ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিল থেকে ৪ জঙ্গী গ্রেফতার

‘আল্লাহর দল’ পিলখানায় চাকরিচ্যুতদের সংগঠনে ভেড়াতে চাইছে

প্রকাশিত: ১০:০০, ২০ আগস্ট ২০১৯

  ‘আল্লাহর দল’ পিলখানায় চাকরিচ্যুতদের সংগঠনে ভেড়াতে চাইছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খোদ রাজধানী থেকেই এবার নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আল্লাহর দলের চার সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে জঙ্গী তৎপরতা চালানোর নানা আলামত। জঙ্গী সংগঠনটি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের পর চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদেরও দলে ভেড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। গত ১৮ আগস্ট দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আল্লাহর দল বা আল্লাহর সরকারের চার জঙ্গীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, ইব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), আবদুল আজিজ (৫০), মোঃ শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ও মোঃ রশিদুল ইসলাম (২৮)। তাদের কাছ থেকে মোবাইল, পেনড্রাইভ, হার্ডড্রাইভ, ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও উগ্র মতবাদের বইপুস্তক উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত আলামত পর্যালোচনা করে জঙ্গী তৎপরতা চালানোর নানা তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। সোমবার ঢাকার কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলন করা হয় র‌্যাবের তরফ থেকে। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক ও র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান জানান, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আল্লাহর দল বা আল্লাহর সরকারের সদস্য। সংগঠনটির সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিতে এবং অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়াতে সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে জঙ্গী সংগঠনটি। এক্ষেত্রে তারা পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুতদের দলে ভেড়াতে কাজ করছিল। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা সফল হতে পারেনি। র‌্যাব কর্মকর্তা এমরানুল হাসান বলেন, ১৯৯৫ সালে আল্লাহর দল নামের জঙ্গী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হয়। জঙ্গী মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মহিত মাহবুব ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে মতিনুল হকের নেতৃত্বে জঙ্গী সংগঠনটি গঠিত হয়। ২০০৪ সালের শেষের দিকে জেএমবির সঙ্গে সারাদেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নেয় দলটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান আর তৎপরতায় জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়লে আল্লাহর দল আলাদা হয়ে যায়। ২০০৭ সালে মতিন মেহেদী গ্রেফতার হয়। এরপর তার অনুসারীরা জঙ্গী সংগঠনটিকে পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর অবকাঠামোর আদলে জঙ্গী সংগঠনটি তাদের দল গোছানোর চেষ্টা করছে। গ্রাম থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতা তৈরি ও নেতৃত্ব দেয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। বিভাগীয় পর্যায়ে যিনি দায়িত্ব পালন করবেন তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নায়ক বলে ডাকা হয়। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জঙ্গীদের বিভিন্ন বাহিনীর আদলে অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক, অতিরিক্ত অধিনায়ক, যুগ্ম অধিনায়ক ও সর্বোচ্চ পদকে তারকা বা আমির হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে। সদস্য সংগ্রহের জন্য সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে থাকে। পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই জঙ্গী সংগঠনটি সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে চিরকুট ও নিজস্ব লোক মারফত দূত হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। র‌্যাব কর্মকর্তা এমরানুল হাসান আরও জানান, দল চালাতে প্রতিমাসে জাকাত দেয়ার প্রথা চালু করেছে সংগঠনটি। সংগঠনের যেসব সদস্য চাকরি বা ব্যবসা করে, তারা তাদের উপার্জিত অর্থ থেকে প্রতিমাসে ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে সংগঠনকে জাকাত হিসেবে দিয়ে থাকে। এভাবেই সংগঠনটি তাদের অর্থ যোগাড় করছে। সংগঠনের তরফ থেকেও জঙ্গী সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করা হয়। সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। জঙ্গী সংগঠনটি নারীদের নামে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করে থাকে।
×