ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জামাল না লি টাক, কে হাসবেন শেষ হাসি?

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

 জামাল না লি টাক, কে হাসবেন শেষ হাসি?

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ একদিকে জামাল ভুঁইয়া, আরেকদিকে লি টাক। দু’জনই নিজ নিজ দলের প্রাণভোমরা, অধিনায়ক। খেলে থাকেন মাঝমাঠে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলের ফাইনালে আজ সন্ধ্যায় এই দুই মহাতারকা একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠে নামছেন। চট্টগ্রাম আবাহনী ও টেরেঙ্গানু এফসির মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচে সঙ্গত কারণে স্পটলাইট থাকছে এ দু’জনের দিকে। জামাল ও লি টাকের শ্রেষ্ঠত্বের এ দ্বৈরথে যে এগিয়ে যাবে তার দলও হয়তো শেষ পর্যন্ত উঁচিয়ে ধরবে আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের ট্রফি। তবে বিষয়টিকে ঠিক এভাবে দেখছেন না চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ মারুফুল হক। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ফাইনালে দ্বৈরথটা কি জামালের সঙ্গে লি টাকের? হেসে তারকা এই কোচ বলেন, ‘না, লি টাকের সঙ্গে মানিকের (মিডফিল্ডার মানিক হোসেন মোল্লা)’। উল্লেখ্য, মানিককে আগামীদিনের জাতীয় দলের তারকা মনে করা হচ্ছে। অনেকটা কৌতুকের ছলে মারফুল বিষয়টি নিয়ে কথা বললেও বাস্তবতা তারও মাথায় আছে। ম্যাচটি জিততে হলে যে লিকে আটকানো ছাড়া উপায় নেই সেটাও মাথায় আছে বন্দরনগরীর কোচের। ধারাবাহিকভাবে নিজের চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স এই আসরেও ধরে রেখেছেন জামাল। বর্তমানে তার ধ্যানজ্ঞান যে কোন মূল্যে শিরোপা জয় করা। দলের প্রথম দুই ম্যাচেই ম্যাচসেরা হওয়া এই তারকা ফাইনালেও দর্শকদের সেরাটা দিতে চান। মহারণে মাঠে নামার আগে জামাল বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমরা এখন লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি। আমি আশাকরি দেশের মানুষের জন্য এবং চট্টগ্রামের মানুষের জন্য আমরা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ব।’ বাংলাদেশ জাতীয় দল ও ক্লাবের হয়ে এখন পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারেননি জামাল। এই আসর সেই সুযোগ করে দিয়েছে। দারুণ ছন্দে ফাইনালে উঠে আসা জামাল সুযোগটা কাজে লাগাতে চান। তবে অধিনায়ক হিসেবে জিততে হবে এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না জামালের কাছে, ‘অধিনায়ক হিসেবে বা একজন খেলোয়াড় হিসেবে ট্রফি হাতে তোলা বিশেষ কিছু না। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনীকে জেতাতে হবে। এটা আসলে ব্যক্তিগত কিছু না, দলগত বিষয়’। ২০১৫-১৬ মৌসুমে বাংলাদেশে খেলে গেছেন লি টাক। সেবার ঢাকা আবাহনীকে জিতিয়েছিলেন পেশাদার লীগের শিরোপা। মাত্র এক মৌসুম খেলা ব্রিটিশ প্লেমেকার এখন মালয়েশিয়ান ক্লাব টেরেঙ্গানুতে খেলছেন। তিন বছর পর দলটির হয়ে আবার বাংলাদেশে এসেছেন। লাল-সবুজের দেশে এসেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে দারুণ কার্যকরী এই প্লেমেকার। প্রথম দুই ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও শেষ দুই ম্যাচে করেছেন দাপুটে হ্যাটট্রিক। ৬ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের দৌড়ে জামাল ভুঁইয়ার সঙ্গে লি’র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেও দলের জয়ই মুখ্য লি’র কাছে। সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়, টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিকের সুযোগটাকে কিভাবে দেখছেন? বিনয়ী লি টাক জবাবে বলেন, ‘আমি হ্যাটট্রিক নিয়ে ভাবছি না। আমার লক্ষ্য দলের জয়। সেটা যেভাবেই হোক হতে হবে।’ আত্মবিশ্বাসী লি বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি শিরোপার জন্য। এখন খুব কাছাকাছি। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না।’ লি টাকের প্রশংসা করে চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘আমার মতে লি টাক এই আসরে অসাধারণ পারফর্ম করেছে। আমরা তাকে আগেও বাংলাদেশে খেলা দেখেছি। এখনও দেখছি। তার আসলে এই লেভেলে খেলা উচিত না, আরও বড় লেভেলে খেলা উচিত। যাই হোক সে এখানে খেলছে তার সেটপিচ ফ্রিকিক নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে।’ মারুফুল আরও বলেন, শুধু লি টাক নয়, ব্রুনো সুজুকিও প্রথম ম্যাচে চার গোল করেছে। ওদের একটা কম্বিনেশন আছে। ইসমাইল, ব্রুনো, লি টাক যখন ওপরে যায় তখন আরেকজন ধরে রাখে। ওদের এই কম্বিনেশন আমাদের ভাঙ্গতে হবে। সেটা করা গেলে আগের ম্যাচগুলোতে তারা যে এ্যাটাক করেছে, পেনাল্টি পেয়েছে সেটা সম্ভব হবে না।’ টেরেঙ্গানুর বিরুদ্ধে শেষ গ্রুপ ম্যাচটি বসুন্ধরার জন্য ছিল বাঁচা-মরার। সেমিতে খেলতে হলে কিংসদের জয়ের বিকল্প ছিল না। অন্যদিকে ড্র করলেই চলতো মালয়েশিয়ান ক্লাবটির। কিন্তু ড্র নয়, পিছিয়ে পড়েও কিংসদের গুঁড়িয় দিয়ে শেষ চারে এসেছে তারা। ম্যাচটির আগে বসুন্ধরার সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি জানিয়েছিলেন, তারা লি টাককে নিষ্ক্রিয় করতে সবধরনের ছক কষেছেন। কিন্তু আগে থেকে পরিকল্পনা করার পরও ময়দানী লড়াইয়ে টেরেঙ্গানুর মেসিকে আটকাতে পারেনি কিংসরা। একই কথা প্রযোজ্য মোহনবাগানের ক্ষেত্রেও। কলকাতার জায়ান্টরাও লি কে আটকাতে বিশেষ কৌশল করেছিল। কিন্তু কিছুতেই অপ্রতিরোধ্য লি কে আটকে রাখতে পারেনি তারা। অসাধারণ হ্যাটট্রিক করে মোহনবাগানকে বিদায় করে ছেড়েছে তারা। এ কারণে চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ বিশেষ ছক কষেছেন লি টাককে আটকাতে।
×