ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সততার অভাব নেই, অভিজ্ঞতার অভাব ॥ আতিক ;###;এক মাস সময় চান খোকন

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ২ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমরা প্রতি সেকেন্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মনিটরিং করছি। মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করছি, মশা মারার জন্য নতুন ওষুধ আনছি। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে চিকিৎসাধীন থেকেও প্রতিদিন খোঁজখবর নিচ্ছেন ও নির্দেশ দিচ্ছেন। আমাদের উদ্যোগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বয়ে সব কাজ চলছে। আমরা বিশ্বাস করি পরিস্থিতি অল্প দিনের মধ্যে ম্যানেজ হয়ে যাবে। আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক বৈঠকের ফাঁকে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বৈঠকে ঢাকার দুই মেয়র, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ডাঃ মোস্তফা জামাল মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইকবাল আর্সলান, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বুধবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন। তাই নির্ধারিত সময়ে মন্ত্রণালয়ে হাজির হন সাংবাদিকরা। ইতোমধ্যে মন্ত্রীর এই কর্মসূচী বাতিল করা হয়। মন্ত্রী রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে যান ডেঙ্গু পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে। সেখান থেকে দুপুরে মন্ত্রণালয়ে ফিরে এক জরুরী বৈঠকে বসেন। এর মধ্যে সাংবাদিকরা চান তার সঙ্গে কথা বলতে। এক পর্যায়ে কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সব হাসপাতাল থেকে আনা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭ হাজার ১৬৩ জন রোগী। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১২ হাজার ২৬৬ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন চার হাজার ৯০৩ জন। ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় (৩১ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ১ আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৪৭৭ জন। নেত্রকোনা ছাড়া ৬৩ জেলায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। মন্ত্রীর বক্তব্য দেয়া শেষ হলে এক সাংবাদিক যখন তার বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন করতে চান, তখন মন্ত্রী ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে বলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালা অনুযায়ী দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারী ঘোষণা করা যায় কিনা, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে সচিব আসাদুল ইসলাম মন্ত্রীর ফ্লোর কেড়ে নেন। তিনি বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, টেকনিক্যাল বিষয়। এটা মন্ত্রীর জবাব দেয়ার বিষয় না। এটি জটিল বিষয়। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোতে নতুন নতুন ওয়ার্ড খুলছি। যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হতো না সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। প্রত্যেক জেলার সিভিল সার্জনকে ডেঙ্গু চিকিৎসার গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। আমাদের ২৯ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তারা ঘুরে ঘুরে প্রত্যেক জেলায় যাচ্ছেন। ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৬৫ হাজার কিট বিতরণ করা হয়েছে। আরও পাঁচ লাখ কিট আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতির মনিটরিং করা হচ্ছে। আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই। বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে জটিল হচ্ছে। সামাল দিতে আমরা সমন্বিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু যে কোন সিজনাল রোগ নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই ৩৬৫ দিনই এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে হবে। সে কারণে আমি ডেঙ্গু রিসার্চ সেন্টার করার কথা বলছি।’ তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একটি রোগীরও মৃত্যু কাম্য নয়। আমরা চেষ্টা করছি, ভুল তো হতেই পারে। শিখতে গেলে ভুল হবে। তবে এক সময় তো ঠিক হবে। আমার সততার কোন অভাব নেই। তবে অভিজ্ঞতার অভাব আছে। এক মাসের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ॥ রাজধানীতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরও এক মাস সময় চাইলেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেছেন, আর এক মাসের মধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য ‘অভিজ্ঞতার ঘাটতির’ কথা বললেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি জানালেন, এ বিষয়ে কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সেখান থেকে একজন বিশেষজ্ঞকে শীঘ্রই ঢাকায় আনা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে পৃথক পৃথক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে দুই মেয়র এসব কথা বলেন। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে সচেতনতা বাড়ার অংশ হিসেবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র খোকন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সব সংস্থার সম্মিলিত কাজ। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর এবার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় তা যেমন অনেকের মৃত্যু কারণ হয়েছে, তেমনি সারাদেশে ইতোমধ্যে ১৭ হাজারের বেশি মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় এ রোগ ছড়িয়েছে। এ বছর বর্ষার শুরুতে গত জুন মাস থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে। এক মাসের মধ্যে রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এডিস মশা নিধনের কাজ না হওয়ার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকেই দায়ী করা হচ্ছে; তাদের কাজ নিয়ে আদালতও উষ্মা প্রকাশ করেছে। ডেঙ্গু আশঙ্কাজনক বিস্তারের বিষয়টি স্বীকার করে সাঈদ খোকন বলেন, তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাই সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যেও সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেশি। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছি। কলকাতা থেকে আসছেন বিশেষজ্ঞ ॥ উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু বিষয়ে কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে সেখান থেকে একজন বিশেষজ্ঞকে শীঘ্রই ঢাকায় আনা হচ্ছে। মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, কলকাতা সিটি কর্পোরেশনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যিনি কাজ করেছেন, সেই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়েছে। তিনি কথা দিয়েছেন যে, আগামী রবিবার এখানে আসবেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও বর্ষাকালে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল এক সময় নিয়মিত ঘটনা। তবে সারা বছর ধরে নজরদারি ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোয় মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বেশ সাফল্য পেয়েছে কলকাতা সিটি কর্পোরেশন। কলকাতার ডেপুটি মেয়র ও স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষকে উদ্ধৃত করে সম্প্রতি বিবিসি বাংলায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর কলকাতা সিটিতে ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ এবং কলকাতার সেই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকায় তিনটি সরকারি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে ॥ দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকায় তিনটি সরকারী হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে সেপ্টেম্বরে। প্রস্তুত থাকতে হবে। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এখনও সেভাবে রোগী যায় না। বেডগুলো অধিকাংশই খালি থাকে। ডেঙ্গুর বাড়তি চাপ সামাল দিতে এসব হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্যাথলজি পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্ট আমদানি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ডেঙ্গু বিষয়ক এক সেমিনারে সরকারের এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের প্রতিটি জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সামনে ঈদ রয়েছে। এ সময় ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য আগে থেকে কর্মসূচী নিতে হবে। সারাদেশে ‘সুন্দরভাবে সব ম্যানেজ’ করা হচ্ছে। সকলে মিলে কাজ করলে ক্রাইসিস মোকাবেলা করা যায় বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সত্যিই গর্বিত, আমাদের ডাক্তাররা, নার্সরা ও যারা চিকিৎসা দেয় সকলেই যে কঠিন পরিশ্রম করছেন, তার জন্য আমার পক্ষ থেকে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা দিনরাত কাজ করছেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন। এর মধ্যে দুই একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যদি সকলে মিলে কাজ করি, আমরা আশা করি, অল্পদিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বদলে যাবে, আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। পরিস্থিতি মোকাবেলায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক ভাইদেরও সহযোগিতা দরকার। সাংবাদিক ভাইদের দেখতে হবে- এখানে চিকিৎসা হচ্ছে কিনা, দেখতে হবে রোগী ফেরত যাচ্ছে কি না, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছে কিনা, বেড পাচ্ছে কিনা। এবং কী কী পদক্ষেপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়েছে রোগী সামাল দেয়ার জন্য এবং সুন্দরভাবে সারাদেশে ম্যানেজ করা হয়েছে এই বিষয়গুলো আপনারা তুলে ধরবেন, এটি আমরা আপনাদের কাছে আশা করি। এর আগে মন্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
×