হাসিব রহমান, ভোলা থেকে ॥ ভোলা এখন শান্ত। পরিস্থিতিও স্বাভাবিক। বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় পুলিশ শনাক্তকরণের কাজের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় ৪/৫ হাজার আসামি করে মামলা হওয়ায় গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ২ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অন্যদিকে বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলিতে নিহত ৪ জনের জন্য সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের মোনাজাত কর্মসূচী ডাক দেয়ার পর তা স্থগিত হলেও শুক্রবার সকাল থেকে ৪ বাহিনী যৌথভাবে শহরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। কিন্তু কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ভোলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটের যাত্রীবাহী বাস ও ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ভোলা শহর থেকে পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। শুক্রবার রাতেই বোরহানউদ্দিনে হামলা সংঘাতসহ নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান ভোলা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাহামুদুর রহমান।
শুক্রবার দুপুর ৩টায় ভোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দোয়া ও মোনাজাতের আহ্বান করে ভোলায় সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ। কিন্তু তা গত রাতে স্থগিত করা হয়। সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সচিব মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, ইতোপূর্বে প্রশাসন মৌখিকভাবে তাদের অনুমতি দিলেও বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। অনুমতি না পাওয়ায় তারা তাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চরমোনাই পীর ফয়জুল করিমের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দোয়া কর্মসূচী স্থগিত করা হয়। তারপরও ওই কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে ভোলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শহরে সকল থেকে চলে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডের বাহিনীর যৌথ টহল। ভোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখা হয়। সন্দেহভাজন ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। অন্যদিকে ভোলায় অভ্যন্তরীণ সকল রুটে এবং ভোলা বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল সকাল থাকে প্রায় ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। ভোলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানান, তারা নিরাপত্তার কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন। তবে চরফ্যাসন-লালমোহন পর্যন্ত চলাচল করে।
বোরহানউদ্দিন শাহাবাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জানান, বোরহানউদ্দিনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। পুলিশের মামলায় মানুষ কিছুটা আতঙ্কে রয়েছে। কে কোন সময় কাকে গ্রেফতার করে। এলাকাবাসীর দাবি ভিডিও দেখে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার। এমনিতে যাতে হয়রানি না করা হয়।
ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ইতোপূর্বে তারা (তৌহিদী জনতা) কথা দিয়েও রক্ষা করেননি। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে তারা পূর্র্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়েছেন। জেলা পুলিশ থেকে প্রায় ৩শ পুলিশ সদস্য, র্যাবের ৬০ জন, কোস্টগার্ডের ৬০ জন, বিজিবির ৮০ জন ঐক্য পরিষদের কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বোরহানউদ্দিনে ঘটনা তারা একেবারে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেফতার করছেন না। প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রতিমুহূর্তে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সংখ্যা তিনি উল্লেখ করেননি। শনাক্তের প্রক্রিয়া দিকে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই গ্রেফতার আপাতত কম। তবে ইতোমধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপরাধী শনাক্তের পর তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বের করব।
এদিকে ভোলা মডেল থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, সকালে শহরের বাংলা স্কুল ব্রিজ এলাকা থেকে সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
বোরহানউদ্দিনের ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ৩ দিনের সময় দেয়া হলেও তারা আরও ২ দিনের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন। শুক্রবার ছিল প্রতিবেদন দেয়া শেষ দিন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান ভোলা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাহামুদুর রহমান জানান, তাদের তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার রাতেই ওই প্রতিবেদন ভোলা জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়ার কথা। তবে তদন্ত রিপোর্টের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি।