ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের ‘বড় ভাই’ সন্ত্রাসী মাসুম গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৬ আগস্ট ২০১৯

চট্টগ্রামের ‘বড় ভাই’ সন্ত্রাসী মাসুম গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অবশেষে চট্টগ্রাম মহানগরী আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার রাতে ঢাকার বনানী থেকে গ্রেফতারের পর পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এর পক্ষে সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে দশ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করা হলে আদালত দুদিন মঞ্জুর করেছেন। পিবিআই সূত্র জানায়, নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় লালখান বাজার আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য, রবিবার রাত সাড়ে দশটার পর বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউর ব্লু ওশান টাওয়ারের সামনে থেকে পিবিআইর একটি টিম মাসুমকে গ্রেফতার করে। সোমবার সকালে পিবিআই মাসুমকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে কঠোর নিরাপত্তায় আদালতে সোপর্দ করে। আদালতের পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার ঘটনায় মাসুমকে দশ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আবু ছালেম মোঃ নোমান দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে মাসুমের পক্ষে আইনজীবীগণ তার অসুস্থতার বিষয় তুলে ধরেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর মাসুমকে দুদিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেয়। মাসুমকে আদালতে নেয়ার সময় তার কয়েক শ’ অনুসারী আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর নগরীর নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতারা এ ঘটনার নেপথ্যে মাসুমের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে। এরপরে ১২ জুলাই মিজানুর রহমান নামে এক আসামি আদালতে জবানবন্দী দিয়ে জানায়, সুদীপ্ত খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা তাদের ‘বড় ভাই’ দিদারুল আলম মাসুম। এর পরবর্তীতে ২২ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের লালখান বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিক কাউন্সিলর এএফ কবির আহমেদ মানিক আওয়ামী লীগ নেতা মাসুমের নামে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ দেয়া দুটি অস্ত্রের (শটগান ও পিস্তল) এর লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনে মাসুমকে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া যুবলীগ নেতা রিপন ও মিজান এবং ছাত্রলীগ নেতা আবদুল মোমিন ও মুজিব হত্যাকা-েও মাসুমের সম্পৃক্ততার তথ্য বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি মাসুমের বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ আনেন কাউন্সিলর মানিক। আবেদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামের ডিসিকে অস্ত্র দুটি বাতিলপূর্বক জব্দের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। গত ৩১ জুলাই জেলা প্রশাসক মাসুমের উক্ত দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল ও জব্দের চিঠি দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার। এরপর গত ৩ আগস্ট দুপুরে দিদারুল আলম মাসুম নিজে খুলশী থানায় গিয়ে অস্ত্র দুটি জমা দেন। এর আগে ২ আগস্ট দুপুরে নগরীর লালখান বাজারে মাসুমের বাসায় অস্ত্র জব্দের জন্য যায় পুলিশ। তারা ওই সময় অস্ত্র না পেয়ে নোটিস দিয়ে আসে। নোটিসে বলা হয়, ‘এই নোটিস প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে যেন মাসুম অস্ত্রগুলো থানায় জমা দেন অন্যথায় অবৈধ অস্ত্র হেফাজতে রাখার দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ প্রসঙ্গত দিদারুল আলম মাসুম মহানগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মাসুম একেক সময় একেক নেতার অনুসারী হিসেবে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বে-আইনী বহু ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকা-ের পর মাসুম ব্যাপকভাবে সমালোচনায় চলে আসে।
×