স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা পটুয়াখালী ॥ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শিক্ষক সঙ্কটে ভুগছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের উত্তর চরবিশ্বাস সিরাজউদ্দিন সরদার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় সোয়া দু’শ’ শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দু’জন। এরমধ্যে আবার একজনকে প্রায়শ নানা দাফতরিক কাজে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না যথাযথ শিক্ষা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও উদ্বেগে ভুগছেন।
এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় বিহীন ১৫০০ গ্রামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা’ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়টি চালু হয়। শুরু থেকেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের চাপ বাড়ে। কারণ, এর আগে ওই গ্রামের শিশুদের প্রাথমিক লেখাপড়ার কোন সুযোগ ছিল না। অভিভাবকরাও শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সমানে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে বিদ্যালয়টি শুরু হয় ২৮৭ জন শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে। কিন্তু প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সঙ্কট দেখা দেয়। স্থানীয়রাসহ স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দু’জন নিয়মিত শিক্ষক ও দু’জন প্যারা শিক্ষক নিয়ে স্কুলটি শুরু হলেও কয়েক মাসের মধ্যে একজন শিক্ষক অন্যত্র বদলি হন। আরেকজন শিক্ষক গত জুন মাসে অবসর গ্রহণ করেন। ফলে শুরু থেকে যে শিক্ষক সঙ্কট দেখা দেয়, যা বর্তমানে তীব্র আকার নিয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় বর্তমানে দু’টি সিফটে স্কুলটি চলছে। কিন্তু শিক্ষক রয়েছে মাত্র দু’জন। কয়েকজন অভিভাবক জানান, স্কুলটি প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় শিক্ষকদের কেউই এখানে আসতে চান না। আবার কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে অনেকটা উদাসীন। শিক্ষক সঙ্কটের কথা বহুবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে অবহিত করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বর্তমানে ২১১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র একজন নিয়মিত ও একজন প্যারা শিক্ষক আছেন। এদের মধ্যে আবার একজনকে প্রায়শ নানা দাফতরিক কাজে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। ফলে স্কুলটিতে শিক্ষাদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষক মজিবর রহমান জানান, ২ সিফটের বিদ্যালয়টিতে ২ জন শিক্ষকের পক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেক সময় দাফতরিক কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তখন আরও সঙ্কট দেখা দেয়। বিদ্যালয়ের জমিদাতা মোজ্জামেল হোসেন সরদার জানান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উত্তর চরবিশ্বাস গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার তিন বছরেও শিক্ষক সঙ্কট দূর হয়নি। এ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন অভিভাবকরা। এ বিষয়ে ওই ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান শিক্ষক স্বল্পতার কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা সদর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং দুর্গম পুরো ক্লাস্টারেই শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মীর রেজাউল ইসলাম বলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই স্কুলে চাহিদা মোতাবেক শিক্ষক পদায়ন করা হবে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের পক্ষে ফোরকান শিকদার বলেন, স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক সঙ্কটে তা ব্যর্থ হতে বসেছে।