ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাশেজ দিয়ে টেস্টের বিশ্বকাপ শুরু আজ

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১ আগস্ট ২০১৯

এ্যাশেজ দিয়ে টেস্টের বিশ্বকাপ শুরু আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ওয়ানডে-টি২০’র মতো টেস্টে এতদিন কোন বিশ্বকাপ ছিল না। নির্দিষ্ট সময়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা দলকেই দেয়া হতো সেরার পুরস্কার। অবশেষে সেই ধারার পরিবর্তন আনল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। এজবাস্টনে আজ থেকে শুরু ঐতিহ্যের এ্যাশেজ দিয়ে যেখানে সাদা পোশাকে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামছে কুলিন দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। শীর্ষ নয় টেস্ট খেলুড়ে দেশের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে পয়েন্টের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জুনে সেরা দুই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নিশিপ তথা টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল। শুধু তাই নয়, পাঁচ টেস্টের এই সিরিজ দিয়ে প্রথমবারের মতো সাদা জার্সিতে ক্রিকেটারদের নাম ও নাম্বার স্থান পাচ্ছে। স্মরণীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের রেশ না কাটতে ঐতিহ্যের এ্যাশেজ দিয়ে এক মৌসুমে দুটি ট্রফি জিততে মুখিয়ে জো রুটের ইংল্যান্ড। অন্যদিকে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ঘোচাতে মরিয়া টিম পেইনের অস্ট্রেলিয়া। এজবাস্টনের বার্মিংহ্যামে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায়। ওয়ানডের নাম্বার ওয়ান হিসেবে ইতিহাসে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ জয় করা ইংলিশদের এ্যাশেজের প্রস্তুতিটাও হয়েছে দারুণ। খর্বশক্তির দল নিয়েও লর্ডসে একমাত্র টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে জো রুটের দল। প্রথম ইনিংসে অল্পতে গুটিয়ে গিয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছে স্বাগতিকরা। বিশ্রাম শেষে এ্যাশেজে যোগ দিয়েছেন বিশ্বকাপ তারকা বেন স্টোকস, ফিরেছেন অভিজ্ঞ পেসার জেমস এ্যান্ডারসন, সাদা পোশাকে অভিষেকের অপেক্ষায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত আলোচিত পেসার জোফরা আর্চার। যিনি ইংলিশদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক। দীর্ঘদিন পর টেস্ট সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া বেন স্টোকস জানিয়েছেন, বিশ্বকাপের পর এক মৌসুমে আরও একটি বড় অর্জনের সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চান না। ব্যাটে-বলে সমানে জ্বলে উঠতে চান তুখোড় এই অলরাউন্ডার। এ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওকস, স্টোকস, আর্চারকে নিয়ে দুর্দান্ত পেস বোলিং আক্রমণ। আছেন তরুণ শ্যাম কুরানও। স্পিনে প্রয়োজনে জ্বলে উঠতে পারেন মঈন আলী। তবে প্রথম টেস্ট খেলতে নামার অপেক্ষায় থাকা জোফরা আর্চারের ফিটনেসের ঘাটতি ইংলিশদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে পারে। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের টপ-অর্ডার সামলাতে গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর পজিশনে নামবেন অধিনায়ক জো রুট। কারণ এ্যালিস্টার কুক অবসরে যাওয়ার পর টেস্টে ইংলিশদের টপ-অর্ডার ব্যাটিং অতটা পরিক্ষীত নয়। চারে থাকছেন অনেকদিন পর ফেরা জো ডেনলি। যিনি স্পিন বোলিংয়ে কার্যকর। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা জনি বেয়ারস্টো, তুখোড় জস বাটলারকে সাপোর্ট দিতে থাকবেন নবীন ররি বার্নস ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষিক্ত জেসন রয়। