ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওরা ১১ জন মাত্র ৩/৪ মিনিটে দিনের বেলায় লুটে নেয় সব

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২৮ আগস্ট ২০১৯

ওরা ১১ জন মাত্র ৩/৪ মিনিটে দিনের বেলায় লুটে নেয় সব

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ওরা ১১জন। মাত্র তিন/চার মিনিটে ফিল্মি স্টাইলে চুরি করাই তাদের কাজ। সে কাজ গভীর রাতে নয়। বন্ধের দিনে, দিনের বেলাতেই, দোকাটপাট খোলা বা বন্ধের সময়ই হচ্ছে মোক্ষম সময়। চুরির আগে থেকেই তারা রেকি করে নেয় কখন কিভাবে ও কারা চুরি করবে। দেশের ৬৪ জেলায় তাদের প্রায় ৫০ সদস্য রয়েছে। দেশব্যাপী ঘুরে ঘুরেই তারা পালাক্রমে চুরি করে। তবে এই ১১জনকে ধরতে পুলিশকেও বেগ পেতে হয়েছে। ওরা ১১ জনের দলনেতা হানিফ ওরফে ‘হাতপোড়া হানিফ’ পুলিশের কাছেই চুরির কৌশল বর্ণনা করেছে। অবশেষে পুলিশের কৌশলের কাছে হার মেনেই গত রবিবার ধরা পড়তে হলো ওই ১১ জনকে। কোতোয়ালি থানার পুলিশ সূত্র জানায়, অনেকদিন ধরে তাদের গতিবিধি অনুসরণ করছিল পুলিশ। বিভিন্ন অভিযোগের চমকপ্রদ কারণেই তাদের হন্য হয়ে খোঁজা হয়েছে। ১১ চোরের দলনেতা হানিফকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ অনেক তথ্য পেয়েছে। সেই সব তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে, বাকি সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। দলনেতা হানিফ স্বীকার করেছে, চোরচক্র সংখ্যায় ১১ জন হলেও দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে মাত্র একজন। দোকানের তালা খোলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে, চোরেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় বিশেষ সাঙ্কেতিক শব্দ ব্যবহার করে। এসব সাঙ্কেতিক শব্দ হলো, দোকানকে বলে অফিস, তালাকে বলে আম, কার্টারকে বলে গাড়ি, চাদরকে বলে ঠোঙ্গা, দোকানের ভেতর চুরি করার জন্য যে প্রবেশ করে তাকে বলে অফিসম্যান, পুলিশকে বলে তেইল্লাচোরা, সংবাদদাতাকে ডাকে লাইনম্যান, চুরি করাকে বলে ডিউটি, চুরির টাকা পয়সাকে বলে ব্যবসা, চুরি করা টাকাকে ভাগ বাটোয়ারার সময় একলাখ টাকাকে বলে একটাকা। ১১ জনের মধ্যে সংবাদদাতা (লাইনম্যান) হচ্ছে হানিফ, দোকানের (অফিস) ভেতর প্রবেশকারী (অফিসম্যান) হচ্ছে মোঃ লিয়াকত হোসেন ও মোঃ তৌফিক। তালা (আম) কার্টার (গাড়ি) দিয়ে কাটে মোঃ কামাল হোসেন, মোঃ মিজান, মোঃ কামাল ওরফে ভুসি কামাল ওরফে জসিম। আসামিরা তাদের হেফাজতে আগ্নেয়াস্ত্র রাখে বাধার সম্মুখীন হলে নিজেকে বাঁচাতে। পুলিশ জানায়, চোরচক্রের দলনেতা হানিফ প্রকাশ হাতপোড়া হানিফ। হানিফ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার বিভিন্ন শো-রুম, বড় কাপড়ের দোকান, বড় মুদির দোকান, সিগারেট বা বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটরের অফিস, বিকাশের দোকানসহ যেসব দোকানে বেশি টাকা-পয়সা লেনদেন হয় অথবা রাতের বেলায় ক্যাশে বেশি পরিমাণ টাকা থাকে এমন সব দোকান দিনের বেলা মার্কেটে ঘুরে ঘুরে রেকি করে। তবে হানিফের এক হাত বিকলাঙ্গ হওয়ায় মানুষ তাকে সন্দেহ করেনা বলে পুলিশকে জানিয়েছে। হানিফ কোন দোকান টার্গেট করার পর সেকেন্ড ইন কমান্ড কামালকে জানায়। কিন্তু কামাল টার্গেটকৃত হানিফের দেখা দোকান চুরি করার পূর্বে দোকানে কি পরিমাণ টাকা পয়সা থাকবে তা কিভাবে চুরি করবে, চুরি করার পর দ্রুত সে জায়গা হতে সরে যাওয়া সম্ভব কিনা, চুরি করার সময় কি পরিমাণ জনবল লাগবে, কি ধরনের যন্ত্রপাতি লাগবে, সেসব জিনিস পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণ করে মতামত প্রদান করে চুরি করা সম্ভব কিনা। কামালের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই হানিফ নির্দিষ্ট পরিমাণ সদস্যদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টার্গেটকৃত দোকানের বিষয় জানায়।
×