ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চার লালকার্ডের ম্যাচে বসুন্ধরার স্বস্তির জয়

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

চার লালকার্ডের ম্যাচে বসুন্ধরার স্বস্তির জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ দুই দেশের দুই লীগ চ্যাম্পিয়নদের লড়াইয়ে চার চারটি লালকার্ড দেখিয়েছেন রেফারি। দুই দলের দুই কোচ এবং চেন্নাই সিটি এফসির দুইজন ফুটবলার। ফলে নয়জনের দলে পরিণত হয় ভারতের আই লীগ চ্যাম্পিয়নরা। এরপরও শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে জয় পেতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে বাংলাদেশের পেশাদার লীগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষের দুই মিনিট আগে গোল করে চেন্নাইকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছে বসুন্ধরা। বাংলাদেশের নতুন পরাশক্তিরা মহামূল্যবান জয়টি পেয়েছে মূলত বিদেশী ফুটবলারদের নৈপুণ্যে। দলটির জয়ে জোড়া গোল করেন লেবাননের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ জালাল কদুহ। অপর গোলটিও করেন আরেক বিদেশী কিরগিজস্তানের ফরোয়ার্ড বখতিয়ার দুশোবেকভ। এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা জিইয়ে রেখেছে কোচ অস্কার ব্রুজেনের দল। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের ডুরাল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন গোকুলাম কেরালার কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল কিংসরা। এখন শনিবার মালয়েশিয়ার টেরেঙ্গানু এফসির বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভাগ্য নির্ধারণ হবে ইব্রাহিম, বিশ্বনাথ, মতিনদের। শুরু থেকে প্রাধান্য বিস্তার করে খেলা বসুন্ধরা ষষ্ঠ মিনিটে এগিয়ে যায় তিন বিদেশীর কম্বিনেশনে। ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের ক্রস থেকে হেড করেন মিডফিল্ডার বখতিয়ার। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ ভলি চেন্নাইয়ের জাল কাঁপান লেবাননের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ জালাল কদুহ (১-০)। ২৫ মিনিটে একটা ফাউলকে কেন্দ্র করে ম্যাচ ১০ মিনিট বন্ধ থাকে। এ সময় বসুন্ধরার ইমন বাবু চেন্নাইয়ের চার্লসকে ফাউল করলে ফ্রিকিকের বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু এই অপরাধে ইমনকে হলুদ কার্ড না দেয়ায় রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়ান চেন্নাইয়ের জাপানী মিডফিল্ডার কাটসুমি ইউসা। রেগে গজগজ করতে থাকা কাটসুমিকে সে সময় শ্রীলঙ্কান রেফারি লাকমাল উইরাককড্ডি ডেকে বলেন, ‘এই চাইনাম্যান (আসলে কাটসুমি চীনের না, জাপানী ফুটবলার) এটা চীন না, বাংলাদেশ’। কথাটি ভাল লাগেনি কাটসুমির। ফুঁসতে ফুঁসতে তিনি চলে আসেন টাচলাইনে। সেখানে এসে চতুর্থ অফিসিয়ালের টেবিলে লাথি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। শুধু তাই নয়, রেফারিকেও মারতে তেড়ে যান। এই ঘটনায় চেনাইয়ের অফিসিয়ালরা এক পর্যায়ে খেলোয়াড়দের মাঠ ছাড়তেও বলেন। উপায় না দেখে ৩১ মিনিটে পরিস্থিতি শান্ত করতে কাটসুমিকে লালকার্ড দেখান রেফারি। এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি ভারতের আই লীগের চ্যাম্পিয়নরা। যে কারণে তারা না খেলে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে চার মিনিট পর (সবমিলিয়ে ১০ মিনিট পর) অর্থাৎ ৩৫ মিনিটে ১০ জন নিয়ে খেলতে নামে চেন্নাই। একজন কম নিয়ে মাঠে নেমে যেন নবোদ্যমে শুরু করে কোচ মোহাম্মদ আকবরের দল। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে বসুন্ধরার দুর্গে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৩ মিনিটে অসাধারণ সংঘবদ্ধ গোলে সমতা ফেরায় ভারতীয় ক্লাবটি। মিডফিল্ডার মাশহুর শেরিথের শট কিংস গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বলে দারুণ শটে জালে জড়ান চেন্নাই অধিনায়ক পেড্রো জ্যাভিয়ের মাঞ্জি ক্রুস (১-১)। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে আবারও একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় বসুন্ধরার বখতিয়ারকে ফাউল করেন চেন্নাইয়ের মাশহুর। এ সময় ডাগআউটে বুসন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজেন তেড়ে যান চেন্নাই কোচ মোহাম্মদ আকবরের দিকে। তিনিও পাল্টা জবাব দেন তেড়ে গিয়ে। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে দু’জনকেই লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি। বিরতির পর গোল পেতে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে বাংলাদেশের লীগ চ্যাম্পিয়নরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৫৯ মিনিটে দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যায় ব্রুজেনের শিষ্যরা। ডানপ্রান্ত থেকে অধিনায়ক কলিনড্রেস ডি বক্সে দেন মাপা ক্রস। সেই ক্রসে চোখ ধাঁধানো হেডে গোল করেন কিরগিজস্তানের ফরোয়ার্ড বখতিয়ার দুশোবেকভ (২-১)। ৬৯ মিনিটে আরেকটি লালকার্ড দেখেন চেন্নাইয়ের ফুটবলার। এবার দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার রবার্টো সুয়ারেজ। ফলে ৯ জনের দলে পরিণত হয় আকবরের দল। দুইজন কম নিয়ে দুই মিনিট পর ভেল্কি দেখায় অতিথিরা। এ সময় চেন্নাইয়ের গোলরক্ষক গার্সিয়া সান্টানা লম্বা শট করে বল পাঠান প্রতিপক্ষের সীমানায়। হেডে বলটি ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন ডিফেন্ডার নুরুল ফয়সাল। সেই সুযোগে শরীরটাকে ঘুরিয়ে চলতি বলে জোরালো শটে বসুন্ধরার জাল কাঁপান ফরোয়ার্ড মাশহুর (২-২)। ৮৫ মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয় বসুন্ধরার। ডানপ্রান্ত থেকে উড়ে আসা ক্রসে বদলি কিংসলে এলিটার হেড গোলে প্রবেশের মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেন চেন্নাই গোলরক্ষক। অবশেষে ৮৮ মিনিটে আসে বসুন্ধরার জয়সূচক গোল। ডি বক্সের মাথা থেকে বদলি মিডফিল্ডার রবিউল হাসানের বাঁ পায়ের দূরপাল্লার শট চেন্নাই গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলে বল সামনে চলে আসে। সেখানে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ জালাল কদুহ প্লেসিং শটে বল জালে জড়িয়ে দেন (৩-২)।
×