অনতিবিলম্বে দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত করা উচিত।
গত মঙ্গলবার বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে পরিবহন ধর্মঘট, হামলা ও হুমকির নির্দেশ প্রদান করেন রাতারাতি পরিবহন স¤্রাজ্যের ডন বনে যাওয়া অমল। বৈঠকে শৈলশোভা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস, পরিবহন মালিক সমিতির নেতা ঝুন্টু দাশ, অমল দাশ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তৌহিদুর রহমান রাশেদ, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ক্যালু মং, টিআর মামুন ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিতিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত না মানা এবং বৈঠক থেকে বিআরটিসি কর্মীদের ওপর হামলার নির্দেশ প্রদান করলে সবাই বিস্মিত হন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পরিবহন শ্রমিক নেতা অমল দাশ ওরফে টায়ার অমল বলেন, বান্দরবানে বিআরটিসি চলাচল বন্ধ থাকবে, সড়কে চলতে হলে আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস চালাতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে সড়কে নাম বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করার টায়ার অমলের হুমকি বিষয়টির ভিডিও এবং অডিও ভাইরাল হলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বান্দরবানের তরুণ সমাজ। তারা যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। শৈলশোভা মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস বলেন, যাত্রীদের উন্নত সেবা দেয়ার জন্য বান্দরবানে বিআরটিসির প্রয়োজন আছে, বাস চলতে কোন বাধা কেউ দিতে পারে না।
ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
