ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধের উদ্যোগ নেবে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়

মোষের মাংস আমদানি বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন খামারিরা

প্রকাশিত: ১০:১৬, ৭ অক্টোবর ২০১৯

   মোষের মাংস আমদানি বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন খামারিরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে গরুর উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। কেউ কেউ বাণিজ্যিক মোষের খামার গড়ে তুলেছেন। পর্যাপ্ত দেশী পশু থাকা সত্ত্বেও বেড়েছে মোষের মাংস আমদানি। কয়েক মাসের ব্যবধানে হিমায়িত মোষের মাংস এবং যকৃত ও ফুসফুস আমদানি বেড়েছে। কোন ধরনের উন্নত পরীক্ষা ছাড়াই এসব মাংস প্রবেশ করেছে দেশে। কোথাও কোথাও এসব মাংস গরুর মাংস বলে বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। ফলে এ মাংস দেশের বাজারে ঢোকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমিন ভোক্তারাও প্রতারিত হচ্ছেন। এতে দেশের পশু সম্পদ খাত বিশেষ করে খামারিদের উদ্বেগ বাড়ছে। লাখো তরুণের বেকারত্ব ঘোচানোর পথ রুদ্ধ হতে পারে। সূত্র জানায়, বন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে ৫-৬ লাখ কেজি মোষের মাংস আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্র জানায়, ’১৯ সালের এপ্রিলে হিমায়িত মোষের মাংস ও ওফালস (যকৃত, ফুসফুসসহ অন্যান্য) আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার কেজি। মে মাসে ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার কেজি, জুনে ৬ লাখ ৩ হাজার কেজি, জুলাইয়ে ৫ লাখ ৪৭ হাজার কেজি ও আগস্টে ৩ লাখ ৯১ হাজার কেজি। গত পাঁচ মাসেই মোষের মাংস আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ লাখ ৫২ হাজার কেজি। প্রতিবেশী দেশ থেকে এসব মাংস আসছে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান এ বিষয়ে বলেন, পশু পালনের মাধ্যমে দেশের প্রায় দেড় কোটির বেশি পরিবার সরাসরি যুক্ত রয়েছে। এছাড়া পরোক্ষে রয়েছে আরও কোটি পরিবার। দুগ্ধ শিল্প ও মাংস শিল্প একই সূত্রে গাঁথা। মাংস আমদানিনির্ভর হলে তরুণরা বেকার হয়ে পড়বে। পাশাপাশি দুগ্ধ শিল্পও আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়তে বাধ্য হবে। ফলে মাংস আমদানির সিদ্ধান্ত হবে দেশের জন্য আত্মঘাতী। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দেশে যারা এই মাংস আনে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আনে। মিথ্যা কথা বলে গরুর মাংস বলে বিক্রি করে। এসব যাতে বন্ধ হয় এজন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। দেশের মানুষ টাটকা মাংস খেতেই পছন্দ করে। আমদানির মাংসে রোগ আছে না নাই তা বলা মুশকিল। তবে এসব মাংস অনেক চেইন সুপার শপে বিক্রি হয়। ধনাঢ্যরা কেনেন। কোন রোগ থাকলে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রয়োজনে আমরা আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে বেশি গরু উৎপাদন হচ্ছে দেশে। বিদেশ থেকে মাংস আনা হলে গ্রামের কৃষকসহ প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎ্পাদিত গরুর উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হবেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামবে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান রফতানি খাত চামড়া শিল্পে কাঁচামালের সঙ্কট দেখা দেবে। পাশাপাশি সঙ্কটে পড়বে দেশের ট্যানারি ও দুগ্ধ উৎপাদন শিল্প। এছাড়া এ খাতে নিয়োজিত ৭০ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগে বাধাগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মহাব্যবস্থাপক ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. শরীফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশে মাংস আমদানি করা হলে খামারিরা কর্মহীন হবেন। হিমায়িত মাংস আমদানিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশে উন্নত মানের পরীক্ষাগার নেই। ফলে ভোক্তারা বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকছেন। আবার আমদানির কারণে খামার বন্ধ হলে জৈব সারের সঙ্কট দেখা দেবে। মাংসের চাহিদার শতভাগ পূরণ করছি দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে। আমদানি বন্ধ করতে না পারলে দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই শিল্প রক্ষায় মাংস আমদানি এখনই বন্ধ করতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মাংসের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, আমদানি করা মাংস হিমায়িত করে আনা হয়। এই মাংস পরে কসাইরা বরফ কাটিয়ে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে। তবে এসব মাংসের বেশিরভাগই যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন খাবার হোটেলে। মাংসটি হোটেলগুলোয় আবার ফ্রিজিং করা হচ্ছে। দুবার ফিজিংয়ের কারণে এই মাংস সম্পূর্ণ অনিরাপদ হয়ে উঠছে। আমদানির মাংস পরীক্ষার যথাযথ ল্যাব দেশে নেই। যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, পাশাপাশি প্রতারণার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে মানুষের। এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসী উদ্দিন বলেন, কোন প্রকার হিমায়িত মাংস কিংবা প্রক্রিয়াজাত মাংস আমদানি অনুমোদন না দেয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে অনুরোধ করেছি। আমদানি আদেশ সংশোধনে বলা হয়েছে। আমাদের দেশে আমদানির মাংসে রোগব্যাধি আছে কিনা তা পরীক্ষা করার মতো তেমন যন্ত্র বা পরীক্ষাগার নেই। কিছু ল্যাব আছে চট্টগ্রামে, কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়। দেশের খামারিরা এখন চাহিদার শতভাগ পূরণে সক্ষম। গত কোরবানির সময় দেশের বাইরে থেকে কোন গরু আমাদের আনতে হয়নি। কোরবানির সময় আমাদের দেশে প্রায় ১০ লাখ গরু অবিক্রীত থেকে গেছে। তাই আমদানি বন্ধ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেব।
×