ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান স্মরণ

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর্ট স্কুলের বাঁধাধরা জীবন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার রীতিনীতি তার সহজাত বোহেমিয়ান জীবনযাত্রার সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছিল। তার কাছে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি, তার আধুনিকতা ছিল জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন প্রখ্যাত এ শিল্পী। সম্মাননা প্রদান, পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মহান এ শিল্পীকে স্মরণ করা হয় রাজধানীর শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার হলে শনিবার বিকেলে। চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ২৫তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্যানভাস অব বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চিত্রশিল্পী দিলরুবা লতিফ, শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাজ্জাদ কাদির। সভাপতিত্ব করেন কবি ও লেখক প্রাকৃতজ শামিমরুমি টিটন। অনুষ্ঠানে ‘এসএম সুলতান সম্মাননা ২০১৯’ প্রদান করা হয় বরেণ্য ১০ শিল্পীকে। এরা হলেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী (ভাস্কর্য), প্রফেসর ড. হীরা সোবাহান (ছাপচিত্র), ডাঃ এম এ বারী (চিত্রকলা), মোঃ মাসুদুর রহমান (মৃৎশিল্প), মোঃ মাসুদুল হক (ভাস্কর্য), মাহফুজা বিউটি (চিত্রকলা), ইন্দ্রজিৎ ঘোষ (কারুশিল্প), নাজমুল কাদির কায়কোবাদ (ফ্যাশন ডিজাইন), ফাতেমা আক্তার (ফ্যাশন ডিজাইন) ও লাইজু নিপা (রন্ধন শিল্প)। অনুষ্ঠানের শুরুতে পর্দায় চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের কর্মময় জীবনের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন হয়। অতিথিরা বলেন, এসএম সুলতান নড়াইলের মাছিমদিয়ার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেয়ার সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও তার পিতা ১৯২৮ সালে তাকে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করান। বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে ছবি আঁকতেন। পরবর্তিতে কলকাতা আর্ট স্কুলে পড়ার সুযোগ পান। সেখান থেকে তিন বছর পর একজন ফ্রিল্যান্স শিল্পীর জীবন বেছে নেন। সুলতান ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষ। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে ছিলেন ভবঘুরে। তিনি প্রকৃতিকে ভালবাসতেন একজন রোমান্টিক কবির আবেগ দিয়ে। এবং সে রকম তীব্রতা নিয়ে তিনি অস্বীকার করেছেন যান্ত্রিকতাপিষ্ট নগর ও নাগরিক জীবনকে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তিনি ছোট-বড় শহরে ইংরেজ-আমেরিকান সৈন্যদের ছবি এঁকে ও তাদের কাছে ছবি বিক্রি করে এবং প্রদর্শনী করে জীবন ধারণ করতেন। তার চরিত্রে ছিল পার্থিব বিষয়ের প্রতি অনীহা। শিশুদের নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখতেন। শেষ বয়সে নড়াইলে ‘শিশুস্বর্গ’ ও ‘চারুপীঠ’ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে এর কিছু বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তার জীবনের মূল সুরটি বাঁধা ছিল গ্রামীণ জীবন, কৃষক ও কৃষিকাজের ছন্দের সঙ্গে। তিনি তার চিত্রকলায় কৃষক পুরুষের শরীরকে করেছেন পেশীবহুল এবং বলশালী, কৃষক রমণীর শরীরকে এঁকেছেন সুঢৌল ও সুঠাম গড়নে। তাকে দিয়েছেন যুগপৎ লাবণ্য এবং শক্তি। সুলতান আশির দশক থেকে নড়াইলে থেকে যেতে অনেকটা বাধ্য হয়েছিলেন। তার কাছে আশ্রয় নেয়া মানুষ, শিশু এবং জীবজন্তুর প্রতি ভালবাসার কারণে নিজের বাড়িটিকে এদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। একটি চিড়িয়াখানা ছিল তার। শিশুদের জন্য একটি বিরাট নৌকাও বানিয়েছিলেন। আলোচনার পর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
×