ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনায় যোগ হলো সাকিবদের আরও দুই দাবি

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

আলোচনায় যোগ হলো সাকিবদের আরও দুই দাবি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একদিন (সোমবার) ক্রিকেটাররা ১১ দফা দাবি দিয়ে আন্দোলনের ডাক দিলেন। পরেরদিন (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন। ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেলেন। বিসিবি-ক্রিকেটারদের মধ্যে দূরত্ব তাতে আরও তীব্র আকার ধারণ করল। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হলো। সমাধান তাহলে মিলবে কবে? তৃতীয়দিনই (বুধবার) সমস্যার সমাধান হওয়ার পথ তৈরি হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাধান হলো না। উল্টো ২টি দাবি বাড়ালেন ক্রিকেটাররা। এবার ১৩ দফা দাবি জানালেন। আগের ১১ দফা দাবির সঙ্গে পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের বিসিবির লভ্যাংশ দেয়ার দাবিও তুললেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের হয়ে দাবিগুলো উত্থাপন করেছেন ক্রিকেটারদের আইনী পরামর্শক ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। বিসিবি যদি এই দাবিগুলো এখন মেনে নেয়, তাহলে ভারত সিরিজ হবে। ক্রিকেটাররাও সবধরনের ক্রিকেটে খেলতে শুরু করবেন। তা না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ক্রিকেটাররা যে ১১ দফা দাবি তুলেছিলেন, সেগুলো হচ্ছে-প্রথমত কোয়াবের বর্তমান কমিটির পদত্যাগ। দ্বিতীয়ত প্রিমিয়ার লীগ আগের মতো করতে হবে অর্থাৎ প্লেয়ার্স বাই চয়েজ পদ্ধতি বাতিল করে দলবদলের পুরনো নিয়মে যেতে হবে। তৃতীয়ত বিপিএলে আবার আগামী বছর থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফেরাতে হবে এবং এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের দাম বাড়াতে হবে। চতুর্থত প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ ফি ১ লাখ, বেতন বাড়াতে হবে, ১২ মাস কোচ ফিজিও দিতে হবে, প্রতি বিভাগে প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করতে হবে। পঞ্চমত ভালমানের বল দিতে হবে, ডিএ ১৫০০ টাকায় কিছু হয় না, যাতায়াতে বিমান ভাড়া দিতে হবে, হোটেল ভাল হতে হবে। ষষ্ঠতম চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা ও বেতন বাড়াতে হবে। চুক্তিতে ৩০ ক্রিকেটার রাখতে হবে। সপ্তমতম, দেশী সব স্টাফদের বেতন বাড়াতে হবে, কোচ থেকে গ্রাউন্ডস, আম্পায়ার সবার বেতন বাড়াতে হবে। অষ্টমতম, ঘরোয়া ওয়ানডে বাড়তে হবে, বিপিএলের আগে আরেকটি টি২০ হতে হবে। নবম ঘরোয়া ক্যালেন্ডার নির্ধারিত সময়ে করতে হবে। চূড়ান্ত করতে হবে। দশম ঘরোয়া লীগের পাওনা টাকা সময়ের মধ্যে দিতে হবে। ক্রিকেটারদের সর্বশেষ ও ১১তম দাবি ছিল বিদেশী ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ দু’টার বেশি খেলা যাবে না এমন নিয়ম তুলে দিতে হবে। এর সঙ্গে বুধবার ১২তম দাবি যোগ হয়েছে, পুরুষ ক্রিকেটে বিসিবির লভ্যাংশ ভাগ করতে হবে। ১৩তম দাবি নারী ক্রিকেটারদের জন্য। নারী ক্রিকেটেও লভ্যাংশ দিতে হবে। বেতন বাড়াতে হবে। পুরুষ ক্রিকেটারদের মতো বেতনভাতা দিতে হবে। এই ১৩ দাবি ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে আইনী পরামর্শক উপস্থাপন করেন। বুধবার সকাল হতেই চাউর হয়ে গেল সমাধান হতে পারে। কেন এমনটি মনে হলো? বিসিবি যে ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে। যেটি মঙ্গলবার হয়নি। তা বুধবার হয়েছে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন যে আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। কথা বলেছেন। তাতে করে একটু স্বস্তির হাওয়া বইতে শুরু করে দেয়। ক্রিকেটাঙ্গনে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট নিয়ে যে অস্বস্তি তৈরি হয় তা স্বস্তিতে পরিণত হওয়ারও ইঙ্গিত মিলে। কিন্তু