ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মতিন বৈরাগী

কবিতা ॥ শিল্পের আদিতম রূপ

প্রকাশিত: ১২:৫২, ৪ অক্টোবর ২০১৯

কবিতা ॥ শিল্পের আদিতম রূপ

কবিতা সকল শিল্পের আদি রূপ; উল্লেখ করেছেন ভিগো। তেইনের মতে শিল্প সাহিত্য নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নয় পাঠকের জন্য। ‘কবিতা একটি বৃক্ষের মতো যার নিচে কেউ বসে বিশ্রাম করতে পারে, প্রশান্তি পেতে পারে, প্রয়োজনে ডালপালা ছিঁড়ে নিতে পারে, আবার চলেও যেতে পারে’। কবিতার ইতিহাস অতি পুরনো, হামান লিখেছেন : ‘কাব্য হলো মনুষ্য সমাজের মাতৃভাষা অকর্ষিত ভূমি, কর্ষিত কৃষিক্ষেত্র থেকে পুরনো, লেখা থেকেও পুরনো; আবার গান থেকে ও পুরনো, বিনিময় প্রথা বাণিজ্যিক প্রথা থেকে বেশি পুরনো; আমাদের পূর্ব পুরুষেরা যা বলেছেন তা কাব্যাকারে বলেছেন এবং তাদের বাগ্মিতায় চিত্রকল্প প্রকট হতো।’ সুপ্রাচীন কাল থেকে কাব্য মানুষকে আহ্লাদিত করেছে এবং নতুন করে কোনো বিষয় উচ্চারণে গুরুত্ববহ হয়েছে। তাই কবিতা ধর্মে, শাস্ত্রে, রাষ্ট্রে, আইনে, রাজকীয় সিদ্ধান্তে মানবপ্রিয় হয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পেরেছে। ‘দর্শনকে যুক্তি ও যুক্তিবিদ্যার বিপরীতে একটি নতুন চিন্তাপদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে’ বলে মনে করতেন মার্টিন হাইডেগার। হাইডেগার কবিতায় ও দর্শনে একই স্তরের এবং দুই-এর চিন্তাধারায় মিল খুঁজে পেয়েছেন। হাইডেগার হোন্ডারলিনের ওপর রচিত প্রবন্ধে বলেছেন আমাদের অস্তিত্ব কাব্যময়।’ কবিতা তার প্রকাশে সময়ের পরিবর্তনে যে সামাজিক জীবনের পরিবর্তন ঘটায় তার গতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে কাঠামোরূপ বদল করে, সে হয়ে ওঠে অনিবার্য এক নির্মাণ যার তলে একজন মানুষ বসতে পারে, রূপ ও গঠনের বিন্যাসকে উপলব্ধি করতে পারে। আবার কোনো কোনো কবিতার বিষয় ও বক্তব্য প্রিয়তা মানব মনে এমনই প্রভাব ফেলে যে তার অবসর হয়ে ওঠে সেই কবিতার শব্দাবলী বা পঙক্তির উচ্চারণের গুঞ্জরণ। তাই কবিতা মনুষ্যসমাজে স্বস্ব চেতনা কাঠামোতে বিন্যস্ত হয় এবং প্রকাশে স্ফূর্তি পায়। এ যেনো অরণ্যের তরুবীথির মর্মরধ্বনি হৃদয়ের; প্রাণ উৎসারণের এক বাণী, লিখিয়ে নিয়েছে কেউ কবিকে দিয়ে। এরিস্টেটল প্রেরণাকে বস্তু লগ্ন বললেও তার গুরু প্লাটো প্রেরণাকে ঐশী এবং দেবী মিউজের অনুগ্রহ মনে করতেন। হোমারও প্রেরণা দেবীর বন্দনা গেয়েছেন তার কাব্যে। মিল্টন কিংবা