ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার রফতানি টার্গেট

প্রকাশিত: ১১:০২, ১০ আগস্ট ২০১৯

 চার লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকার রফতানি টার্গেট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরে এ যাবত কালের রেকর্ড ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পণ্য রফতানি থেকে ৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং সেবা রফতানি খাত থেকে আসবে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম। অন্যদিকে রফতানিকারকরা বলছেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে অসম্ভব নয়। এজন্য পণ্য উৎপাদনে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ ঘোষণা অনুযায়ী সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে বাণিজ্য সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের রফতানির এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন। ওই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) তপন কান্তি ঘোষ, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মোঃ শফিকুল ইসলাম, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা ইয়াসমিন, ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ কামাল হোসেন এবং বিভিন্ন খাতের রফতানিকারকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব জানান, চলতি ২০১৯-১৯২০ অর্থবছরে ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্র ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পণ্য রফতানি ৪৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সেবা রফতানি ৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২.২৫ ভাগ এবং সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩৪.১ ভাগ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট রফতানি ছিল ৪৬.৮৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পণ্য রফতানি ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রকৃত রফতানি হয়েছে ৪০.৫৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.৯৪ ভাগ বেশি ছিল। অপরদিকে গত বছর সেবা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৬.৩৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৬.৭৭ ভাগ বেশি ছিল। মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, তা অর্জন কঠিন কিছু নয়। রফতানিকারকরা আন্তরিক হলে অতিসহজেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত বছর রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তৈরি পোশাক খাতে ১১.৪৯ ভাগ, কৃষিপণ্য রফতানিতে ৩৪.৯২ ভাগ, প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে ২১.৬৫ ভাগ, ফার্মাসিটিক্যালস পণ্য রফতানিতে ২৫.৬০ ভাগ। এছাড়া পণ্য রফতানিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৫৫ ভাগ। রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আপনারা কতটা আত্মবিশ্বাসী এমন প্রশ্নে জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী। কারণ আমরা গত বছর যে পরিমাণ রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে বেশি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া দেশে বিদেশী বিনিয়োগ দিন দিন বাড়ছে। ফলে আমরা আশাবাদী, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব। এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, রফতানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে টেক্সটাইল পণ্য, পাট, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, কৃষিপণ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, প্লাস্টিক এবং সিরামিক। মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে তৈরি পোশাক ৩৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, হোম টেক্সটাইল দশমিক ৮৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্যে দশমিক ৮২৪, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ফার্মাসিউটিক্যালসে দশমিক ১৬৯ বিলিয়ন, কৃষিপণ্যে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন, এনার্জি পণ্যে দশমিক ৩৬৯ বিলিয়ন ডলর ফ্রোজেন ও মাছে দশমিক ৫২০ বিলিয়ন, প্লাস্টিক পণ্যে দশমিক ১৫০ বিলিয়ন এবং সিরামিক পণ্যে দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া সরকারী পণ্য ও সেবা খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৪ দশমিক ২৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪৭.৫৯ শতাংশ, ব্যবসা খাতে ১ দশমিক ২৫০ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২৭.৫৫ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে দশমিক ৭৬০ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪.৬৭ শতাংশ, আইসিটি খাতে দশমিক ৬১৩ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১.৬৫ শতাংশ, ট্রাভেল খাতে দশমিক ৪০০ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.৭৪ শতাংশ, কম্পিউটার খাতে দশমিক ২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২৪.৪৩ শতাংশ। এদিকে সভায় রফতনিকারকরা জানান, রফতানি আয়ে সুখবর নিয়েই অর্থবছর শুরু হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এর মূল কারণ দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক রফতানিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে অন্যান্য খাতেরও আয় ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ফলে রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আগামীতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে রফতানিকারকরা আশা প্রকাশ করেন। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয়ের দেশভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্যহারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছে ৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি হয়েছে এবং প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে কৃষিপণ্য রফতানিতে সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে। কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে ৯০৮ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। বিশেষ করে পাট ও পাটজাতপণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হলেও ওষুধ, প্লাস্টিক পণ্য, বিশেষায়িত টেক্সটাইল, আসবাবপত্র প্রভৃতি খাতে উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
×