ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবের পাশে সবাই

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

সাকিবের পাশে সবাই

মিথুন আশরাফ ॥ কথায় আছে, ‘একটি ভুল, সারাজীবনের কান্না’। সাকিব আল হাসানের বেলাতেও কী তাই হল? ম্যাচ ফিক্সিং করে শাস্তি পেলেও হতো। তা করেননি সাকিব। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবই গ্রহণ করেননি। নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে তা আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানাননি। এখানেই মস্ত বড় ভুল হয়ে গেল। আর এই ‘লঘু পাপে, গুরুদ-’ পেলেন সাকিব। দুই বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন। এক বছর যে কোন ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। যেহেতু আইসিসিকে সবধরনের সহযোগিতা করেছেন, তাই আর এক বছর শাস্তি স্থগিত হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণে থাকবেন সাকিব। এমন সময় সবাই সাকিবের পাশেই আছেন। ২০১৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে দুইবার এবং আইপিএলে একবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। তা গ্রহণ না করে জুয়াড়িকে ফিরিয়ে দেন। কিন্তু তা আইসিসিকে জানাননি। এই ভুলে এখন শাস্তি পেয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এ নিয়ে নিজের আনুষ্ঠানিক ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘দীর্ঘ ১৩ বছরের সহযোদ্ধার আজকের ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই কিছু বিনিদ্র রাত কাটবে আমার। তবে কিছুদিন পর এটা ভেবেও শান্তিতে ঘুমাতে পারব যে, তার নেতৃত্বেই ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। কারণ নামটি তো সাকিব আল হাসান।’ বাংলাদেশ দল ভারত সফরে গেল। সফরে সাকিব না থাকায় টি২০ দলের অধিনায়ক করা হয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। টেস্ট দলের অধিনায়ক করা হয়েছে মুমিনুল হককে। দেশ ছাড়ার আগে সাকিবকে নিয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘সাকিবের জন্য আমরা সবাই ব্যথিত। আমরা সবাই জানি সে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ দলের জন্য, আমাদের দেশের জন্য। হয়তো তিনি একটা ভুল করেছেন কিন্তু কোন অপরাধ করেননি। আমাদের সবার সমর্থন তার সঙ্গেই আছে। আমরা সবাই তাকে যেভাবে ভালবাসতাম সেভাবে আগের মতোই ভালবাসব।’ ভারত সফরে টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। এই মানুষটি একজন এবং একমাত্র। আপনাকে ভালবাসি ভাই। আপনি বাংলাদেশের অহঙ্কার।’ দলের অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম। তিনি সাকিবকে নিয়ে টুইট বার্তা দেন, ‘সাকিবের সঙ্গে বয়সভিত্তিক এবং আন্তর্জাতিক মিলে ১৮ বছর ধরে খেলেছি। তাকে ছাড়া (ভারত সফরে) খেলতে যাওয়াটা দুঃখজনক। তুমি মাঠে নেই এ অবস্থায় খেলতে হবে ভেবেই ভয়ঙ্কর মন খারাপ হচ্ছে। আশাকরি খুব দ্রুত একজন বিজয়ীর মতোই ফিরবে তুমি। সবসময় আমার এবং পুরো বাংলাদেশের সমর্থন পাবে। ধৈর্য ধর, ইনশাআল্লাহ।’ ভারত সফরে নেই তামিম ইকবাল। তবে তিনি সাকিবকে নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘১২ মাস তোমাকে আমাদের দলে পাব না। এটা ভাবাও কঠিন। তবে আশাকরি, তুমি শক্তভাবে ফিরবে। আগামী বছর এ দিনে আমাদের সঙ্গে ট্রেনিংয়ে থাকবে। আমরা আবার একসঙ্গে খেলব।’ মুস্তাফিজ তার অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে লিখেন, ‘আমি কি বলব জানি না। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আপনাকে ছাড়া আমাদের খেলতে হবে। তবে আমি একটি জিনিস জানি এবং বিশ্বাস করি যে আপনি অবশ্যই শক্তভাবে ফিরে আসবেন। আমরা সেই দিনটির জন্য সাকিব ভাইয়ের অপেক্ষায় থাকব।’ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেন, ‘আপনাকে খুব মনে পড়বে আমাদের। আমার প্রত্যাশা, আগের থেকেও আপনি শক্তিশালী হয়ে ফিরবেন। আপনার প্রতি আমার দোয়া রইল।’ সাব্বির রহমান রুম্মন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তোমাকে ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট, ভাবতে খুব খারাপ লাগছে। ইনশাল্লাহ আগের থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবেন। আপনার প্রতি সবসময় সমর্থন রয়েছে ভাই।’ তাসকিন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চিন্তা করবেন না ভাই...। আপনি আগের থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবেন, ইনশাল্লাহ।’ সৌম্য সরকার তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘২২ গজের উইকেটে, ড্রেসিং রুমে, টিম বাসে, টিম হোটেলে আপনার শূন্যতা আমাদের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি জানি না এই পরিস্থিতিতে কি বলতে হয় বা লিখতে হয়। শুধু এইটুকু বিশ্বাস করি আপনি ফিরে আসবেন, আগের থেকে আরও পরিণত হয়ে। কারণ আপনি সাকিব আল হাসান।’ আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কোডের তিনটি আইন লঙ্ঘনের অপরাধ সাকিব মেনে নেন। আইসিসিকে তথ্য না জানানোয় এ শাস্তি পেয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনটি ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও সেটি গোপন রাখেন। অপরাধ স্বীকার করে নেয়ায় এক বছরের শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে আগামী বছর ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সাকিব কোন ধরনের ক্রিকেটে খেলতে পারবেন না। এই সময়ের মধ্যে আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী প্রোগ্রামে অংশও নেবেন। আইসিসিতে সাকিব বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব মর্মাহত। যে খেলাটাকে এতো ভালবাসি সেখানে নিষিদ্ধ হলাম। তবে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব আইসিসিতে না জানানোয় আমি আমার নিষেধাজ্ঞা মেনে নিচ্ছি। আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিট খেলোয়াড়দের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি আমার অংশটা ঠিকঠাক পালন করতে পারিনি। বিশ্বের সব খেলোয়াড়ের মতো আমিও চাই ক্রিকেট খেলাটা যেন দুর্নীতিমুক্ত থাকে। সামনের দিনগুলো আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে তাদের দুর্নীতিবিরোধী প্রোগ্রামে কাজ করতে আগ্রহী। আমি এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমার মতো ভুল যেন কোন তরুণ খেলোয়াড় ভবিষ্যতে না করে।’ সাকিবের পাশে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞায় আমিও ব্যথিত। এরচেয়ে বেশি ব্যথিত হওয়ার কিছু হতে পারে তা আমার জানা নেই। সাকিবের মতো খেলোয়াড় আমরা পাব কিনা জানি না। সাকিব খেলতে না পারার মতো হতাশ আর কেউ হতে পারে না। সাকিবকে নিয়েই আমাদের সব পরিকল্পনা ছিল। বাংলাদেশে ক্যাপ্টেন্সিতে মাশরাফি এবং খেলোয়াড়ে সাকিব, এদের কোন তুল না হয় না। সাকিব এই মুহূর্তে খুব খারাপ সময় অতিক্রম করছে। আশাকরি সকলের সহযোগিতায় তা কেটে উঠবে। বিসিবির পক্ষ থেকে সাকিবকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে।’
×