সেক্সপিয়ার প্রেরণা ঐশী বলেই বিশ^াস করতেন। ব্লেক চার বছর বয়স থেকে জানালায় কারো কথা শুনতে পেতেন। যদিও ব্লেককে লোকে উন্মাদ ভাবতো, বাস্তবে তিনি উন্মাদ ছিলেন না, তবে তার মধ্যে সৃষ্টিতাড়না ছিল। আমাদের সাহিত্যে নাটকে যাত্রায় থিয়েটারে প্রেরণাদেবীর বন্দনা আছে, রবীন্দ্রনাথেও প্রেরণাদাত্রীর কৃপা প্রার্থনা আছে। ॥ দুই ॥ কোন কোন বিষয়, ভাবনাকে অনেক সময়েই ঘোরতরভাবে দখল করে রাখে, এই ভাবনারও প্রতিভাবনা থাকে। ফলে চিন্তার বহুত্ববাদী বর্গের স্ফুরণ ঘটে এবং সৃষ্টিশীলতার জন্য দ্যার্থক হয়ে ওঠে। চিন্তা বরাবর এক রেখায় অগ্রগামী থাকে না, ভাঙন থাকে, উল্লম্ফন থাকে, থাকে উদ্ভটতা। আবার কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হয় প্রকাশে। বদলায় রূপ এবং বার্তাও। যা ভাবা হয়েছিল যা প্রেরণা হয়েছিল প্রকাশ কালে তার বহুকিছু বদলে যায়, চলমান নদীর মতো। বহু কিছু যুক্ত হয় এবং বস্তুজগতের একটি নকল স্পষ্ট হয়ে ওঠে কবির মনজগতে। তাই কবিতা হুবহু তাই নয়, যা বা যে সকল বস্তু সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী, উত্থিত আবেগাবলী, ভাবনার প্রিয়তা ও তৎসংলগ্নতা কখনও কখনও সবটাই বদলে যেতে পারে। এ যেনো কবির ভাবনার ভেতর থেকে আরেকটি ভাবনার উদ্ভব যা মনে হতে পারে আমিতো এমন ভাবিনি তখন! এমন বিস্ময়বোধও অনেক সময় কবিকেই অবাক করে দিতেই পারে। এই নতুনভাবনা বস্তুত সময়ের দাবি। মহা শূন্যতাকে মাঝে মাঝে অনুভব করে মানুষ, অনুভব করে কবিরাও। তাই কবিতা কখনও কখনও এমন এক প্রকাশ হয়ে পড়ে যা আপন অস্তিত্বকেও অস্বীকার করতে চায়, অস্বীকার করতে চায় সমাজ রাজনীতি এবং বৃত্তবদ্ধ জীবন। এ কারণে কবিতা বর্ণিত বিষয়ের চাইতেও ভিন্ন বিষয়কে ধারণ করতে পারে যা পাঠককে নাড়া দিতে পারে একেবারে বিপরীতে। মুহূর্তের গভীরেই জাগরণ আর সুষুপ্তির যে সমাবর্তন কবিতা তার দ্বিরালাপকে স্পর্শ করতে চায়। [কুমার চক্রবর্তীর প্রবন্ধালোকে] অনভ্যস্ত পাঠক একটি ভালো কবিতা থেকে হঠাৎ ফিরে যেতে পারেন, কিন্তু অভ্যস্ত পাঠক এরকম কবিতাকে ফেলে উঠবেন না বরং খুঁটিয়ে দেখে নিতে চেষ্টা থাকবেন যে কবিতাটি যে রহস্য ধারণ করে জটিল রূপ পেয়েছে তার নাভিমূলটি কোনদিকে। তখনই কবিতা তার সার্থকতায় নবরূপ লাভ করে। সে কারণে মার্কস এঙ্গেলস কাব্য নন্দন প্রসঙ্গে মনে করতেন শিল্পসাহিত্যকে বুঝতে, জানতে, আনন্দকে উপলব্ধি করতে পাঠকেরও প্রস্তুতকৃত মন লাগবে। শিল্প-সাহিত্য-কাব্য সমাজ জীবনের প্রতিকূল