ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনবে ট্যানারিগুলো

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১১ আগস্ট ২০১৯

 নির্ধারিত দামেই চামড়া  কিনবে ট্যানারিগুলো

এম শাহজাহান ॥ সরকার নির্ধারিত দামে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনবে সাভারের ১২৩টি ট্যানারি। এর পাশাপাশি ঢাকার পোস্তার আড়তগুলোতে বেচাবিক্রি হবে কোরবানির চামড়া। ইতোমধ্যে নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কিনতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ঘোষিত মূল্যের বাইরে গিয়ে চামড়া বেচাকেনা হলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চামড়ার বাজার মনিটরিং করা হবে। কাঁচা চামড়া মজুদ ও সংরক্ষণে চাহিদামতো লবণের সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, এবার সারাদেশ থেকে কোরবানির প্রায় সোয়া কোটি পিস কাঁচা চামড়া পাওয়া যাবে। এর মধ্যে ৪৫-৫০ লাখ গরু ও ৬৫-৭০ লাখ খাসি-বকরি ও মহিষ কোরবানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে মৎস্য, পশু ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, কোরবানির চামড়া নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে কিনতে ট্যানারি মালিক ও আড়তমালিকদের একটি বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। এই চক্রের কারসাজির কারণেই পানির দরে বিক্রি হয় কাঁচা চামড়া। গতবছর শুধু দাম কম হওয়ার কারণে ৪৬০ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। বকরি ও খাসির চামড়া অনেক কোরবানি দাতা ড্রেন ও ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন। এছাড়া জবাইকৃত পশু থেকে চামড়া তুলে নেয়া হয় অপেশাদার শ্রমজীবী মানুষদের দিয়ে। ফলে অনেক দামী ও হৃষ্টপুষ্ট গরুর চামড়াও অযত্নে কাটার ফলে নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে গতবছর চামড়ায় লবণ পর্যন্ত দেয়নি। এতে করে পচে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, চামড়া জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। কাঁচা চামড়ার ন্যায্যদাম নিশ্চিত করবে সরকার। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এটা ঠিক দেশে কাঁচা চামড়ার সঠিক দাম এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ব্যবসায়ীদের কম দামে কেনার মানসিকতা রয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। তাহলে চামড়ার দাম কম হয় কি করে? চামড়ার পাশাপাশি চামড়ার বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। একইসঙ্গে চামড়ার ব্যবহারও বেড়েছে। তিনি বলেন, এ দেশ থেকে কাঁচা চামড়া পাচার হয়। এর মানে বাংলাদেশের বাইরে চামড়ার দাম বেশি এবং এটা প্রমাণিত। এখন শুধু ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বেশকিছু কাজ করা হয়েছে। আশা করছি ব্যবসায়ীরা এবার নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কিনবে। উল্লেখ্য এবার ঢাকায় প্রতিবর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫-৫০ এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হবে। এছাড়া সারাদেশে প্রতিবর্গফুট খাসির চামড়া ১৮-২০ এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় বেচাকেনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কাঁচা চামড়ার প্রধান উৎস দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। ধর্মীয় রীতিতে সবচেয়ে ভাল ও হৃষ্টপুষ্ট পশু কোরবানি দেয়ার বিধান রয়েছে। এ কারণে কোরবানিতে সবচেয়ে ভাল চামড়া পাওয়া যায়। এ বছর প্রায় সোয়া কোটি পিস কোরবানির চামড়া পাওয়া যাবে। এছাড়া সারাবছরেও আরও প্রায় সোয়াকোটি পিস চামড়া সংগ্রহ হয়ে থাকে। ফলে আড়াই কোটি পিস চামড়ার বড় বাজারের একটি নাম বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, রফতানি বাণিজ্যে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়া শিল্পখাত। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ফিনিশড লেদার ও চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রফতানি করে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ইউএস ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়েছে। ভিশন-২১ সামনে রেখে চামড়া রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলার। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে একটি পূর্ণাঙ্গ চামড়া শিল্পনগরী করতে হবে। এজন্য চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার পুরোপুরি চালু করা জরুরী হয়ে পড়ছে। হাজারীবাগ থেকে সাভারে কারখানা স্থানান্তরে ট্যানারি মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকার যে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এ কারণে এখনও ৩০টির বেশি ট্যানারি উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তিনি বলেন, কোরাবনি আসলেই ট্যানারি মালিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ আনা হয়। আমরাও চাই এ শিল্পে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। দাম নিয়ে আর কোন অভিযোগ না উঠুক। তিনি বলেন, এ শিল্পের সমস্যা যেমন রয়েছে তেমনি সম্ভাবনাও আছে। সবাই মিলে কাজ করলে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। এদিকে, একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পনগরী রয়েছে চামড়া শিল্প খাতের। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ ট্যানারি মালিকদের গাফিলতি ও মনোপলির ব্যবসার আড়ালে এ শিল্পখাতটির সমস্যাও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্যানারিগুলো এখনও কমপ্লায়েন্স হতে পারেনি। এক্ষেত্রে সরকারকে দোষারোপ করে ট্যানাারি মালিকরা। অপরদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ করে আনা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে চারটি মডিউল চালু করার উদ্যোগ রয়েছে। এ কারণে সিইটিপি পরিচালনার জন্য আলাদা কোম্পানি করে দেয়া হয়েছে। আড়তদারদের বকেয়া পরিশোধ করছে না ট্যানারি মালিকরা ॥ কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ে মূলত সমস্যা তৈরি হয় ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকেই-এ অভিযোগ আড়ত মালিকদের। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চামড়া সংক্রান্ত বৈঠকে এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাণিজ্য সচিব মোঃ মফিজুল ইসলামের সামনে আড়ত মালিকরা সরাসরি এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। তারা জানান, আগে এ বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিত। কেন ট্যানারি মালিকরা সময়মতো পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না। বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে আসলে তিনি জানান, আপনারা নিজেরাই বিষয়টি বসে সমাধান করুন। এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী মোঃ দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে। এখন কোরবানির চামড়া কেনা হবে অথচ তারা বকেয়া পরিশোধ করছে না। চামড়ার ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে হলে আগে ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনে আড়তদাররা।
×