ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি ধসের আশঙ্কা

কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৩ আগস্ট ২০১৯

কপোতাক্ষ নদ থেকে বালু উত্তোলন

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মণিরামপুরের মুড়াগাছায় কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে নদতীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় একটি চক্র নির্বিঘেœ অবৈধ এই কাজ অব্যাহত রেখেছে। যা আইনবহির্ভূত উল্লেখ করেছে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে অবৈধ বালি ব্যবসায়ীদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় দুর্বৃত্তরা একজন শিক্ষকসহ কয়েকজনকে মারপিট করেছে। জানা গেছে, উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের মুড়াগাছা উত্তরপাড়ায় কপোতাক্ষ নদ থেকে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে বালি তুলে তা দুই জায়গায় জমা করছে এলাকার মান্দারের ছেলে গোলাম হোসেন ও তার ভাই মহি। বালি ফেলে রুদ্ধ করা হয়েছে নদে যাওয়ার রাস্তাও। গোলামের বাড়ির পেছন দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালি এনে জমা করা হয়েছে তার বাড়ির পূর্ব পাশে। দুটি স্থানে এত বালি জমা হয়েছে যে, দূর থেকে দেখলে বিশাল পাহাড়ই মনে হবে। স্থানীয়দের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে, তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে গোলাম ও তার ভাই মহি বালির অবৈধ ব্যবসায় পরিচালনা করছেন। এসব বালি ইমারতের ভিতের কাজে ব্যবহৃত হয়। এর ক্রেতা সাধারণ মানুষ এমনকি ঠিকাদাররাও। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মুড়াগাছার ওই এলাকায় মুসলিমের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়েরের বাস রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন দাস, পাল ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। নদ তীরবর্তী পৃথক তিনটি স্থানে এদের বসবাস। জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ এই নদ থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করার পাশাপাশি গোসল করা থেকে শুরু করে পরিবারের নিত্য কাজকর্ম নদের পানি দিয়েই সম্পন্ন করেন। কিন্তু বালির অবৈধ কারবারকে নিরবচ্ছিন্ন করতে গোলাম ও তার ভাইয়েরা এসব মানুষকে নদে যাওয়া থেকেও বিরত থাকতে বাধ্য করেছেন। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, মণিরামপুরের কপোতাক্ষ নদের এ স্থানে এক সময় ঘাট ছিল। সেখানে বড় বড় জাহাজসহ নৌকায় মানুষ ওঠানামা করতেন। নদের নাব্য না থাকায় সেই অবস্থার অবসান বেশ আগেই হয়েছে। তবে গোসলের একটা পাকা ঘাট নদের সঙ্গে তীরবর্তী মানুষের সখ্যর নিদর্শন ঠিকই জানান দিচ্ছে। গোলাম ও তার ভাইয়েরা প্রায় এক বছর আগে এই ঘাটে মেশিন লাগিয়ে বালি উত্তোলনের চেষ্টা করলে এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করেন। সে সময় গোলামের নেতৃত্বে তাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে আহত করে মহাতাপনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার বিশ্বাস এবং বিপুল কুমার বিশ্বাসকে। পুলিশ সে সময় বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছিলেন বলে জানান এলাকাবাসী। সেই সময় ‘গঙ্গারঘাট’ নামক ওই স্থান থেকে বালি উত্তোলন বন্ধ করে গোলাম বাহিনী। কিন্তু এর উত্তরে আরও দুটি স্থান থেকে বালি উত্তোলন এখনও অব্যাহত রেখেছে চক্রটি। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এভাবে বালি তোলার কারণে এক সময় তাদের আবাসভূমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে তার আলামতও দেখা যাচ্ছে। নদের দুই পাশে মারাত্মকভাবে ধস নামা শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনসার সরদারের পৃষ্ঠপোষকতায় গোলাম ও তার ভাইয়েরা অবৈধ বালির ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘেœ। বিষয়টি নিয়ে গোলাম হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘লিখিত কোন অনুমতি নেই। তবে মৌখিক অনুমতি আছে। তাছাড়া আমিতো বালি তুলে সরকারের উপকারই করছি’। বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য রোহিতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু আনসার সরদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রোহিতা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মানোয়ার হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বালি তোলার বিষয়টি শুধু আমি কেন এলাকার সবাই জানে। এটি রাষ্ট্রবিরোধী একটা কাজ। যারা বালি তুলছে তাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান সবসময় ওঠাবসা করে। সে কারণে কেউ ভয়ে কিছু বলে না। মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, এ ধরনের কোন তথ্য তার জানা নেই। কোন নদীতে বালি মহাল থাকলে সেখান থেকে বালি উত্তোলন করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। মণিরামপুরে এ ধরনের কোন অনুমতি নেই। থাকলে আমি সেটা জানতাম। ‘এ বিষয়ে আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি’-বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
×