অবস্থায় জন্মকে অনিবার্য করে। অনেক সময় দেখা যায় শিল্পী বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থকে উপজীব্য করে তার সৃষ্টিকে শাসকের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সমর্থন জানিয়েছে, আসলে সমাজ জীবনের মধ্যে যে প্রকৃতির বিরোধিতা শিল্প-সাহিত্যে তার প্রতিফলন ঘটে। সুতরাং সমাজ জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তার পর্যালোচনাও আবার সাহিত্যে গুরুত্ব পেয়ে সাহিত্য হয়ে ওঠে এক অলঙ্ঘনীয় প্রতিবাদ। বালজাক জন্মেছিলেন অভিজাতকুলে, তিনি রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন অথচ তার সৃষ্টি চমকে দিয়েছিল সে কালের ফরাসী সমাজকে এবং ত্বরান্বিত করেছিল ফরাসী বিপ্লব। ট্রিলিংয়ের মতে ‘সাহিত্য-সমালোচনা সর্বদাই ঐতিহাসিক বীক্ষা, কারণ সাহিত্য একটি ঐতিহাসিক শিল্প’। ॥ তিন ॥ কেবলমাত্র আবেগ বা কল্পনাই একজন কবির জন্য যথেষ্ট নয় তার প্রকাশে কিংবা রূপ নির্মাণে এজন্য দরকার প্রতিভার। একজন খেলোয়াড় একজন পড়ুয়া একজন চিকিৎসাবিদ প্রমুখ বা একজন কবি বা শিল্পীর প্রতিভার বিকাশ ঘটে কোনো একটি বিষয়ে স্থিরমস্তিষ্ক ও চিত্ত- নিবদ্ধতায়, রাজনৈতিক চেতনা, প্রশিক্ষণ এবং অদম্য আকাক্সক্ষায়। তবুও যেনো নির্জনতা এবং একাকিত্ব ভাবুকমনকে বেশি দোলায়িত করতে পারে এবং বিষয়ের গভীর তলদেশে প্রবেশের মধ্যদিয়ে তার অনুসন্ধানকে বিস্তৃত করতে পারে। যেমন বাল্মিকী। চিত্ত নিবদ্ধতায় আসক্তি থেকে মুক্ত হয় ব্যক্তির কল্পনাশক্তি; রচিত হয় রামায়ণ। প্রতিভা নির্মাণ দক্ষতাকে বাড়ায়। ইতালির ফ্লোরেন্সের গির্জায় দুটি দরজার কাজ করেছিলেন জগত খ্যাত শিল্পী গিবের্তি। তার ৭৭ বছর জীবনের কেটে যায় ৪৮বছর। ১৪২৫ সালে কাজ শুরু করে শেষ দরজাটি তিনি শেষ করেন ১৪৫২তে, ২২ বছর সময় নিয়ে আর প্রথমটি শেষ করেছিলেন এই প্রতিভাধর শিল্পী ২১ বছর সময় নিয়ে। এই দরজা যখন জনসম্মুখে উন্মোচিত হয় তখন ফ্লোরেন্সবাসীদের জয়ধ্বনি আর থামে না, তারা বলল হ্যাঁ এই হলো আমাদের অহঙ্কার। একজন বিখ্যাত ভাস্কর বললেন ‘এতো স্বর্গের দরজা’, ‘গেটস অব প্যারাডাইস’ এই দরজায় ওলড টেস্টামেন্টের দশটি উপাখ্যান আছে। [গিবের্তির সময়কাল ১৩৭৮-১৪৫৫, ইয়োরোপের ভাস্কর্য, অশোকমিত্র] সে কারণে সৃষ্টিশীল মানুষের নির্জনতাও প্রয়োজন। আবার সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থাও একজন শিল্পীকে প্রেরণা দেয়, নানা ঘটনাবলী থেকে সে লাভ করে প্রেরণা। যেমন