ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নোবেল নিয়ে মজার তথ্য

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

নোবেল নিয়ে মজার তথ্য

আলফেড নোবেলের নাম জানেন না এমন শিক্ষিত মানুষ খুব বেশি নেই। তিনি শুধু বিজ্ঞানী ছিলেন না, রসায়নবিদ, প্রকৌশলী এবং সফল শিল্পপতি ছিলেন। আপনি কি জানেন- তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। ১৮৬৬ সালে প্রচণ্ড শক্তিধর ডিনামাইট তারই আবিষ্কার। এরপরই ঘটল বিস্ময়কর ঘটনা। ডিনামাইট এতটাই জনপ্রিয় হলো যে, আলফ্রেড আরও ধনী হয়ে উঠলেন। কিন্তু তিনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে ডিনামাইট আবিষ্কার করেন, সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূর্ণ হলো না। ডিনামাইট যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হতে লাগল। অর্থাৎ মানব কল্যাণের বদলে মানবের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হতে লাগল আলফ্রেডের আবিষ্কার। বেচারা মনে প্রচণ্ড আঘাত পেলেন। সেই দুঃখবোধ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অর্থকড়ি ও যাবতীয় সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয় করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, এখনকার হিসাবে ২৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গণিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় না। এর কারণ অনেকেই খুঁজেছেন, কিন্তু ঠিকঠাক উত্তর বোধহয় পাননি। নোবেল কমিটির মতে, গণিতের কোন কিছু মানব কল্যাণে অথবা মানব জীবনে বড় কোন ভূমিকা রাখে না! কোন এক বিচিত্র কারণে নোবেলের মনে হয়েছিল গণিতের তেমন কোন ব্যবহারিক গুরুত্ব নেই। মজার ব্যাপার, নোবেলের প্রেমিকা ছিলেন গণিতবিদ। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে রাগ করে নোবেল গণিতে পুরস্কার রাখেননি বলে যে গল্প প্রচলিত সেটা ভিত্তিহীন। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে মাদাম কুরি পরিবারের সদস্যরা বিস্ময়। মাদাম কুরির স্বামী পিয়েরে কুরি ছিলেন স্বনামখ্যাত বিজ্ঞানী। স্ত্রীর সঙ্গে ১৯০৩ সালে তিনি রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এ ঘটনার আট বছর পর ১৯১১ সালে মাদাম কুরি আবারও এই পুরস্কার পান। এবার তাকে পুরস্কার দেয়া হয় বিশুদ্ধ রেডিয়াম পৃথকীকরণের জন্য। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে মাদাম কুরি ছাড়া অন্য কোন নারী বিজ্ঞানী দু’বার পুরস্কার পাননি। আরও একটি কারণে মাদাম কুরি পরিবারের নাম নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মাদাম কুরির বড় মেয়ে আইরিন জুলিও কুরি মায়ের মতোই স্বামী ফ্রেডারিক জুলিওর সঙ্গে যৌথভাবে রসায়ন শাস্ত্রে এই পুরস্কার অর্জন করেন। এখানেই প্রতিভাদীপ্ত এই পরিবারের সাফল্যের শেষ নয়। মাদাম কুরির কনিষ্ঠা কন্যা ইভ কুরির স্বামী হেনরি ল্যাবোসে ১৯৬৫ সালে নোবেলে শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ভাবতে অবাক লাগে, নোবেল পুরস্কার মাদাম কুরি পরিবারের সদস্যরা যেন নিজেদের করে নিয়েছিলেন! নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন অনেকবার, কিন্তু একবারও পাননি এমন বিখ্যাত লোকের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। ধরুন হারুকি মুরাকামির কথা। জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক। গত কয়েক বছর ধরেই তার নাম নোবেল শর্ট লিস্টের প্রথম দিকে থাকে। কিন্তু এখনও অধরাই রয়েছে সেই পুরস্কার। লিও টলস্টয়ের নাম সাহিত্য জগতে জ্বলজ্বল করছে। ১৯০১ সালে যখন এই পুরস্কার দেয়া শুরু হয় তখনই তিনি সাহিত্য বিভাগে নোবেল পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯০২ সালে তাকে মনোনীত করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টলস্টয়কে নোবেল দেয়া হয়নি। তাতে টলস্টয়ের কিছু না হলেও নোবেল পুরস্কারটাই পড়েছে বিতর্কে! মহাত্মা গান্ধীকে দুনিয়া চিনে শান্তির দূত হিসেবে। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯ ও ১৯৪৭ সালে গান্ধীকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়ার জন্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তার নাম বাদ দেয়া হয়। অনেকবার মনোনীত হওয়ার পরও এই মহামূল্যবান পুরস্কার পাননি ফ্রয়েডও। নোবেল পুরস্কারের ছ’টি বিভাগ একসঙ্গে ধরলে পুরস্কার জয়ের সময় বিজয়ীদের বয়স দাঁড়ায় গড়ে ৫৯ বছর। বিজ্ঞানবিষয়ক নোবেলগুলোর ক্ষেত্রে বিজয়ীদের গড় বয়স ৫৭, চিকিৎসাবিদ্যায় আরও কম, ৫৫ বছর। নোবেলের ইতিহাসে তরুণতম বিজয়ী ছিলেন লরান্স ব্র্যাগ, যিনি ১৯১৫ সালে পদার্থবিদ্যায় এই পুরস্কার পান। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর। কিন্তু এখন সেই স্থান দখল করেছেন মালালা ইউসুফজাই। যিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই পুরস্কার পেয়েছেন। অপরদিকে বিজ্ঞানবিষয়ক নোবেলের ইতিহাসে প্রবীণতম বিজয়ী হলেন ৮৮ বছর বয়সী পদার্থবিদ রেমন্ড ডেভিস জুনিয়র। তবে তার চাইতেও বেশি বয়সের মানুষ এই পুরস্কার জিতেছেন, যেমন দুই অর্থনীতিবিদ লেওনিড হুরউইৎস ও লয়েড শেপলি, যাদের বয়স ছিল ৯০ এবং ৮৯। ২০১১ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয় করেন ব্রায়ান স্মিথ। অথচ তার স্বর্ণপদকটি আটকে দেয় তার দেশের বিমানবন্দর। যদিও পরে তারা ছেড়ে দেন। ব্রায়ান ডার্ক এনার্জির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারার জন্য এই পদকে ভূষিত হন। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, আপনি যত বড় মাপের পদকপ্রাপ্ত হন না কেন, এয়ারপোর্টে আপনার নিস্তার নেই। আগে চেক তারপর মুক্তি। তিনজন নোবেলজয়ী তাদের পুরস্কারের খবর জানতে পেরেছিলেন কারাগারে থাকাকালীন। এদের প্রত্যেকেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন শান্তি স্থাপনের জন্য। তিনজন হলেন জার্মান সাংবাদিক কার্ল ভন অজিটস্কি (১৯৩৫ সাল), বার্মিজ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আউং সান সুচি (১৯৯১ সাল) এবং চৈনিক মানবাধিকার কর্মী লিও জিয়াওবো (২০১০ সাল)। আউং সান সুচির নোবেল পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন তার এই পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া হোক। মূলত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারে তার নীরবতার কারণেই এই দাবি উঠেছে।
×