দিনশেষে তা অস্বস্তিতেই বৃত্ত বন্ধী হয়ে থাকল। সিইও সুজনই যেমন বলেছেন, ‘বোর্ড সভাপতির নির্দেশে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তামিম ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে আমাদের। আমরা উল্লেখ করি যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি নিষ্পত্তির ব্যাপারে। অবস্থানটা আমরা পুনর্ব্যক্ত করি, এসব কিছুই অর্থনৈতিক ব্যাপার, বসলেই হয়তো বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হবে। তিনি (তামিম) আমাদের জানিয়েছেন যত দ্রুততার সঙ্গে উনার যারা সতীর্থ আছেন, সবার সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানাবেন।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তাই আমরা আশা করছি যে কোন সময় হয়তো তারা আমাদের জানাবেন। আমরা জানতে পেরেছি উনারা (খেলোয়াড়রা) আজকে (বুধবার) কোন এক সময় কোথাও একত্রিত হবেন, কোথাও বসবেন। সেক্ষেত্রে আরও খোলামেলাভাবে যদি বলতে চাই, বিকাল ৫টার সময় আমাদের পাওয়া যাবে। আমাদের যে কোন জায়গায় জানালে, বোর্ডে হতে পারে বা যে কোন জায়গায় হতে পারে, যেখানেই বসতে বলবে আমরা রাজি।’ যখন সিইও এ কথাগুলো বলেছেন, জানিয়েছেন ধর্মঘট ডাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবি বসতে রাজি, তখনই জানা গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান বিসিবি সভাপতি পাপন ও বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করতে একজন মধ্যস্থতাকারীর দরকার ছিল। সেই দায়িত্ব নাকি পালন করেন ওয়ানডে অধিনায়ক ও জাতীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন মাশরাফি। ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী মধ্যস্থতা করার দায়িত্ব দিয়েছেন মাশরাফিকে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিসিবি সভাপতি ও দুর্জয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে স্বাভাবিকভাবেই বিসিবি সভাপতি পুরো পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। গণভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বিসিবি সভাপতি ক্রিকেটারদের সব দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বলেন, ‘বিষয়টি (প্রধানমন্ত্রীকে) জানিয়েছি। এরই মধ্যে তিনিও বিষয়টি জেনেছেন। আমরা খেলোয়াড়দের সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।’ সঙ্গে আবারও তিনি বলেন, ‘তাদের (ক্রিকেটারদের) সঙ্গে যোগাযোগের পরও ফোন ধরছে না। শুধু টাকার কারণে তারা এমনটি করছে না। এখানে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে।’ গণভবন থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হন। তখন বিসিবি সভাপতি ও পরিচালকরা ক্রিকেটারদের আশায় থাকেন। ক্রিকেটাররা বিসিবিতে আসবেন, সমাধানের লক্ষ্যে কথা বলবেন, এমন আশায় থাকেন। গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস ক্রিকেটারদের বিসিবিতে আসার আহ্বান জানান। বলেন, ‘বিসিবি সভাপতি আছে, এখন আমরা আলাপ-আলোচনা করতে পারি। এটার জন্য অপেক্ষা করছি। সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। আমরা আগেও বলছি, আমাদের দুয়ার খোলা।’ জালাল ইউনুস এমন কথা বলার পরই জানা গেছে নিজেদের দাবি-দাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গুলশানের একটি হোটেলে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করবেন ক্রিকেটাররা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরাও দেখা করতে গেছেন। দেখা করে আন্দোলন কেন করতে বাধ্য হলেন তা প্রধানমন্ত্রীকে জানান সিনিয়র ক্রিকেটাররা। এরপর গুলশানে একটি হোটেলে নিজেরা আলোচনায় বসেন। তারপর সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের দাবি আরও জোরালো করলেন ক্রিকেটাররা। এমনকি আরও দুটি দাবি বাড়ালেন। এই দাবি মানা হলে সবধরনের ক্রিকেটে ফিরবেন ক্রিকেটাররা। নয়তো আন্দোলন চলবে।
×