ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত বিভাগের উদ্যোগ

রেল স্টেশনের ছাদ থেকে আসবে এক শ’ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রেল স্টেশনের ছাদ থেকে আসবে এক শ’ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত

রশিদ মামুন ॥ দেশের সব রেল স্টেশনের ছাদ সৌর বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবহার করতে চায় বিদ্যুত বিভাগ। ছাদে সৌর বিদ্যুত স্থাপনের নেট মিটারিং কার্যক্রম সফল হওয়ার পর নতুন এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ শুরু হবে। এতে অব্যবহৃত এসব রেলস্টেশনের ছাদ যেমন ব্যবহার হবে তেমনি বাড়তি বিদ্যুতও পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশনের ছাদ ব্যবহারে অন্তত ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। বিদ্যুত বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি শাখা সূত্র বলছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছিল। তবে নানা বিষয়ে মতের মিল না হওয়াতে তারা রেলস্টেশনগুলোর ছাদ ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছিল না। তবে এখন তারা এ বিষয়ে আগ্রহী। বলা হচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সম্ভাব্যতা জরিপ চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিদেশী একটি দাতাসংস্থা নিজস্ব খরচে রেল স্টেশনগুলোর ওপর সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের খরচ বহন করতে রাজি হয়েছে। এমনকি ওই দাতাসংস্থাকে আর এই অর্থ ফেরতও দিতে হবে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ হওয়ার পরই বলা যাবে কোন স্টেশনের উপর কতটা সৌর বিদ্যুত প্যানেল বসানো যাবে। তবে শুরুতে বড় স্টেশনগুলোর উপরই সৌর বিদ্যুত প্যানেল বসানো শুরু হবে। এক্ষেত্রে কমলাপুর স্টেশনের চেয়েও রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে পাহাড়তলি এবং পশ্চিমাঞ্চলে সৈয়দপুর কারখানায় সৌর বিদ্যুত স্থাপনের জন্য আরও বড় ছাদ পাওয়া যাবে। এক মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সাড়ে তিন একর জমির প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে প্রতি ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রর জন্য ৩৫০ একর জমির প্রয়োজন হয়। বিপুল পরিমাণ জমির সংস্থান না হওয়াতে সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সরকার বিকল্প হিসেবে সরকারী ভবনের ছাদ ব্যবহার করতে চাইছে। রেলওয়ে স্টেশনগুলোর ছাদে অনেক জায়গা থাকাতে এগুলোর ওপর সৌর বিদ্যুত প্যানেল স্থাপন করাকে সুবিধাজনক বলা হচ্ছে। এক হিসেবে বলা হচ্ছে দেশের সব থেকে বড় স্টেশন কমলাপুরে অন্তত ৮ মেগাওয়াটের সোলার প্যানেল স্থাপন সম্ভব। এর বাইরে রেলওয়ের আরও বড় অবকাঠামো রয়েছে। সব মিলিয়ে রেলস্টেশনগুলো ব্যবহার করলে ১০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি সৌর বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া রেলস্টেশনগুলো জেলা শহরে হওয়াতে বিদ্যুত উৎপাদনের পর সঞ্চালন নিয়েও কোন সমস্যায় পড়তে হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সৌর বিদ্যুত শুধু উৎপাদন করলেই হবে না তা গ্রিডে সঞ্চালনও করতে হবে। এক্ষেত্রে সৌর বিদ্যুতে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্রিড সাবস্টেশনের অনেক দূরে কেন্দ্র স্থাপন করাতে সঞ্চালন লাইন স্থাপন করায় ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু রেলস্টেশনগুলোর ওপরে সোলার প্যানেল বসালে আশপাশের কোন গ্রিড সাবস্টেশনে বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ফলে অতিরিক্ত ব্যয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রয়োজন হবে না। এছাড়া ভূমি উন্নয়ন বাবদ যে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয় স্টেশনগুলোর ছাদে তার প্রয়োজন হবে না। ভূমি বাবদ ব্যয় এবং সঞ্চালন ব্যয় কম হওয়াতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়বে। দেশে এখন গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রর সংখ্যা মাত্র চারটি। এসব সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর বাইরে এখন মাত্র একটি নতুন সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন শুরু হয়েছে সিরাজগঞ্জে। যার উৎপাদন ক্ষমতা সাত দশমিক ৪ মেগাওয়াট। বড় প্রকল্পগুলো জমি জটিলতার কারণে ঝুলে থাকায় ছোট ছোট উৎস থেকে সৌর বিদ্যুত উৎপাদনে আগ্রহী বিদ্যুত বিভাগ। এতে করে গ্রিডের ওপরও চাপ কমানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
×