ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:১২, ১ নভেম্বর ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

কয়েকদিন আগেও আলোচনার হাজারটা বিষয় ছিল। এখন সব কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। সামনে কেবলই সাকিব। সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্ষণজন্মা ক্রিকেটারকে কমপক্ষে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে? আইসিসির কালো তালিকাভুক্ত জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার অপরাধে তাকে এই দন্ড প্রদান করা হয়। এরপর থেকেই নীল বেদনা। সারা দেশের মতো ঢাকার ক্রিকেটপ্রেমীরাও বিমর্ষ। শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন। আরও এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন ক্ষতি কেউ মেনে নিতে পারছেন না। ঢাকার অলিতে গলিতে হাটে ঘাটে গণপরিবহনে একমাত্র আলোচনা হয়ে উঠেছেন সাকিব। অফিসের কাজের ফাঁকে বন্ধুদের অলস আড্ডায় কিংবা খাবার টেবিলে বসে ঘটনার বিশ্লেষণ চলছে। সাকিব অপরাধ কবুল করে নিজে অনুতপ্ত বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ভক্ত অনুরাগীরা এখানেই থামতে নারাজ। আবেগ ধরে রাখতে পারছেন না। বুধবার রাতে ধানমন্ডির একটি রেস্তরাঁয় বসতেই সাকিবের আলোচনা কানে এলো। ওয়েটার বলছিলেন, সাকিবকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। সুযোগ-সুবিধার দাবিতে ক্রিকেটারদের যে আন্দোলন তার নেতৃত্বে ছিলেন সাকিব। এটাই নাকি কাল হয়েছে তার। সাকিবের বিরুদ্ধে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গোপনে কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ তার। টিএসসির চা দোকানেও প্রায় অভিন্ন আলোচনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে কিছু সময় দাঁড়াতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল। ছেলে ছোকড়া বয়সী এক চা বিক্রেতা সাকিবকে এখনও নায়ক মানছেন। বোর্ড সভাপতিকে দেখছেন ভিলেন হিসেবে। শিক্ষার্থীদের কারও কারও অভিযোগ, বিসিবি সাকিবের পক্ষে দাঁড়ায়নি। কেউ কেউ প্রায় নিশ্চিত করেই বলছেন, আইসিসি এবং বিসিবি মিলে মিশে এই দ- দিয়েছে। এর পেছনে রাজনীতি আছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। ঘটনা যাই হোক, সাকিবের পাশে থাকার ঘোষণাও আসছে প্রতিনিয়ত। সবার সহযোগিতায় সাকিব আল হাসান আবার মাঠে ফিরবেন বলেই আশা করছেন ভক্ত অনুরাগীরা। তবে এর বাইরেও যে আলোচনা তা-ও অস্বীকার করার উপায় নেই। আবেগ সংবরণ করতে পারছেন যারা তাদের বক্তব্যটি এ রকম : আন্তর্জাতিক তারকা সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের সকল নিয়ম কানুন তিনি জানেন। শতভাগ অবগত। কী করলে কী হয় তা জানার সবচেয়ে বেশি সুযোগ হয়েছে তারই। এরপরও কী করে এত বড় ভুল করেন তিনি? বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় দেশের ক্রিকেটের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গোটা জাতিকে বেদনায় ডুবিয়েছেন তিনি। বিব্রত করেছেন। ক্রিকেটের পরাশক্তিরগুলো এতদিন টাইগারদের সমীহ করত। এখন তা সন্দেহে রূপ নিতে পারে। এ অবস্থায় সাকিবকে বাহাবা দেয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন তারা। সাকিবের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ অংশটি বলছে, ব্যক্তিগত ভুল বোকামি নির্বুদ্ধিতা অজ্ঞতা অসততার দায় সাকিবকেই নিতে হবে। কারণ এর আগেও অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সাকিব। নিষিদ্ধও হয়েছিলেন। