ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়াকে জেতালেন সেই স্মিথ

প্রকাশিত: ১২:১০, ৬ আগস্ট ২০১৯

অস্ট্রেলিয়াকে জেতালেন সেই স্মিথ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বলা হয় মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। কিন্তু বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে কখনও কখনও নিজের স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। যেমনটা হলো স্টিভেন স্মিথের বেলায়। গত বছর মার্চে কেপটাউন টেস্টে বহুল আলোচিত সেই বল টেম্পারিংয়ের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন এক বছরের জন্য। হারিয়েছেন নেতৃত্ব। দীর্ঘ ১৬ মাস পর সাদা জার্সিতে ফিরেই অস্ট্রেলিয়াকে জেতালেন সাবেক অধিনায়ক। তাও আবার ঐতিহ্যের এ্যাশেজে একাধিক রেকর্ড চুরমার করে দিয়ে। এজবাস্টন টেস্টে সদ্য ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে অজিরা পেয়েছে ২৫১ রানের বড় জয়। ৩৯৮ রানের লক্ষ্যে সোমবার পঞ্চম ও শেষ দিনে ১৪৬ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে জো রুটদের সংগ্রহ ছিল ৩৭৪। অস্ট্রেলিয়া ২৮৪/১০ ও ৪৮৭/৭ (ডিক্লে.)। ১৪৪ ও ১৪২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখা স্মিথের হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। এই জয়ে পাঁচ টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টিম পেইনের অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ১২২ রানে ৮ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া যে শেষ পর্যন্ত ২৮৪ রানের স্কোর গড়ে, সেখানে ২১৯ বলে ১৬ চার ও ২ ছক্কায় স্মিথ একাই করেন ১৪৪! টেস্টে দ্রুত ২৪ সেঞ্চুরির পথে বিরাট কোহলিকে পেছনে ফেলে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পেছনে জায়গা করে নেন ৩০ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান। ট্রাভিস হেড ৩৫, নয় নম্বরে নামা পিটার সিডলের ৪৪ ও শেষ ব্যাটসম্যান নাথান লেয়নের অপরাজিত ১২ রান সঙ্গী করে দলকে একাই চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে নিয়ে যান। জবাবে ৩৭৪ রানে অলআউট হয় জো রুটের ইংল্যান্ড। ১৩৩ রান করেন ওপেনার ররি বার্নস। এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এছাড়া রুটের ৫৭ এবং বেন স্টোকসের ৫০ রান উল্লেখ্য। দ্বিতীয় ইনিংসে স্মিথের ১৪২Ñএর সঙ্গে ম্যাথু ওয়েডের ১১০ রান এবং উসমান খাজার ৪০ ও জেমস প্যাটিনসনের ঝড়ো ৪৭ রানে ভার করে ৭ উইকেটে ৪৮৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য স্বাগতিক ইংলিশদের সামনে ছুড়ে দেয় ৩৯৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু লেয়ন ও কামিন্সের সাঁড়াশি বোলিং আক্রমণের মুখে দাঁড়াতেই পারেনি জো রুটের দল। ৫২.৩ ওভারে অলআউট হয়েছে ১৪৬ রানে। সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেছেন ক্রিস ওকস। এছাড়া জেসন রয় ও অধিনায়ক দু’জনেই ফেরেন ২৮ রান করে। স্পিনার লেয়ন ৬ ও পেসার কামিন্স নেন ৩ উইকেট। প্রত্যাবর্তনে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক স্মিথকে নিয়ে আলাদা করে না বললেই নয়। প্রায় দেড় বছর পর প্রত্যাবর্তনে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির পথে একাধিক রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন তুখোড় এই উইলোবাজ। প্রথম ইনিংসে টেস্টে দ্রুত ২৪ সেঞ্চুরির পথে কোহলিকে পেছনে ফেরার পর দ্বিতীয় ইনিংসেই সেটিকে ২৫Ñএ রূপ দিয়েছেন তিনি। মাত্র পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে এ্যাশেজের এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন স্মিথ। তার আগে এই কীর্তি ছিল ওয়ারেন বার্ডসলে, আর্থার মরিস, স্টিভ ওয়াহ ও ম্যাথু হেইডেনের। সাবেক বাঁহাতি ওপেনার হেইডেন ২০০২ সালে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১৭ বছর পর সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন স্মিথ। আরও একটি কীর্তি গড়ে ইতিহাসের পাতায় নাম উঠিয়েছেন স্মিথ। সেখানে অবশ্য তিনি কারও পেছনে নন, বরং সবার আগে। সাদা পোশাকে ১১৯ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৬ হাজার ৪৮৫ রান। সমানসংখ্যক ইনিংস খেলে এই সংস্করণে তার চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি আর কেউ। স্মিথের আগে এই রেকর্ড ছিল ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ডের (৬ হাজার ৪৪০ রান) দখলে। ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ২৩৫৩ টেস্ট খেলা হয়েছে। এর মাঝে কোন ব্যাটসম্যানকে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করতে দেখা গেছে মাত্র ৮৫ বার। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, দুই ইনিংসেই ১৪০-উর্ধ ইনিংসে খেলতে পেরেছেন মাত্র চার ব্যাটসম্যান। স্মিথ হলেন এই তালিকার চতুর্থ সংযোজন। সত্যি অবিশ্বাস্য। স্মিথ অন্য ধাতুতে গড়া, টেস্টে সর্বকালের সেরাদের একজনÑ বলছেন গ্রেট স্টিভ ওয়াহ। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ২৮৪/১০ (৮০.৪ ওভার; খাজা ১৩, স্মিথ ১৪৪, হেড ৩৫, সিডল ৪৪, লেয়ন ১২*; ব্রড ৫/৮৬, ওকস ৩/৫৮) ও দ্বিতীয় ইনিংস ৪৮৭/৭ ডিক্লে. (১১২ ওভার; খাজা ৪০, স্মিথ ১৪২, হেড ৫১, ওয়েড ১১০, প্যাটিনসন ৪৭*, কামিন্স ২৬*; মঈন ২/১৩০, স্টোকস ৩/৮৫) ইংল্যন্ড প্রথম ইনিংস ৩৭৪/১০ (১৩৫.৫ ওভার; বার্নস ১৩৩, রুট ৫৭, ডেনলি ১৮, স্টোকস ৫০, ওকস ৩৭*, ব্রড ২৯; কামিন্স ৩/৮৪, প্যাটিনসন ২/৮২, লেয়ন ৩/১১২) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৪৬/১০ (৫২.৩ ওভার; রয় ২৮, রুট ২৮, স্টোকস ৬, ওকস ৩৭; লেয়ন ৬/৪৯, কামিন্স ৪/৩২) ফল ॥ অস্ট্রেলিয়া ২৫১ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)। সিরিজ ॥ পাঁচ টেস্ট অস্ট্রেলিয়া ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
×