ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্পিনারদের পাশাপাশি এবার জ্বলে উঠতে পারবেন পেসাররা?

লাইন-লেন্থের ওপর জোর দিচ্ছেন পেসারদের

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 লাইন-লেন্থের ওপর জোর দিচ্ছেন পেসারদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ কয়েকদিন পরেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আর সেই ম্যাচটি স্বাগতিকদের জন্য ‘পয়মন্ত’ ভেন্যু সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। উভয় দলেরই মূল বোলিং শক্তি স্পিন। আর সে কারণে এই টেস্টের জন্য তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চাইছে পেসবান্ধব উইকেট তৈরি করতে। এমনটাই আভাস দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পেসারদের জন্য একটি সুযোগ অপেক্ষা করছে ভাল করার। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেসাররা সফল হলেও উইকেট তুলে নিতে অনেক রান খরচা করেছেন এলোমেলো বোলিংয়ের জন্য। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সফরেও পেসারদের বেদম প্রহারের শিকার হতে হয়েছে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট বাংলাদেশী পেসারদের লাইন-লেন্থ নিয়েই কাজ করছেন। তিনি জোর দিয়েছেন, পেসারদের বল যাতে ধারাবাহিকভাবে সঠিক লাইন-লেন্থে থাকে। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনের পর এমন কথাই জানিয়েছেন ডানহাতি পেসার শফিউল ইসলাম। দেশের মাটিতে টেস্ট কিংবা যেকোন ফরমেটের ক্রিকেট মানেই স্পিনারদের ওপর মূল দৃষ্টি থাকে সবার। কারণ, বাংলাদেশের উইকেটের প্রকৃতি সাধারণত ধীরগতির হয় এবং স্পিনাররাই বেশি সফলতা পান। তবে এবার আফগানদের বিপক্ষে পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন রকমের হতে পারে। পেসাররা যাতে উইকেট থেকে সুবিধা নিতে পারে সেজন্য সেভাবেই গড়া হবে একমাত্র টেস্টের উইকেট। কারণ, আফগানিস্তান দলে আছে তিনজন ভাল মানের স্পিনার। স্পিনবান্ধব উইকেট তৈরি করলে নিজেদের ফাঁদেই আটকা পড়ার শঙ্কা আছে। কারণ লেগস্পিনার রশিদ খান, অফস্পিনার মোহাম্মদ নবি ও তরুণ লেগস্পিনার কাইস আহমেদ বড় হুমকি হতে পারেন স্বাগতিক বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশ দলে স্বীকৃত তিন স্পিনার সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ থাকলেও তাই ভিন্ন কিছুই ভাবা হচ্ছে এবার। পেসারদের নিয়ে আফগানদের বধ করার পরিকল্পনা চলছে। আর সেই পরিকল্পনা যাতে সফলতার মুখ দেখতে পারে সেজন্য পেস বোলিং কোচ ল্যাঙ্গাভেল্ট কাজ করে যাচ্ছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন, ভয়ানক বোলার হিসেবে নয়, বরং কিপটে বোলিং ও লাইন-লেন্থের জন্য নাম কুড়িয়েছিলেন ল্যাঙ্গাভেল্ট। এখন শিষ্যদের সেভাবেই গড়ে তুলতে চাইছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর ল্যাঙ্গাভেল্ট সবেমাত্র ৪ দিন তিনি বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। আর এর মধ্যেই তার চাওয়ার ক্ষেত্রে মূল বার্তাটা দিয়েছেন এদেশের পেসারদের। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ডানহাতি পেসার শফিউল বলেন, ‘এখনও তো ওইভাবে কাজ করা হয়নি। ৩/৪ দিন মাত্র কাজ করা হয়েছে। উনি শুধু একটা বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন যেন জায়গায় বল করা হয়, এলোমেলো বোলিং না হয়। জায়গা মতো বল করে যেতে পারলে ব্যাটসম্যানদের জন্য তা কষ্ট হয়।’ কারণ, সঠিক জায়গায় ধারাবাহিকভাবে বল করে যেতে পারলে যেকোন উইকেটেই সফল হওয়া যায়। সেজন্য কন্ডিশন বুঝতে পারা জরুরী। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া শফিউল এ বিষয়টি বুঝতে পারছেন ভালভাবেই। তিনি বলেন, ‘ভাল জায়গায় বল করলে, ভাল লেন্থে বল করলে যেকোন উইকেটে সফল হওয়া সম্ভব। বিশ্বের সব বোলাররাই এভাবে সফল। সঠিক জায়গাটা খুব জরুরী, সেটা নিয়েই আমরা কাজ করছি। সুযোগ পেলে উইকেটের কন্ডিশন অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করব। ৯ বছর ধরে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছি। কিন্তু নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট নই। যখন জাতীয় দলে এসেছি টানা ৩ বছর ধারাবাহিক ছিলাম। মাঝে হয়ত খেলা চালিয়ে যেতে পারিনি ইনজুরি কিংবা ফর্মের কারণে। তবে সুযোগ আছে, এখনও ক্যারিয়ার শেষ হয়নি। যতটুকু সুযোগ আছে লক্ষ্য আছে যতটা ভাল করা যায়।’ এর সঙ্গে বাংলাদেশের যে পেসাররা নতুন বলে সুইং করাতে সক্ষম তাদের দিকেও মনোযোগী হয়েছেন। আর শফিউলের সেই সামর্থ্য আছে। কিন্তু আলগা বোলিংয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুইং থাকলেও অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে শফিউল বলেন, ‘অবশ্যই, সবাই বলে যে নতুন বলে আমার সুইং ভাল আসে। আমি সেটাই চেষ্টা করছি। কিন্তু বল যদি এলোমেলো হয় তাহলে সুইং রেখে তো লাভ নেই। সেজন্য ঠিক জায়গায় যেন বল করতে পারি সেটাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সুইংয়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা করতে পারলে হয়ত আমার জন্য অনেক ভাল হবে।’ বাংলাদেশী পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে খেলে যাওয়ার কৃতিত্ব মাশরাফি বিন মর্তুজার। ইনজুরি সমস্যা ছাড়া নিয়মিতই খেলে গেছেন তিনি। কিন্তু আর কোন পেসার এতটা ধারাবাহিক হতে পারেননি ফর্মহীনতায়। শফিউল নিজেও এর দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, ‘সবাই আসলে চেষ্টা করছে, কিন্তু সবাই তো একইরকম হয় না। কারও সঙ্গে তুলনা করতে যাব না। আমার যে দক্ষতা আছে আমি মনে করি অনেক উন্নতি করার সুযোগ আছে। তাই মনোযোগ সেদিকেই যতটা দিনকে দিন উন্নতি করতে পারি। হয়ত একেকজন একেক দক্ষতা সম্পন্ন বোলার। তবে আমার ক্ষেত্রে বলব অবশ্যই আরও ভাল করার সুযোগ আছে।’ কিন্তু উপমহাদেশের বাইরে পেস বোলিংয়ের জন্য আদর্শ উইকেট থাকলেও দেশের মাটিতে নেই। এর আগে অবশ্য বোলিং কোচ হিসেবে জিম্বাবুইয়ের হিথ স্ট্রিক থাকাকালীন একাদশে এমনকি ৪ পেসার নিয়েও দেশের মাটিতে খেলেছে বাংলাদেশ দল এবং সফলও হয়েছে। বাংলাদেশী পেসারদের যে সামর্থ্য আছে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে দেশের উইকেট পেসারদের জন্য প্রতিকূল হওয়াটাই সাফল্যের অন্তরায়। টানা স্পিন নির্ভর উইকেটে বোলিং করার কারণে দেশের বাইরে পেস সহায়ক উইকেটে গিয়েও সফল হতে ঘাম ঝরে বাংলাদেশের পেসারদের। আফগান দলে ভাল মানের তিন স্পিনার থাকায় এবার হয়ত তাই পেসারদের সুবিধা থাকবে চট্টগ্রামের উইকেটে। এ বিষয়ে শফিউল বলেন, ‘এখন যে নেট করছি সেখানে ভাল উইকেট আছে। তবে যে কন্ডিশনে খেলব সেখানকার মতো উইকেট হলে পরিচিত হয়ে ওঠা যায়। দেশের বাইরে যেমন উইকেট থাকে তেমনটা পেয়ে গেলে আমাদের ব্যাটসম্যান, বোলার দু’জনের জন্যই ভাল। কিন্তু যেকোন উইকেটেই ভাল করা যায় লাইন-লেন্থ ঠিক থাকলে। আমরা এখন সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’
×