ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্য কাউকে দেয়ার সুযোগ নেই

১৬১২৩- হটলাইন নম্বরটি কৃষি তথ্য সার্ভিসেরই

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

১৬১২৩- হটলাইন নম্বরটি কৃষি তথ্য সার্ভিসেরই

ওয়াজেদ হীরা ॥ ১৬১২৩ একটি কল সেন্টারের নাম্বার। ৫ ডিজিটের এই শর্ট কোডের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি তথ্য সার্ভিস। প্রতিদিন অসংখ্য সেবাও মিলছে কল সেন্টারে। তবে একই নাম্বারটি দাবি করছে ভূমি মন্ত্রণালয়। যার মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সেবা দেবে তারা। প্রশ্ন জেগেছে হটলাইন নাম্বারটি আসলে কার? কৃষি মন্ত্রণালয় ও তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন একজনের নাম্বার অন্যজনকে দেয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও (বিটিআরসি) বলছে নাম্বারটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের। জানা গেছে, ২০১২ সালের জুন মাসে ‘কৃষি কল সেন্টার’ এর পরীক্ষামূলক যাত্রা সূচিত হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি তথ্য সার্ভিস রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে এটি পরিচালনা করছে। ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে ৫ ডিজিটের একটি শর্ট কোডের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেন্টারটির কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু হয়েছে। যেখানে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা বা সমাধান পেতে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ শ’ কল আসছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অত্যাধুনিক হটলাইন কার্যক্রম (কল সেন্টার) চালু হবে যার হটলাইন নম্বর- ১৬১২৩। ভূমিমন্ত্রী সোমবার রাজধানীর মতিঝিলের বিআইডাব্লিউটিএ ভবনে অবস্থিত ভূমি সংস্কার বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই হটলাইন চালুর কথা বলেন। এতেই তথ্য বিভ্রাটসহ দেখা দেয় নানা প্রশ্ন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাক্ছুদুর রহমান পাটওয়ারীসহ অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তা। মন্ত্রী সে সময় বলেন, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি অফিসে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই। ভূমি অফিসের অনিয়মের অভিযোগগুলো জনগণের কাছ থেকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যেই মূলত হটলাইন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কিভাবে এই হটলাইনের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থাৎ অজপাড়াগায়ের কৃষকরাও সেবা পাচ্ছেন সে বিষয়ে এক বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ হয় জনকণ্ঠে। তাহলে একই নাম্বার সরকারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান কি করে বরাদ্দ পায় সেটি জানতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই নাম্বারটি বরাদ্দ দেয়া হয়নি। পরিচালক এম এ তালেব বলেন, নিয়ম অনুসারে কেউ একটি নাম্বার পেয়ে থাকলে অন্য কেউ পায় না। নতুন নাম্বার দেয়া হয়। অপারেশন শাখা আরও ভাল বলতে পারবে। বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড অপারেশন শাখার কর্মকর্তা গোলাম রাজ্জাক জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু নাম্বারটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আছে আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়কে অন্য নাম্বার দিয়েছি যেটি হলো ১৬১২২। সুতরাং এখানে কোন ভিভ্রান্তি নেই। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। তবে এটি অন্য কাউকে দেয়ার সুযোগ নেই। কেননা আমার ব্যবহার করা ব্যক্তিগত নাম্বার কি অন্য কেউ পাবে? হটলাইনটিও আমরা আগে সেবা চালু করেছি এটি অন্য কেউ পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। হয়ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের কোথাও ভুল হয়েছে মন্তব্য করেন কৃষি সচিব। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মাক্ছুদুর রহমান পাটওয়ারী জনকণ্ঠকে বলেন, আমি এই মাত্রই আপনার কাছে বিষয়টি জানলাম। আমি খোঁজ নিচ্ছি। কেননা দুটিই সরকারের প্রতিষ্ঠান। যেহেতু কৃষি একটি নাম্বার চালাচ্ছে সেখানে আমরা অন্য নাম্বার নেব। পরে আবারও সচিব জানান, আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি আমাদের একাধিক নাম্বার দেয়া হয়েছিল প্রথমে ১৬১২৩ পছন্দ করেছিলাম সেটি দেয়া হয়েছিল। পরে বিটিআরসি আবার জানায় এটি অন্য কারও দেয়া আছে। পরে আমরা মিটিং করে তিনটি নাম্বার থেকে ১৬১২২ নাম্বারটি সিলেক্ট করি। এটি নিয়ে যদি তথ্য বিভ্রাট হয়েও থাকে এখন সেটি অবসান হলো মনে করি। কৃষি আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের নাম্বার তাদেরই, আমাদের নতুন নাম্বার। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কল সেন্টার চালু হলে প্রতিটি ভূমি অফিসে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন। এছাড়াও ভূমি অফিসের অনিয়মের অভিযোগগুলো জনগণের কাছ থেকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যেই মূলত হটলাইন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে কৃষি কল সেন্টার যেটি চালু আছে সেটির মাধ্যমে অনেক সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি কল সেন্টার ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর থেকে বছর বছর জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ফোন কল আসা। সেই সঙ্গে নানা প্রান্তের নানা মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন করে সমাধানের মাধ্যম হিসেবে এটি ব্যবহার করছেন। বর্তমানে কৃষকদের কাছে এটি খুবই গুরুত্ব একটি বিষয়। বিভিন্ন ঋতুভিত্তিক সবজি ফল বা অন্যান্য ফসল বিষয়ে পরামর্শ আছে। এই কলসেন্টারের কার্যক্রমে সহায়তা করছেন আন্তর্জাতিক এনজিও প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন, বাংলাদেশ। কলসেন্টারের মধ্যে ৫ হাজার প্রশ্নোত্তর সংবলিত কম্পিউটারভিত্তিক ডাটাবেজ রয়েছে বলেও জানা যায়। কলের পরিসংখ্যানও বলে দিচ্ছে দিন দিন এই কল সেন্টারের জনপ্রিয়তার কথা। জুন ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ডায়াল কল ছিল। এর মধ্যে ৮৬ হাজার ৫০০ ফোন রিসিভ হয় ৯৮ হাজার ৫০০ পরিত্যক্ত হয়। ৬৫ হাজার ৫২০টি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সময়ে মোট পরামর্শের ৭০ শতাংশ ৪৫ হাজার ৮৬৪টি কলারকে কৃষি পরামর্শ দেয়া হয়। ১৮ শতাংশ প্রাণিসম্পদ এবং ১২ শতাংশ মৎস বিষয়ে পরামর্শ নেন। এছাড়াও ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত কৃষি তথ্য সার্ভিসের এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে আগত কলের ৬৭ শতাংশ ছিল কৃষি ২৩ শতাংশ প্রাণী এবং ১০ শতাংশ মানুষ জানতে চেয়েছে মৎস বিষয়ে। পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, সারাদেশের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে বেশি কল আসে। এর পরে রয়েছে দিনাজপুর জেলা। এরপরের জেলাগুলো হলোÑ রংপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রাজশাহী, নওগাঁ, যশোর, ময়মনসিংহ, বগুড়াসহ অন্যান্য জেলা। ২০১৭-১৮ ওই সময়ে প্রশ্নকর্তাদের বেশিরভাগই জানতে চেয়েছেন রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল বিষয়ে এবং ফসলের সমাধান। রবি মৌসুমের বিষয়ে জানতে চাওয়ার সংখ্যা ৪৭ শতাংশ। এছাড়াও খরিপ-১ ৩৫ শতাংশ এবং খরিপ-২ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ১৮ শতাংশ মানুষ। এছাড়াও আগত কলের শতকরা ৯৬ জনই পুরুষ এবং ৪ শতাংশ নারী। সুবিধাভোগী কৃষকরা বলছেন, ১৬১২৩ নাম্বারটি তাদের জীবনমান বদলে দিয়েছে। আগে কৃষি সমস্যায় নানাজনের নানা কথা অনুযায়ী ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ করায় উপকারের চেয়ে অপকার হতো বেশি। কিন্তু এখন ফসলের ক্ষেতে বসেই ওই নাম্বারে কল দিয়ে তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন তারা। তাতে আগের চেয়ে উৎপাদন অনেক বেড়েছে। এছাড়াও কমেছে ব্যয়, সময়ও রক্ষা হচ্ছে।
×