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়াও মাঠে নামছে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে। নিষেধাজ্ঞার পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেললেও এই সিরিজ দিয়েই টেস্ট দলে ফিরেছেন তুখোড় স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন বেনক্র্যাফট। এ্যাশেজ ধরে রাখতে অসিদের ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা স্মিথ। এ্যাশেজে মাত্র ৫ টেস্ট খেলেই ৬৮৭ রান করেছেন এই সাবেক অধিনায়ক। এ সময়ে তার ব্যাটিং গড় ১৩৭.৪০, সর্বোচ্চ স্কোর ২৩৯। ৬৪ টেস্টে তার মোট রান ৬১৯৯। সেঞ্চুরি ২৩ ও হাফ সেঞ্চুরি ২৪টি। আইপিএল হয়ে বিশ্বকাপ, দুর্দান্ত ছন্দে আছেন ওপেনার ওয়ার্নারও। তারা সঙ্গে পাবেন উসমান খাজা, মার্কাস হ্যারিস, ম্যাথু ওয়েডদের। অবশ্য ইনজুরি চিন্তা আছে অসি শিবিরেও। বিশেষ করে ওয়ার্নার নেটে অনুশীলন করতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। যদিও প্রথম ম্যাচ থেকেই তাকে দলে পাওয়ার আশা করছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া ইনজুরি আক্রান্ত ছিলেন উসমান খাজা ও জেমস প্যাটিনসন। তবে এ দু’জনকেও একাদশে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। এছাড়া ইনজুরি শঙ্কা আছে ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ককে নিয়েও। এ্যাশেজের সর্বশেষ আসরে ঘরের মাটিতে ইংলিশদের ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ফলে এ্যাশেজের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অজিরাই। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের সর্বশেষ এ্যাশেজ জয়ের স্মৃতিতে ধুলো পড়েছে। ২০০১ সালে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বে সেখানে সিরিজ ঘরে তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ৩-২ ব্যবধানে হেরে ফিরেছিল। এই দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাত গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, যে ম্যাচে অসিদের ২২৩ রানে অলআউট করে ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় ইংলিশরা। আর ফাইনালে কিউইদের হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপাও জেতা হয়ে গেছে। এখন এ্যাশেজটাও জিতে গেলে এক বছরে দু’বার শিরোপার মহোৎসব করবে ইংল্যান্ড। আর হারানো গৌরব ফিরে পেতে মরিয়া লড়াই করবে অস্ট্রেলিয়া। ১৮৮২ থেকে এ পর্যন্ত এ্যাশেজে মোট ৩৩০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ১৩৪-এর বিপরীতে ১০৬টিতে জয় ইংলান্ডের। ড্র ৯০। তবে সিরিজের হিসেবে দুই দল প্রায় সমানে সামান। আগের ৭০ এ্যাশেজের ৩৩টিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার, ইংলিশদের ৩২টিতে। ড্র হয়েছে ৫টি সিরিজ। এ্যাশেজ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান প্রয়াত স্যার ডন ব্র্যাডম্যান (৫০২৮) সর্বোচ্চ উইকেট সাবেক লেগস্পিন লিজেন্ড শেন ওয়ার্নের (১৯৫টি)। টেস্ট ক্রিকেটের কথা বললেই যেখানে চোখের সামনে ভেসে ওঠে উত্তেজনাহীন ম্যাড়মেড়ে, প্রাণহীন এক লড়াই সেখানে সাদা পোশাকে এ্যাশেজের গল্পটা ভিন্ন। প্রায় ক্রিকেট ইতিহাসের সমান পুরনো ইংল্যন্ড-অস্ট্রেলিয়া পাঁচ টেস্টের দ্বৈরথ সবচেয়ে সম্মানজনক, এই লড়াই মানে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ঠাসা অন্য এক মর্যাদার লড়াই। প্রথমবারের মতো বিশ্বটেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যুক্ত হওয়ায় সেটি এবার আরও বেশি মর্যাদা পেয়েছে। মূলত টেস্ট ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতেই আইসিসির এমন উদ্যোগ। প্রথমবারের মতো মাঠের ক্রিকেটারদের জার্সিতে স্থান পেতে যাচ্ছে নাম ও নাম্বার।
×