ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দীপক চৌধুরী

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

 সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর আরও পরিষ্কার হয়ে উঠল যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। নিরীহ মানুষও যাতে ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়, এটি তাঁর নীতি। নিজ দলের অপরাধীর প্রতি কোন ধরনের দুর্বলতা বা অনুকম্পার সুযোগ নেই- এটা তাঁর কর্মকান্ডেই প্রমাণিত। এটাও পরীক্ষিত আজ, মানুষকে সাময়িকভাবে হয়তো বিভ্রান্ত করা যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সততা ও দেশপ্রেমই জয়ী হয়ে থাকে। বিভিন্ন কর্মকান্ডে অনুমান করা যাচ্ছে, চলমান শুদ্ধি অভিযানে যারা টার্গেট রয়েছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকান্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হওয়ার পরও তাদের কোন ছাড় দেয়া হয়নি। বুয়েটে পিটিয়ে ছাত্রহত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সুস্পষ্ট। হত্যার দায়ে আটক বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যাপারে ক্ষমাহীনতার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন সম্পর্কিত নানা বিষয় এখন সামনে। যুবলীগ কিছু নেতা নিয়ে উঠেছে ও উঠছে নানা প্রশ্ন। যুবলীগের কয়েক নেতা ও সিটি কাউন্সিলর মনে করতেন দেশটাই যেন ওদের। কাউন্সিলর হওয়ার পর তাদের টিকিটি ছোঁয়া যায় না। নগরবাসীর ট্যাক্সের টাকায় তৃতীয় শ্রেণীর নির্মাণ কাজ হচ্ছে ঢাকার রাস্তায়। প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারও। কিন্তু ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গণভবনের বৈঠকের পর দেখলাম, একদা যেসব নেতার হুমকি-ধমকিতে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত ছিল, সেসব অন্যায়কারীকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। শুনেছি, বাকিদের আচরণও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটা গণভবনের বৈঠকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য কথায় কথায় জানিয়েছেন, যুবলীগকে শুদ্ধপথে আনতে কঠিন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে। সংগঠনটির নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন ইমেজকে প্রাধান্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এই সংগঠনের বর্তমান ভাবমূর্তি এতটাই নষ্ট হয়েছে যে, সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়া কিছু নেতার বিষয়ে শেখ হাসিনা কঠোর পদক্ষেপ নেবেন। এখন ক্লিন ইমেজের এমন নেতা প্রয়োজন, যারা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। আসন্ন সম্মেলন সংগঠনের নেতৃত্বে গতিশীলতা আনতে এবং সংগঠন দুর্নীতিমুক্ত করতে ভূমিকা রাখবে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জনগণের বিশ্বাস, আগামী দিনগুলোতে যুবলীগকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ, ছাত্রলীগের পর শেখ হাসিনা যুবলীগকে শক্ত হাতে ধরেছেন। যুবলীগ সম্পর্কে, যুবলীগের নেতা সম্পর্কে, রাজনীতিবিদ সম্পর্কে, কারা কর্মকর্তা প্রসঙ্গে, ব্যাংক প্রসঙ্গে নানা অনিয়মের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্ঞাত। শুদ্ধি অভিযানে শুধু একটি সেক্টরই লক্ষ্য নয়, সকল সেক্টরেই হাত দেয়া হবে। অপরাধ যে করে সে অপরাধীই, সে যে দলেরই হোক না কেন যথাযোগ্য শাস্তি তার প্রাপ্য- এটাই প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। গুজব একটি বড় সমস্যা। আগে রামুতে হয়েছে, নাসিরনগরের কথাও জানি। শান্ত ভোলাকে অশান্ত করা হয়েছে। ভোলার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। অন্যের ফেসবুক হ্যাক করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ একথা জানলেও আমরা কী গুরুত্ব দিচ্ছি বিষয়টিকে? ফেসবুকে মহাসবী (সা.)-কে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। জানা গেছে, বিপ্লব চন্দ্র নামে এক সংখ্যালঘুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই ব্যক্তি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বলেছেন, তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা করা হয়েছে। যে মুসলিম ছেলেটি এ কাজ করেছে, তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেল। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্যরা শক্ত হাতে বিষয়টি সামাল দেয়ার উদ্যোগ নেননি। এ ঘটনাটি এত দূরে গেল কিভাবে- এই প্রশ্ন কিন্তু জনমনে রয়েই গেছে। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলা ইস্যুতে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ধৈর্য ধারণ ও গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি যারা এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। ভোলার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখনই দেশ অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তখনই একশ্রেণীর লোক সব সময় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়।’ এদিকে, পুলিশ সদর দফতর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দু’জনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা থেঁতলানো ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।’ সঙ্গতকারণেই এদেশের মানুষের দাবি, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দেশের চলমান আইনানুগ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে আসল সত্য বের করে জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করুক। এখন আসি দুর্নীতির কথায়। এ সমাজে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত সত্য। এটি একটি বড় ব্যাধি। ২০ অক্টোবর দুর্নীতির অভিযোগে কারা অধিদফতরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বজলুর রশীদকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঘুষের কোটি কোটি টাকা লেনদেন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের রহস্য উদ্ঘাটনে বজলুর রশীদ ও তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিরুদ্ধে কুরিয়ার সার্ভিসে মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনের তথ্যের সত্যতা পায় সংস্থাটি। এর আগে আরেক কারা অধিদফতরের উপমহাপরিদর্শক পার্থকে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। বেশকিছু কারা কর্মকর্তার তালিকা করে দুর্নীতির তদন্ত করা হচ্ছে। এসবের মধ্যে জেলর, জেল সুপার রয়েছেন। তারা নাকি বিদেশ-বিভূঁইয়েও সম্পদ পাচার করেছেন, বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়িয়ে বিদেশে ছেলে-মেয়েদের পড়াচ্ছেন। পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘুষ লেনদেনের একই কারণে এনামুল বাছির নামে দুদকের এক পরিচালক কারাগারে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যে রাজনীতির দোহাই দিয়েও দুর্নীতিসহ কোন অপরাধ করে আর কোনক্রমেই পার পাওয়া যাবে না, এটি পরিষ্কার। সেই ব্যক্তি প্রশাসনে কর্মরত হোক বা কারা প্রশাসনে কর্মরত হোক বা পুলিশেই কর্মরত হোক না কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কোন সরকারপ্রধানের এ ধরনের দৃঢ়তা আগে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেনি। লেখক : সাংবাদিক
×