ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুগল ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ও ইউটিউব বন্ধের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৯ আগস্ট ২০১৯

গুগল ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ও ইউটিউব বন্ধের সিদ্ধান্ত

ফিরোজ মান্না ॥ গুজব শনাক্তকরণ ও নিরসনে সরকার এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সার্চ ইঞ্জিন গুগল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে বিটিআরসিসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা বলেছেন ফেসবুক, ইউটিউব ও গুগল গুজব শনাক্তকরণ ও নিরসনে কোন রকম সহযোগিতা করে না। কিন্তু তারা গুজব বন্ধ না করে দেশ থেকে বিপুল টাকা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। এই টাকার কোন ট্যাক্স/ভ্যাট প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে না। গত ৩১ জুলাই তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে গুজব শনাক্ত ও সত্য তথ্য প্রচারের মাধ্যমে গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রী গুজব শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও নিরসনে কর্মপরিকল্পনা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর জোর দেন। গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ সেলের কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। এই সেলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিভি, বেতার ও গণযোগাযোগ অধিদফতর থেকে সদস্য কো-অপ করার কথা বলেন। পিআইডির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আগের মতোই গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ সেলের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব দফতর, অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে নিজস্ব ফেসবুক খুলতে হবে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট হালনাগাদ রাখতে তিনি নির্দেশ দেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বৈঠকে বলেন, একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। নিরীহ মানুষকে আক্রমণ করে হত্যা করছে। হত্যা সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই গুজবে অনেকেই কান দিচ্ছে। আধুনিক ও উন্নত দেশেও গুজবের ডালপালা ছড়িয়েছে। ওসব দেশে গুগল, ফেসবুকের অফিস থাকার পরও গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। তবে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ করতে সক্ষম হচ্ছেন। আমাদেরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। গণমাধ্যমে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর জন্যও মন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছেন। সার্ভিস প্রোভাইডারকে (গুগল, ফেসবুক ও ইউটিউব) বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ সকলের সমন্বয়ে ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করার কথাও তিনি বলেন। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে গুজব ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপপ্রচার প্রতিরোধের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি ‘সম্মিলিত নিয়ন্ত্রণ’ ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈঠকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা বলেন, গুজব রোধে তাদের প্রতিটি দফতর কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু ফেইক আইডি ব্যবহার করে সরকার বিরোধী গুজব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এটা যে শুধু দেশের মধ্যেই হচ্ছে তা নয়- দেশের বাইরে থেকেও নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় গুগল ও ফেসবুককে ঢাকায় অফিস খোলার জন্য কয়েক বছর ধরে অনুরোধ জানিয়ে এলেও তারা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে কোন সাড়া দেয়নি। এমনকি তারা সমঝোতা চুক্তি করেছিল যে, যেসব বাজে ‘কন্টেন্ট’ বা মন্তব্য গুগল ও ফেসবুকে ছড়ানো হবে তারা তা ‘ফিল্টার’ করবে। এ কাজটিও তারা করেনি। ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউব চ্যানেল খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোন প্রকার ট্যাক্স/ভ্যাট ছাড়াই। তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিতে হবে। ইউটিউব চ্যানেল একেবারেই বন্ধ করতে হবে। ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচারিত গুজব মানুষ বেশি বিশ্বাস করে। এদিকে এক হিসেবে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিশ্বজুড়ে দুই দফায় ৩ শ’ কোটির বেশি ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে। দ্বিতীয় দফায়ও বাংলাদেশের কয়েক লাখ ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধের আওতায় এসেছে। ফেসবুকের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ্যাকাউন্টগুলো সরিয়ে দেয়া হয়। এই হিসাব প্রথম দফার তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বলে উল্লেখ করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে প্রতিমাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৪০ কোটি মানুষ। তবে এই সংখ্যার মধ্যেও প্রায় ৫ শতাংশেরই ভুয়া এ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই এ্যাকাউন্টও সরিয়ে দেয়া হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এবারের প্রতিবেদনে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিপীড়নমূলক ও ভুয়া এ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভুয়া এ্যাকাউন্ট খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা বন্ধ করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও অনেক ভুয়া এ্যাকাউন্ট পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রায় ১২ কোটি ভুয়া এ্যাকাউন্ট এখনও থাকতে পারে। প্রতিমাসে সচল ২৪০ কোটি এ্যাকাউন্টের ৫ শতাংশ হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দফায় বাংলাদেশের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধু রাজধানী ঢাকায় সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমে আইডি’র সংখ্যা আড়াই কোটির ওপর। অর্থাৎ বসতির থেকে ৭০ লাখ আইডি বেশি! এই হিসাবে কমপক্ষে ৭০ লাখ ভুয়া ও একাধিক আইডি থাকার কথা বলছেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। যার সূত্র ধরেই ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধে শুদ্ধি অভিযান চলমান রেখেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তবে বাংলাদেশে ভুয়া লাইক ও কমেন্ট সবচেয়ে বেশি আসে ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরব থেকে। ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন দেশের আইটি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে সাইবার অপরাধ কমবে। কমবে সামাজিক অস্থিরতাও। পাশাপাশ উগ্র মৌলবাদীদের অপপ্রচার ও নারীদের উত্ত্যক্ত অনেকাংশেই বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেবে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তাদের পরামর্শ, যদি সম্ভব হয় সকল আইডির বিপরীতে মোবাইল নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর নিশ্চিত করা হোক। বিটিআরসি জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অনেক ভুয়া আইডি (এ্যাকাউন্ট) বা পেজ বন্ধ হলেও এখনও লাখ লাখ ভুয়া আইডি রয়ে গেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভুয়া এ্যাকাউন্ট ঠেকানোর কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে ‘স্প্যাম অপারেশন’ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ থেকে আসা ভুয়া লাইক ও মন্তব্য ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফেসবুক দাবি করেছে, তারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত বিশাল একটি গ্রুপকে শনাক্ত করতে পেরেছে। তাদের মাধ্যমে প্রচারিত ভুয়া লাইক সরিয়ে ফেলেছে।
×