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে গ্যালারিতে বসে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে সবাইকে লজ্জায় ডুবিয়েছিলেন তিনি। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে জরিমানাও গুনেছেন বহুবার। সাম্প্রতিক উদাহরণ টেনে কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বকাপের আগে দলের আনুষ্ঠানিক ফোটোসেশনে অংশ নেননি তিনি। এমন ফিরিস্তি টেনে সাকিবকে আগে শোধরানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এই অংশটি বলছে, সাকিব নিষিদ্ধের ঘটনায় যারা রাজনীতি দেখছেন তাদেরও রাজনৈতিক পরিচয় আছে। একটি অংশ তো সাকিব হেটার্স গ্রুপ বা সাকিবের তীব্র সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিল। বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পর তারা সাকিবের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এভাবে আলোচনা পাল্টা আলোচনা চলছেই। আর কত দূর গড়াবে এ আলোচনা তা-ই এখন দেখার বিষয়। অন্যপ্রসঙ্গ। আজ শুক্রবার থেকে সারাদেশে কার্যকর হচ্ছে আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮। আইন অনুযায়ী, ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে সড়কে নামলে ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা বা উভয় দন্ড ভোগ করতে হবে। বাইকে চলার সময় লেন ভঙ্গ ও হেলমেট ব্যবহার না করলে অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে। আরও বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আইন করা হয়েছে। নতুন আইনের কিছু দুর্বল দিক পরিলক্ষিত হলেও কার্যকর করা গেলে এর সুফল নগরবাসী পাবেন বলে মনে করছেন তারা। একটি উৎসবের কথা বলে শেষ করা যাক। ব্যতিক্রমী উৎসব। ট্রান্সলেসন ফেস্ট। গত শুক্র ও শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। অপেক্ষাকৃত নতুন এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুবাদের মতো জরুরী বিষয়টিকে সামনে আনেন আয়োজকরা। অনুবাদ নিয়ে আলাদা করে ভাবার সুযোগ করে দেন তারা। দেশের স্বনামধন্য লেখক কবি অনুবাদক ও প্রকাশকরা উৎসবে যোগ দেন। এসেছিলেন কয়েকজন বিদেশী অতিথিও। আয়োজনের অংশ হিসেবে ছিল প্যানেল আলোচনা। আলোচনার বিষয় ছিল- ‘বাংলাদেশ ইন ট্রান্সলেশন: এক্সপ্লোরিং দ্য গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ অব ১৯৭১’, ‘ট্রান্সলেশন ইন রিসেন্ট টাইমস’, ইজ পোয়েট্রি লস্ট ইন ট্রান্সলেশন?’, ‘ট্রান্সলেশন-বেঙ্গললি লিটারেচার এ্যান্ড ইটস ফিউচার’, ‘পাবলিশার্স কন্ট্রিবিউশনস টু ট্রান্সলেটিং লিটারেচার’ এবং ‘ট্রান্সলেশন এজ এ প্রফেশন।’ মাঠে ছিল বইয়ের স্টল। কয়েকটি নামকরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। উৎসবে আসা অনেকেই বলছিলেন, বাংলা সাহিত্যের ইংরেজী অনুবাদ খুব জরুরী। ইংরেজী অনুবাদ না হওয়ায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারছে না বাংলা সাহিত্য। একদিকে ইংরেজীতে লেখায় অনীহা। অন্যদিকে বাংলায় রচিত গ্রন্থের ইংরেজী অনুবাদে অনাগ্রহ। এ দুই কারণে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে প্রবেশই করতে পারছে না বাংলাদেশ। এভাবে আর কতদিন? ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ইংরেজীতে লেখা এবং বাংলায় লেখা বইয়ের অনুবাদে মন দেয়ার আহ্বান জানান তারা। আয়োজকদের চাওয়াটিও ছিল অভিন্ন। উৎসবের স্লোগানে তারা বলেন : ইউনাইট থ্রো ট্রান্সলেশন। অনুবাদের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে যায় ট্রান্সলেশন ফেস্ট।
×