ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লালবাগের পোস্তায় পাঁচ প্লাস্টিক ও জুতার কারখানা পুড়ে ছাই

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৬ আগস্ট ২০১৯

লালবাগের পোস্তায় পাঁচ প্লাস্টিক ও জুতার কারখানা পুড়ে ছাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লালবাগের পোস্তায় প্লাস্টিক কারখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দাহ্য পদার্থ হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে আগুনে পাঁচটি প্লাস্টিক, একটি জুতার কারখানা ও দুটি গোডাউন পুড়ে গেছে। এসব কারখানার কোনটিতেই অগ্নিনির্বাপকের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে ফায়ার সার্ভিস। এখানকার সরু গলিতে দমকলকে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। ফায়ার সার্ভিস পরে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দমকলের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দিলীপ ঘোষকে কমিটি প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল হালিম ও উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) নিউটন। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বুধবার রাত পৌনে এগারোটার দিকে পোস্তার ঢালে ওয়াটার ওয়ার্কস রোডে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ষোলটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত দেড়টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। ঈদের ছুটির কারণে কারখানায় কেউ ছিল না। আগুন লাগার কারণ এখনও জানা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা হায়দার আলী জানান, রাত পৌনে এগারোটার দিকে ঢালের ৬৯/১ ভবনে আগুন লাগে। তিনতলা ওই ভবনে হাজী টিপুর প্লাস্টিক কারখানা, আশপাশে বাসাবাড়ি। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাসায় তালা লাগিয়ে স্থানীয়রা নিরাপদ স্থানে চলে যায়। ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মিয়া জানান, কারখানার আশপাশে সব চামড়ার গোডাউন। ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। আগুনে তিনটি বাড়ির মধ্যে থাকা কারখানার মালপত্র পুড়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার পোস্তা ঢালের ৬৯/১ নম্বর টিপু হাজীর বাড়ি নামে পরিচিত ওই ভবনের নিচতলায় প্লাস্টিক কারখানা, ওপরে গুদাম। ভবনটির গা ঘেঁষে তিনটি বড় বড় ট্রান্সফরমার। এসব ট্রান্সফরমার দিয়েই ওসব কারখানায় বিদ্যুত সংযোগ নেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত নয়টার দিকে ভবনে পেছনের একটি ট্রান্সফরমারে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। এরপর পাশের কারখানার কেয়ারটেকার বিষয়টি তার মালিককে জানান। তার মালিক বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানান। তারা এসে সংযোগটি ঠিক করে দিয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর টিপু হাজীর বাড়িতে আগুন লাগে। মামুন নামে এক ব্যক্তি প্লাস্টিক তৈরির কারখানা দিয়েছেন। গত দশ বছর ধরে তিনি বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন। আগুন লাগার পর মালিকপক্ষ প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চালায়। এতে কাজ না হওয়ায় পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ষোলটি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। ঈদের ছুটি থাকায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে এক কারিগরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। টিপু হাজীর বাড়িটিতে দশ বছর ধরে প্লাস্টিক কারখানা চলে। নিচতলায় প্লাস্টিকের মগ, বালতি, খেলনা তৈরি হয়। দোতালায় গুদাম। স্থানীয় আশরাফ নামে এক ব্যক্তি জানান, কারখানার এক কারিগরকে অগ্নিকাণ্ডের পরপরই অচেতন অবস্থায় বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পাশের মসজিদ ও ওয়াসা পাম্প থেকে পানির সংযোগ দেয়া হয়। এতে পানি সরবরাহ করতে সুবিধা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ হাবীবুর রহমান জানান, এলাকা সম্পর্কে আমাদের ভাল স্টাডি থাকায় পানির উৎস কোথায় তা জেনে দ্রুত পানি পাওয়া যায়। তবে জায়গাটি ঘিঞ্জি হওয়াতে ঘটনাস্থল পর্যন্ত গাড়ি নেয়া যায়নি। পাইপ সংযোগ দিয়ে পানি দিতে হয়েছে। এতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। তিনি জানান, ভেতরে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। তবে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। তবে কারখানা পুড়ে গেছে। হাজী জয়নালের প্লাস্টিক কারখানায় আগুনে লেগে অন্তত ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে জানান তার ছেলে মোঃ মুজিবুল। বলেন, হাজী জয়নাল নামে প্লস্টিক কারখানাটি আমার বাবা জয়নাল দেখভাল করেন। ঈদের ছুটিতে বাবা গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি গেছেন। বুধবার বিকেলে এক কর্মচারীসহ আমি গ্রাম থেকে এসেছি। কারখানা বন্ধ ছিল। কিন্তু রাত দশটার দিকে হঠাৎ কারখানার পাশে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটারের একটি তারে আগুনে আরও চারটি প্লাস্টিক, একটি জুতার কারখানা ও দুটি গোডাউন পুড়ে গেছে।
×