ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৯ আগস্ট ২০১৯

গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে প্রতিটি গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের প্রতিটি গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে হবে। সব গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বুধবার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্স সংলগ্ন ‘জমি অধিগ্রহণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিকল্পনা’ শীর্ষক উপস্থাপনা প্রত্যক্ষকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ সংলগ্ন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত উপস্থাপনা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের সব গ্রামকে সুন্দরভাবে সাজাতে কাজ করতে হবে। শুধু উপজেলা নয় বরং ইউনিয়ন-ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যন্ত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আর সে লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি এলাকায় নাগরিক সুবিধা যেন নিশ্চিত করা যায়, সরকার সে পরিকল্পনা নিয়েছে। এ লক্ষ্যে তার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আবাদি জমি রক্ষার কথা মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফসলি জমি যাতে নষ্ট না হয় সেভাবে কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। তার পথ অনুসরণ করে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, শুধু ইট-সুরকির স্থাপনা নির্মাণ নয় বরং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নদীতে অপ্রয়োজনীয় সেতু এবং বিলের পাশে সাগরপারের মতো উঁচু বাঁধ নির্মাণ না করার পরামর্শ দেন। নিজের নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়ার উন্নয়নে এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের খবর নেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ খলিলুর রহমান পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা মেয়র, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ের অধীনে টুঙ্গিপাড়ায় ভূমি অধিগ্রহণসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এলজিইডি ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিকল্পনা’ শীর্ষক চার বছর মেয়াদী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এর অধীনে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ২৮১টি পৌরসভায় ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে বিভিন্ন কাজ করা হবে। প্রকল্প উপস্থাপনায় বলা হয়, দেশব্যাপী ৩ হাজার ৪৬৫ দশমিক ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে চলমান ‘জরুরী নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)’ চলছে, তার একটি অংশ হিসেবে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশব্যাপী ২৮১টি পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির আওতায় মূল কাজের মধ্যে রয়েছে- সড়ক উন্নয়ন, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, খাল খনন, পাড় বাঁধানো, পুকুর সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, বৃক্ষরোপণ এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সড়কের পাশে বাতি স্থাপন করা হবে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌরসভার অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস এবং অপরিহার্য অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবেশগত উন্নয়ন করা হবে। অনুষ্ঠানে এলজিইডি কর্তৃক টুঙ্গিপাড়া পৌর এলাকার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন কার্যক্রমের সর্বশেষ অবস্থার প্রশংসাও করেছেন। এই উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে- শেখ রাসেল শিশুপার্ক (সম্পন্ন), টুঙ্গিপাড়া-পাটগাতি খালের সৌন্দর্যবর্ধন (সম্পন্ন), টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কমপ্লেক্সের পুকুরগুলোর সৌন্দর্যবর্ধন (সম্পন্ন), পাটগাতি কাঁচাবাজার (নির্মাণাধীন), টুঙ্গিপাড়া কাঁচাবাজার (সম্পন্ন) এবং প্রস্তাবিত বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ, গোরস্তানের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন, শেখ রাসেল শিশু পার্কের বিপরীত পাশে টুঙ্গিপাড়া বাজার মসজিদের পুনর্নির্মাণ (প্রস্তাবিত) এবং টুঙ্গিপাড়া নতুন বাসস্ট্যান্ড নির্মাণাধীন প্রকল্পসহ মোট ১৬টি প্রকল্প।
×