মার্কেজ-এর একশ’ বছরের নিঃসঙ্গতার প্রেরণা ছিল তার সমাজ যা চারশ বছর উপনিবেশিক শাসনে আটকে পড়েছিল এবং যার জের আজও লাতিন সমাজ টানছে। ‘কর্নেল কে কেউ চিঠি লেখেনি’ এই প্রেরণা তার আকাশলব্ধ জ্ঞান নয়, লাগাতার যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্যে এমনটিই ঘটেছিল, কেবল মাত্র প্রতিভা তাকে সংগঠিত রূপ দিতে পেরেছে এবং বলাতে পেরেছে ‘গু খাব’। নজরুল যে বিদ্রোহী লিখলেন তাও কিন্তু কলোনিয়াল শাসনের বিরুদ্ধচারণ সমাজে জাগ্রত ছিল। নজরুল তার সঠিক রূপকার। কবি ফররুক আহমদের জাগরণী কবিতাকে ইসলামী বলে চালিয়ে দেয়ার অর্থ সঙ্কুুচিত করা, বরং সমাজগঠন, দেশ ও সময়কেই তিনি উপজীব্য করেছেন। ॥ চার ॥ মানুষের জিজ্ঞাসু মনের রূপভেদ হলো প্রকাশ [এক্সপ্রেশন] এবং ধারণা [কনসেপ্ট ] প্রথমটি দ্বিতীয়টির সাহায্য ছাড়াই বিরাজ করতে পারে কিন্তু দ্বিতীয়টি প্রথমটি ছাড়া অর্থহীন। গদ্য ছাড়া পদ্য হতে পারে কিন্তু কোনো গদ্যই পদ্য ছাড়া নয়। পদ্য হলো অনুভূতির ভাষা, গদ্য হলো বুদ্ধির ভাষা; তাই সব গদ্যে রচনারই একটা কাব্যিক দিক থাকে। সমস্ত মানবজাতির মাতৃভাষাই হলো কাব্য। আদি মানবেরা সকলেই প্রকৃতিদত্ত শক্তিতে বড় কবি ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন নন্দনতত্ত্ববিদ ক্রোচে তার শিল্প ও দর্শনশাস্ত্র প্রবন্ধে। মানুষের বুদ্ধিগত জীবন ক্রমাগত এই দুটি রূপের মধ্যে যাতায়াত করে। অনেকে সময় কেউ কেউ ইতিহাসমনস্কতাকে ভুল করে একটি তত্ত্বগত তৃতীয় ধারণার রূপ বলে মনে করেন। ইতিহাস আইন বা বিধির সন্ধান করে না, তর্কশাস্ত্র সম্মত অবরোহ বা আরোহ কোনটাই ইতিহাস প্রয়োগ করে না। যা ঘটেছে তার বর্ণনা ইতিহাসের কাজ। ইতিহাস বিমূর্ত চিন্তা করে না বলে উল্লেখ করেছেন ক্রোচে। কোন একটি সময়ের কোন একটি স্থানের যা কিছু ঘটেছে তাই হলো ইতিহাস। বলা যেতে পারে শিল্পের একরাজ্য যা গড়ে উঠতে পারে স্বজ্ঞার যথাযথ প্রয়োগে। সঙ্গত কারণে কবিতা নিছক কতগুলো ছন্দবদ্ধ ভাষ্য নয়, বরং কবিতা সময়কে বিবৃত করে এবং সময়ের সকল উপস্থিতি একজন কবির সৃষ্টিতে উপস্থিত থাকে। ফলে জীবন অন্বেষার সকল বিষয়-আসয় কবিতায় মুখ্য হয়ে ওঠে, মৌলিক কারণটিই হলো মানুষের মন সকল সময়ই সুন্দরকে প্রার্থনা করে। কবি বা সাহিত্যিক তাকে সুন্দর করে রূপ দিতে পারেন। একটি ভাল সৃষ্টিও অনাদৃত থেকে যেতে পারে যদি তার উপযুক্ত পাঠক সমাজে কোনো না কোনো কারণে অনুপস্থিত থেকে যায় আর সেটাও ভালো সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। রুশ সাহিত্যের যে বিকাশ তা কেবল মাত্র ভালো লেখকের আবির্ভাবের কারণেই নয় বরং সংশ্লিষ্ট সমাজমানুষ তাদের সৃষ্টিকে আপন করে নিতে পেরেছিল বলে। তাই সৃষ্টি কেবলমাত্র একক কোনো ব্যক্তিরই নয় বরং অভিজ্ঞতাটি সমাজ জীবনের এবং তাই যৌথ। ॥ পাঁচ ॥ কবিতার বিমূর্তচিন্তা মূর্ত হয় ভাষায়। ‘ভাষা কিংবা সাহিত্যতত্ত্বের আলোচনায় প্রকৃতপক্ষে শুধু একটি চিহ্নকে নির্ধারণ করেন, আর এই চিহ্নের উপাদানও দু’ভাগে বিভক্ত, ধ্রুপদী দর্শনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ভাষা হলো সময় ও সভ্যতার সঙ্গে বেড়ে ওঠা এক বিশাল শব্দভা-ার, যেখানে প্রতিটি শব্দ বিভিন্ন বৈশ্বিক বস্তু, বিষয় বা ধারণার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত। ধ্রুপদী ভাষাতত্ত্বে প্রতিটি ভাষাপ্রতীক বা শব্দের বিপরীতে একটি সুনির্দিষ্ট বস্তু বা বিষয়ের অবস্থান কল্পনা করা যায়, আর ভাষাপ্রতীক বা শব্দসমূহের সঙ্গে বস্তু বা বিষয়ের সম্পর্কও একটা সহজ ও সরল সমীকরণ দিয়ে নির্ধারণ করা সম্ভব’। প্রাণহীন শিল্প তখনই তৈরি হয় যখন শিল্পীর মনে বিষয়বস্তুটি পূর্ণরূপে প্রকট হয় না, একটা ভাসা ভাসা ধারণা শিল্পীর মনে আঠা হয়ে লেগে থাকে। এ কারণে একজন শিল্পীর প্রকাশ মুহূর্ত যে স্ফূর্তি নিয়ে উপস্থিত হয় তা অনেকটা ছাড়া ছাড়া আলগা এবং সংহতিহীন এমনকী পরিমিতি বোধ শূন্য থেকে যেতে পারে। এর প্রকৃত শিল্পরূপ নান্দনিক হয়ে ওঠে যখন শিল্পী বিষয় নিয়ে এবং প্রকাশের পদ্ধতিগত রূপটির পরিচর্যা করেন। ফটোগ্রাফি শিল্প নয়, কিন্তু যখন ফটো শিল্পী বিশেষ দিক থেকে তার ছবিটি তুলে অভিব্যক্তির মাত্রায় ভিন্ন দ্যোতনার সৃষ্টি করেন তখনই তা শিল্প হিসেবে স্বীকৃত হয়। অতীত কেবলই অতীত অভিজ্ঞতার এই সত্যের মধ্য দিয়ে একজন শিল্পীকে যেতে হয় নির্মাণে এবং অতীতের অভিজ্ঞতাকে আত্মস্থ করে বর্তমান পেরিয়ে ভবিষ্যতের দিকে মুখ প্রসারিত করে, যদিও চিরস্থায়ী বলে কিছু নেই, এবং কোনকিছুই চিরকালীন নয়, কিন্তু শিল্প সত্তার যে উদ্বেগ শিল্পী অনুভব করেন তা যদি সামাজিক অভিজ্ঞতার ফসলই হয় তো সেই সমাজটি পরিবর্তিত হবার পূর্বতক এর আবেদন অটুটই থেকে যায় এটাই শিল্পের দূরগামিতা। সহায়তা : মঈন চৌধুরীর প্রবন্ধ সমগ্র, কুমার চক্রবর্তীর নির্বাচিত প্রবন্ধ, মার্কসবাদী সাহিত্য তত্ত্ব বিমলকুমার মুখোপাধ্যায়, ক্রোচের নন্দন তত্ত্ব, অনুবাদ সুধীর কুমার নন্দী, মার্টিন হাইডেগার প্রবন্ধ, মৃণাল কান্তি ভদ্র।
×